মথি ৯:৯ – মথি কি সত্যই মথি কিতাবের লেখক ছিলেন?
মথি ৯:৯—“মথি কি সত্যই মথি কিতাবের লেখক ছিলেন?”
কিছু কিছু সমালোচক দাবী করেছেন যে, যেহেতু তৃতীয় ব্যক্তির মত মথির নামে উল্লেখ করা আছে, সেহেতু মথি এই লেখার লেখক হতে পারে না:
“ঈসা যখন সেখান থেকে চল যাচ্ছিলেন তখন পথে মথি নামে একজন লোককে খাজনা আদায় করবার ঘরে বসে থাকতে দেখলেন। ঈসা তাঁকে বললেন, “এস, আমার উম্মত হও।” মথি তখনই উঠে তাঁর সংগে গেলেন।” (মথি ৯:৯)
এটা অত্যন্ত দুর্বল একটি যুক্তি। একটা ঐতিহাসিক দলীল লিখতে গিয়ে, নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা অসাধারণ বিষয় নয়। একই দুর্বল যুক্তি অনুযায়ী, কোনআন শরীফ আল্লাহ্র বাণী হতে পারে না কারণ তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে তাঁর নাম লেখা হয়েছে:
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ
হুয়াল্লাহুল-লাথী লা ইলাহা ইল্লাহুয়া
“তিনি আল্লাহ্, তাহাকে ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই”
(সূরা ৫৯:২২)
প্রাচীন ঈসায়ী দলীলের সাক্ষ্য একবাক্যে বলেন যে ঈসার ১২জন সাহাবীর মধ্যে সাহাবী মথি এই “মথির সুখবর” লিখেছিলেন। এর বিপরীতে কোন সাক্ষ্য নেই। ইঞ্জিল শরীফের বিরুদ্ধে এই দুর্বল যুক্তির ভিত্তিতে রয়েছে কেবল অনুমান।
…
মথি ১৫:২৬ – বিদেশিনীকে ‘কুকুর’ বলা?
<h2 class=”objection”>মথি ১৫:২৬—“ঈসা মসীহ্ কেমন করে একজন বিদেশী মহিলাকে ‘কুকুর’ বলতে পারে?”</h2>
তখনকার সমাজে দুই ধরনের কুকুর ছিল—একটা খারাপ (বন্য ও নোংরা), আরেকটি ভাল যারা মেষ দেখাশোনা করতে খুব গুণী ছিল। ইহুদীরা প্রায়ই অ-ইহুদীদের গালি হিসেবে “κύων” (কুওন) বলতেন, যাকে দিয়ে বোঝানো হত রাস্তার নোংরা কুকুর। কিন্তু এখানে মসীহ্ সেই সব্দ ব্যবহার করেননি, তিনি বলেছিলেন “κυνάριον” (কুনারিওন) অর্থাৎ গৃহপালিত বাচ্চা-কুকুর যারা ঘরের মধ্যে থাকত, সম্ভবত মেষ-পালকদের বাসায়। বাংলায় যেমন “অমুক প্রাণীর-বাচ্চা” একটি গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, গ্রীক ভাষায় কিন্তু সেরকম অর্থ নেই, “বাচ্চা-প্রাণী” একটি আদরের ডাক হিসেবে ব্যবহার করা হত। যদি এটা একটি গালি হত, তাহলে মহিলাটি অবশ্য রেগে যেত বা চলে যেত; কিন্তু এই কথা শুনবার পরেও তিনি ঈসার সাহায্য চেয়েছিলেন, এবং শেষ ঈসা মসীহ্ মহিলাটির ঈমান প্রশংসা করেছিলেন।<p>
এখানে ঈসার পুরো গল্প দেখতে হবে—তিনি বাড়ীর বিভিন্ন ভাগ (মালিক, সন্তান, গৃহপালিত পশু, ইত্যাদি) দিয়ে বোঝাচ্ছে যে তার তবলিগ কাজের ক্ষেত্রেও প্রথমত ইহুদীদের কাছে তার প্রচার করার দায়িত্ব ছিল। <p>
কোরআন শরীফও বিভিন্ন খারাপ জাতি বা মানুষকে পশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়—“কুকুর” (৭:১৭৫-১৭৭), “পশু” (৮:২২,২৫), এবং “গাধা” (৬২:৫)।
…
মথি ১৬:১৭ – বেহেশত নাকি আন্দ্রিয়?
<h2 class=”objection”>মথি ১৬:১৭—“শিমোন পিতর কিভাবে জানতে পারলেন যে ঈসা ছিলেন সেই মসীহ্–সরাসরি বেহেশত থেকে, নাকি আন্দ্রিয়র মাধ্যমে (ইউহোন্না ১:৪১)?”</h2>
এটার ব্যাখ্যা বেশ সহজ—আন্দ্রিয় প্রথমে তাকে বলেছিলেন যে ঈসা ছিলেন মসীহ্, কিন্তু পিতর তার কথা তখন বিশ্বাস করেননি। পরে, হযরত ঈসার সঙ্গে সঙ্গে চলার পরে আল্লাহ্ তার অন্তরে প্রকাশ করলেন যে ঈসা সত্যই মসীহ্ ছিলেন। পিতরের আদর্শ খুব সুন্দর, কেমন করে একজন গ্রহণ করতে পারে যে সত্যই, ঈসা হচ্ছেন আল্লাহ্র সেই ওয়াদাকৃত এবং মনোনীত নাজাতদাতা।
…
ইউনুসের চিহ্ন – ঈসা কি মরেছিলেন?
মথি ১২:৪০—(দ্বিতীয় প্রশ্ন) “যেহেতু ইউনুস নবী জীবিত অবস্থায় মাছের পেটে ছিল, সেহেতু ঈসা মসীহ্ও নিশ্চয়ই কবরে জীবিত ছিল, তাই ঈসা ক্রুশে মারা যাননি”
ঈসার কথার নির্দিষ্ট কিছু কিছু অংশ দেখালে এবং অন্যান্য অংশ লুকিয়ে রাখলেই এই যুক্তি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। তাই আসুন পুরো আয়াত দেখি:
ইউনুস যেমন সেই মাছের পেটে তিন দিন ও তিন রাত ছিলেন ইব্নে-আদমও তেমনি তিন দিন ও তিন রাত মাটির নীচে থাকবেন।” (মথি ১২:৪০)
আহমেদ দীদাত চতুর ভাবে এই আয়াত থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাদ দিলেন—তিনি আয়াতটি এইভাবে দিলেন: “ইউনুস যেমন …ছিলেন, ইবনে আদমও তেমনি…থাকবেন।” এইভাবে তিনি এই তুলনার মূল বিষয় কেটে ফেললেন, যা হল ১) সময়ের মেয়াদ – তিনি দিন তিন রাত, এবং ২) সেই সময়ে একটি ঘেরা জায়গায় থাকা । শুধুমাত্র এই দুই সাদৃশ্যর কথা ঈসা মসীহ্ স্পষ্টভাবে বলেছিলেন–এর বাইরে কোনো সাদৃশ্য থাকতে পারে, কিন্তু সেটা শুধু ব্যাখ্যাকারীর অনুমান হবে।
…
ইউনুসের চহ্ন তিন দিন তিন রাত?
মথি ১২:৪০—(প্রথম প্রশ্ন) “ঈসা মসীহ বলেছিলেন যে তিনি কবরে তিন দিন এবং তিন রাত থাকবেন, কিন্তু তিনি করবে শুধু দুই রাত এবং পুরো এক দিন কবরে ছিলেন।”
ইঞ্জিলে বলা হয়নি যে ঈসা শুক্রবারে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন – বলা হয়েছে যে তিনি বিশ্রামবারের আগে “প্রস্তুতি দিবসে” ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। চলতি ধারণা ধরে নিয়েছে যে সেটা শুক্রবার, যেহেতু বিশ্রামবার সাধারণত শনিবারে হত। কিন্তু আসলে দুই ধরনের বিশ্রামবার হিল:
- সাপ্তাহিক সাধারণ বিশ্রামবার (সবসময় শনিবারে)
- “বিশেষ’ বা ‘মহাদিন’ বিশ্রামবারগুলো যেগুলো হিজরত ১২ ও লেবীয় ২৩ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে; সেগুলো মসলমান ঈদের মত সপ্তাহের যেকোন দিনে পড়তে পারে।
ঈসা মসীহ কোন ধরনের বিশ্রামবারের আগে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন?…
মথি ৭:৬ – ‘কুকুর’ এবং ‘শূকর’?
<h2 class=”objection”>মথি ৭:৬—“ইঞ্জিল শরীফ কেমন করে অ-ঈমানদারদের বলতে পারে ‘কুকুর’ এবং ‘শূকর’? কোন নবী মানুষকে এমন গালি দিতেন না।”</h2>
এখানে ঈসা মসীহ্ সরাসরি কাউকে ‘কুকুর’ বা ‘শূকর’ বলেন নি, তিনি শুধু একটি তুলনা দিয়ে বোঝাচ্ছে যে, যারা শুনতে চায় না তাদের সঙ্গে সময় নষ্ট করা উচিত না, বরং করে যারা শুনতে প্রস্তুত তাদের কাছে যাওয়া উচিত (দেখুন ১০:১৪)। কোরআন শরীফও বিভিন্ন খারাপ জাতি বা মানুষকে পশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়—“কুকুর” (৭:১৭৫-১৭৭), “পশু” (৮:২২,২৫), এবং “গাধা” (৬২:৫), এমনকি “বাঁদর” ও “শূকর” (৫:৬০)।
…
মথি ৫:৩৮-৩৯ – অন্য গালে মারতে দেওয়া বোকামি?
<h2 class=”objection”>মথি ৫:৩৮-৩৯—“অন্য গালে মারতে দেওয়া বোকামি”</h2>
কিছু কিছু লোক দাবি করেছিলেন যে মসীহ্র এই অহিংসার শিক্ষা অন্যায় এবং খারাপ। এটা অদ্ভুত একটি দাবি, যেহেতু সারা বিশ্বে এতো ব্যাপক যুদ্ধ, সন্ত্রাসীর, প্রতিশোধ এবং পালটা-আক্রমন দেখা যায়। অর্থাৎ বর্তমান সমাধানগুলোতে কোনো সমাধান কার্যকর হচ্ছে না, একটি বিকল্প সমাধান খোঁজ করা উচিত।<p>
ইঞ্জিল শরীফে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্ সত্যিই শেষ বিচারে অন্যায়ের শাস্তি দেবেন। কিন্তু গোনাহ্গার মানুষ হিসাবে আল্লাহ্র হাতে শাস্তি রাখা উচিত। সমাজে ন্যায্যতা বজায় রাখার জন্য আল্লাহ্তা’আলা প্রশাসনের ব্যবস্থা করেছেন, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমাদের প্রতিশোধ নেওয়া উচিত না। আমরা মন্দতাকে রুখে দাঁড়াবো অহিংসা, সততা এবং সাহস দিয়ে, বোমা এবং সন্ত্রাসী দিয়ে না। প্রতিশোধের বিপক্ষে মসীহ্র এই শান্তির শিক্ষা হাজার হাজার মানুষকে আকর্ষণ করেছে। <p>
ঈসা মসীহ্ বলেছিলেন, “আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি; দুনিয়া যেভাবে দেয় আমি সেইভাবে দিই না।” (ইউহোন্না ১৪:২৭)। রাজনৈতিক নেতারা অনেক সময় রক্তাক্ত সংগ্রামের পরে শান্তির সমাজ প্রতিজ্ঞা করে থাকেন, কিন্তু রক্তপাত ছাড়া কোনকিছু প্রতিষ্ঠিত হয় না। ঈসা মসীহ্ অন্যরকম একটি শান্তি দিতে পারেন; এখনকার, স্থায়ী শান্তি। প্রতিশোধ এবং হিংস্রতা দিয়ে বিজয় আসতে পারে, কিন্তু স্থায়ী শান্তি সেভাবে আসে না।
…
মথি ১১:২ – ইয়াহিয়া ঈসাকে চিনতেন?
<h2 class=”objection”>মথি ১১:২—“তরিকাবন্দিদাতা ইয়াহিয়া এই ঘটনার আগে থেকেই ঈসাকে ‘মসীহ্’ হিসাবে চিনতেন (যেমন ইউহোন্না ১:৩২-৩৩), কিন্তু এই আয়াত অনুযায়ী তিনি তখনও মসীহ্কে চিনতে পারেননি।”</h2>
যখন ইয়াহিয়া নবী ঈসা মসীহ্কে তরিকাবন্দী দিয়েছিলেন, তিনি স্পষ্টভাবে দেখেছিলেন যে ঈসা সত্যই মসীহ্ ছিলেন। কিন্তু ইহুদী সমাজে সবাই চিন্তা করতেন যে মসীহ্ একজন রাজনৈতিক নেতা হবেন এবং সৈন্য নিয়ে রোমীয়দের তাড়িয়ে দিয়ে ইহুদীদের রাজনৈতিক মুক্তি লাভ করবেন। হযরত ইয়াহিয়া এরকম রাজনৈতিক উদ্ধার প্রত্যাশা করছিলেন, তাই এটা না দেখে তিনি একটু সন্দেহ করছিলেন।
…
মথি ১০:৩৪ – হিংস্রতার শিক্ষা?
<h2 class=”objection”>মথি ১০:৩৪—“এখানে ইঞ্জিল হিংস্রতার শিক্ষা দিচ্ছেন, কারণ ঈসা বললেন, ‘আমি শান্তি দিতে আসি নি বরং তলোয়ার’”</h2>
পরিবারের শুধু একজন সদস্য আল্লাহ্র পথে গেলে অবশ্যই অনেক দূঃখজনক অমিল সৃষ্ট হয় এবং অনান্য সদস্য সেই ব্যক্তির উপর অনেক চাপ এবং জুলুম দেয়। “তলোয়ার” দিয়ে ঈসা মসীহ্ রূপকভাবে এই অমিল বোঝাচ্ছে। লূক ১২:৫১ থেকে বোঝা যায় যে এই কথার অর্থ শুধু অমিল। একই ভাবে হিব্রু ৪:১২ আয়াতে ‘তলোয়ার’ (<span class=”greek”>μάχαιρα</span>) শব্দ রূপকভাবে শুধু ‘অমিল’ বোঝাচ্ছে।<p>
ঈসা মসীহ্ যে তলোয়ারের হিংস্রতা উৎসাহিত করছেন তার কোন প্রশ্নই আসে না—ঈসা কোনদিন তলোয়ার ব্যবহার করেন নি এবং তার সাহাবীদের হিংস্রতা থেকে দূরে থাকার হুকুম দিয়েছিলেন:<blockquote>“ছোরা যারা ধরে তারা ছোরার আঘাতেই মরে।“ (মথি ২৬:৫২)</blockquote>
<p>এমনকি, ঈসায়ী জামাতের প্রথম দুই শতাব্দী ধরে তারা সব রকম হিংস্রতার এতো বিপক্ষে ছিলেন যে রোমীয় সমাজ তাদেরকে এইজন্য তুচ্ছ করতেন। তারা অত্যাচারিত হলেও অনেক বৃদ্ধিলাভ করলেন এবং কখনও প্রতিশোধ নেননি বা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন করেননি। ঈসা নিজেই বললেন,<blockquote>ঈসা বললেন, “আমার রাজ্য এই দুনিয়ার নয়। যদি আমার রাজ্য এই দুনিয়ার হত তবে আমি যাতে ইহুদী নেতাদের হাতে না পড়ি সেইজন্য আমার লোকেরা যুদ্ধ করত; কিন্তু আমার রাজ্য তো এখানকার নয়।” (ইউহোন্না ১৮:৩৬)</blockquote><p>
“তোমরা শুনেছ, বলা হয়েছে, ‘চোখের বদলে চোখ এবং দাঁতের বদলে দাঁত।’ কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, তোমাদের সংগে যে কেউ খারাপ ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে কিছুই কোরো না; বরং যে কেউ তোমার ডান গালে চড় মারে তাকে অন্য গালেও চড় মারতে দিয়ো।” (মথি ৫:৩৯,৪০)</p>
হিংস্রতার বিষয় সম্পর্কে আরও পড়ুন : “<a href=”https://www.unchangingword.com/হিংস্রতা/”>here</a>.…
মথি ১০:৯ – লাঠি ছিল?
মথি ১০:৯—“ঈসা মসীহ্ তার সাহাবীদের লাঠি আনতে অনুমতি দিয়েছিলেন (মার্ক ৬:৮) বা নিষেধ করেছিলেন (মথি ১০:৯)?”
ঈসা মসীহ্ তাদের বলেছিলেন যেন তারা নতুন লাঠি ‘জোগাড় করতে’ (κτήσησθε) সময় নষ্ট করে না, কিন্তু হাতের কাছে একটি থাকলে তা নিয়ে নেওয়ার অনুমতি ছিল। অর্থাৎ, যাত্রার জন্য বাড়তি জিনিসপত্র খোঁজে পাওয়ার দরকার ছিল না—তারা যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় যাওয়া উচিত, কোনো বাড়তি জিনিসপত্র কিনবেন না কারণ মাবুদ জোগাড় করবেন।
…