প্রকৃত খ্রিস্টান কারা?
প্রশ্ন:
যখনই আমি কোন খ্রিস্টানকে ইসলামের দাওয়াত দিতে যাই তখনই একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়,,, তারা উলটো আমাকে খ্রিস্টান হওয়ার জন্য বলে!!! যীশু বা ইসা আঃ কে যে অনুসরন করে তাকে যদি খ্রিস্টান বলা হয় তাহলে আমি মনে করি আমি খ্রিস্টানদের থেকেও বড় খ্রিস্টান। কারন :-
- যীশু শোকরের গোশত খেত না [দ্বিতীয় বিবরন ১৪:৮]( আমিও খাইনা)
ইঞ্জিলের সরাসরি উদ্ধৃতি দিয়ে সবচেয়ে ভালো উত্তর হয়:
ঈসা তাঁদের বললেন, “তোমরা কি এতই অবুঝ? তোমরা কি বোঝ না যে, বাইরে থেকে যা মানুষের ভিতরে ঢোকে তা তাকে নাপাক করতে পারে না? এর কারণ হল, তা তো তার অন্তরে ঢোকে না কিন্তু পেটে ঢোকে এবং পরে শরীর থেকে বের হয়ে যায়।” এই কথাতেই ঈসা বুঝিয়ে দিলেন যে, সব খাবারই হালাল। ঈসা আরও বললেন, “মানুষের ভিতর থেকে যা বের হয়ে আসে তা-ই মানুষকে নাপাক করে, কারণ মানুষের ভিতর, অর্থাৎ অন্তর থেকেই খারাপ চিন্তা, সমস্ত রকম জেনা, চুরি, খুন, 22 লোভ, অন্যের ক্ষতি করবার ইচ্ছা, ছলনা, লমপটতা, হিংসা, নিন্দা, অহংকার এবং মূর্খতা বের হয়ে আসে। এই সব খারাপী মানুষের ভিতর থেকেই বের হয়ে আসে এবং মানুষকে নাপাক করে।” (মার্ক ৭:১৮-২৩)
- যীশু এলকোহল বা নেশা জাতীয় কিছু খেতনা যেমন মদ, গাজা ইত্যাদি [ইফিষীয় ৫:১৮]( আমিও খাইনা)
ঈসা যে ইহুদি নিয়ম পালন করতেন, সেই নিয়মে এলকোহল নিষিদ্ধ ছিল না কিন্তু মাতাল হওয়া নিষিদ্ধ ছিল (ইফিষীয় ৫:১৮)।
- যীসু মাটিতে কপাল লাগিয়ে আল্লাহর কাছে সেজদা করত [মথি ২৬:৩৯] (আমিও ঠিক এভাবেই সেজদা বা নামাজ পড়ি)
ভালো, আমিও করি, যদিও ঈসা মসীহ্ এইভাবে মোনাজাত করতে বলেন নি। মোনাজাত সম্বন্ধে ঈসা মসীহ অনেক শিক্ষা দিয়েছিলেন (যেমন মথি ৬:৫-১৫) যেগুলো আপনি সম্ভবত পালন করছেন না, কিন্তু মোনাজাত করার সময়ে আমরা দাঁড়াবো কি সেজদা করবো কি বসবো—এইসব বাহ্যিক বিষয়ে ঈসার কোনো মন্তব্য ছিল না।
- যীশু এক ইলাহর ইবাদাত করতো [মার্ক ১২/২৯]( আমিও এক ইলাহর ইবাদাত করি)
ভালো, আমরাও এক আল্লাহ্র এবাদত করি।
- যীশু বলেছে সত্য খোজার জন্য (আমি সত্য খোজেছি এবং ইসলামকে সত্য হিসেবে পেয়েছিও)
আপনি বলতে চাচ্ছেন ঈসা সত্য খুঁজতে বললেন এবং ইসলামে সত্য পাওয়াই গেল, কিন্তু আসলে ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো। ইসলামে প্রত্যেক মুসলমানকে সত্য সরল পথ খুঁজতে বলা হয়েছে (“ইহদিনাস সিরাতুল মুস্তাকিম”, আমাকে সরল পথ দেখাও), অর্থাৎ সরল পথ ভবিষ্যতে পাওয়ার জিনিস। কিন্তু ঈসা মসীহ বলেছেন:
“আমিই পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না।” (ইউহোন্না ১৪:৬)
ইসলাম বলে সত্য খোঁজার জন্য, এবং ঈসা নিজেই সত্য, পথ ও জীবন (ইউহোন্না ১৪:৬)।
- যীশু নিজের আত্মাকে আল্লাহর কাছে সপে দিয়েছিল৷ [লুক ২৩:৪৬ ] **মুসলিম মানে হল নিজের আত্মাকে আল্লাহর কাছে সপে দেওয়া** (আমিও নিজের আত্মাকে আল্লাহর কাছে সপে দিয়েছি।)
ভালো, কিন্তু ঈসার শিক্ষা অনুযায়ী তিনি নিজেই আল্লাহ্র কাছে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা। এইজন্য আমিও নিজেকে মুসলমান বলি – ঈসার মধ্য দিয়ে আমি সত্যিকার অর্থে আল্লাহ্র কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছি।
- যীশু বলেছে হিজাব পড়ার জন্য আমিও হিজাব পড়ি [১ করিন্থীয় ১১:১৬]
- আমি সব নবিদেরকে অনুসরন করি ইব্রাহিম/আব্রাহাম, ইয়াকুব/যাকোব, ইউসুফ/যোসেফ, দাউদ/ডেবিট, মূসা/মোশি, ইউনুস/যোনা, সুলেমান/সলোমন, যীশু/ঈসা, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) (সবার উপর শান্তি বর্ষিত হউক) যেমনভাবে যীশু সব নবিদেরকে বিশ্বাস করত। “আমরা নবি-রাসূলদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা।” (কুরআন ২/২৮৫) যীশু বলেছেন, যে কেউ তাকে বিশ্বাস করবে সে অনন্তজীবন লাভ করবে। [যোহন ৩/৩৬] (আর আমি যীশুকে বিশ্বাস করি।)
একজনকে “বিশ্বাস” করা মানে তাঁর কথা শোনা এবং পালন করা; তা ছাড়া মুখে “বিশ্বাস” অর্থহীন ও ভণ্ডামি মাত্র। যারা মুখে বলে “আমি ঈসাকে বিশ্বাস করি” কিন্তু তার দেওয়া শিক্ষা শুনতেও চাই না, পালন করতেও চাই না, সেটা ভণ্ড বিশ্বাস। আপনি যদি সত্যি হযরত ইব্রাহিম, ইয়াকুব, ইউসুফ, দাউদ, মূসা, ইউনুস, সোলায়মান এবং ঈসাকে বিশ্বাস করেন তাহলে তাদের কিতাবগুলো পড়তে হবে, শুনতে হবে, এবং জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে।
এখন কথা হল আমি মুসলিম হয়ে যদি যীসুকে অনুসরন করতে পারি, অনন্তজীবন পাওয়ার জন্য সবগুলো শর্ত পালন করতে পারি তাহলে আমার খ্রিস্টান হওয়ার দরকার কি??
ধরুন, একজন মূর্খ লোক ডাক্তার হতে চায়। ডাক্তারদের মতো কাপড় পরে, ডাক্তারদের মতো ব্যবহার করার চেষ্টা করে, কিন্তু মেডিক্যাল টেক্সটবুক পড়া তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। সে কি ডাক্তার হল? আগে ওস্তাদের শিক্ষা শুনতে আগ্রহী হবে, তা ছাড়া ওস্তাদের মত বা ওস্তাদের পুরস্কার কেউ আশা করতে পারবেন না।
“অনন্ত জীবন পাওয়ার সব শর্ত” কি কি আপনি ইঞ্জিলে দেখেছেন? ইঞ্জিলের স্পষ্ট বাণী হলো যে নিজের ধার্মিকতার মাধ্যমে কেউ আল্লাহ্র কাছে যেতে পারবে, এইজন্য আল্লাহ্ হযরত ঈসাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন রহমতের রাস্তা দেখাতে, যেন যে কেউ তাকে সত্যিকারভাবে অনুসরণ করে তারা প্রত্যেকে জীবন পায়। কেউ যদি সরল মনে ইঞ্জিল পড়ে এটা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাবে।
কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:
Leave a Reply