ইঞ্জিল কীভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল?

“কোরআন অনুযায়ী, ইঞ্জিল ঈসা মসীহ্‌র কাছে “নাজিল” হয়েছিল, কিন্তু বর্তমান ইঞ্জিল সাহাবীরাই লিখেছিলেন”

“নাজিল” কথাটির মানে এই না যে জিনিসটা বেহেশত থেকে পড়ে গিয়েছিল বা একজন নবীর হাতে দেওয়া হয়েছিল, বরং “নাজিল” দিয়ে আল্লাহ্‌র একটি উপহার বোঝায়। যেমন কোরআন শরীফে বলা হয় যে আল্লাহ্‌ মানব জাতির কাছে লৌহ “নাজিল” করেছিলেন:

“আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী” (সূরা হাদীদ ৫৭:২৫)

তার মানে কি এই, যে একজন নবীর হাতের মাধ্যমে আমরা লৌহ পেয়েছিলাম?…

সূরা মায়িদা ৫:৪৬ আয়াত- পথের নির্দেশ ও আলো ‘ছিল’ নাকি ‘আছে’?

“কোরআনের সূরা মায়িদা ৫:৪৬ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘উহাতে (ইঞ্জিলে) ছিল পথের নির্দেশ ও আলো’ (অতীত কাল)।”

এই দাবীটি আরবী পাঠের ভ্রান্ত-বোধভিত্তিক। আরবী বাক্যাংশটি হচ্ছে,“الإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ; আল ইনজিলা ফিইহি হুদায় ওয়া নূর, আক্ষরিকভাবে অনুবাদ হচ্ছে, “…এতে পথনির্দেশ ও আলো…” এখানে কোন ক্রিয়াপদ নেই, কিন্তু এতে বর্তমান কাল প্রকাশ করছে। আরবী ভাষায় বর্তমানকালের সংযোজক বাক্যে ‘হওয়া’ (‘কানা’) ক্রিয়াপদের দরকার হয় না, অনেকটা বাংলার মতন। প্রসঙ্গ অনুসারেই কাল বুঝে নিতে হয়। বিখ্যাত বাঙালি লেখক ডা.…

“ঈসা মসীহ্‌কে ‘প্রভু’ বলা যাবে না”

“ঈসা মসীহ্‌কে ‘প্রভু’ বলা যাবে না”

যেহেতু কোরআন শরীফে বলা হয় যে আল্লাহ্‌কে ছাড়া কোন প্রভু বা অধিপতি (রব্ব) নেই, সেহেতু অনেকে ইঞ্জিল পড়ে আপত্তি করে যে ঈসাকে ‘প্রভু’ বলা যাবে না। আসলে এর পিছনে কোরআন শরীফ নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে, কারণ কোরআন শরীফেও ফেরাউনকে “রব্ব” বা প্রভু বলা হয়:

“এবং বহু সৈন্য-শিবিরের অধিপতি ( ‘রাব্ব’) ফির’আওনের প্রতি?”

শুধু ঈসা নয়, হযরত ইয়াহিয়াকেও ‘আল্লাহ্‌র কালাম’ বলা হয়

কোরআন অনুযায়ী কেবল হযরত ঈসা “আল্লাহ্‌র কালাম” নয়, বরং সূরা আলে-‘ইমরান ৩৯ আয়াতে হযরত ইয়াহিয়াকেও ‘কালাম’ বলা হয়”

জাকির নায়েক দাবী করেছেন যে আলে-‘ইমরান ৩৯ আয়াতে তরিকাবন্দিদাতা ইয়াহিয়াকেও “আল্লাহ্‌র কালাম” বলা হয়েছে, অর্থাৎ কেবলমাত্র হযরত ঈসা “আল্লাহ্‌র কালাম” নয়। কিন্তু এই আয়াত পড়লে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় সেখানে হযরত ইয়াহিয়া অন্য একজন প্রেরিত “কালাম”-এর কথা সমর্থন করছেন—

“আল্লাহ্‌ তোমাকে (অর্থাৎ ইয়াহিয়ার পিতা জাকারিয়াকে) ইহাহ্‌ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্‌র বাণীর সমর্থক” (সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৩৯)

কোরআনের তাফসীরকারী প্রায় একবাক্যে বলেন যে এই আয়াতে উক্ত ‘কালাম’ ঈসাকে বোঝাচ্ছে। যেমন হযরত ইবনে ‘আব্বাস (রা) এর তাফসীর—

তিনি যখন মসজিদে মোনাজাত করছিলেন তখন ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে এসে তাকে একজন সন্তানের সংবাদ দেন যার নাম ইয়াহিয়া, যিনি আল্লাহ্‌র কাছে একটি কালাম সমর্থন করবেন; মরিয়ম-তনয় ঈসা যিনি আল্লাহ্‌র কালাম হবেন, বিনা পিতায় সৃষ্ট…

এবং বিখ্যাত তাফসীরে জালালাইন শরীফে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—

…“আল্লাহ্‌ তোমাকে ইহাহ্‌ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্‌র বাণীর সমর্থক”—অর্থাৎ ঈসা; তিনি রূহুল্লাহ, তাকে ‘কালাম’ও বলা হয়…”

প্রসিদ্ধ মুফাস্সির শায়েখ তাবারসি এবং আল্লামা জামাখশারি এর সঙ্গে একমত, এবং অবশ্য ইঞ্জিল শরীফে হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর বিস্তারিত বর্ণনা থেকে দেখা যায় তার প্রধান কাজ ছিল হযরত ঈসার পথ প্রস্তুত করা—

তিনি (ইয়াহিয়া) নূরের বিষয়ে সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন যেন সকলে তাঁর সাক্ষ্য শুনে ঈমান আনতে পারে। তিনি নিজে সেই নূর ছিলেন না কিন্তু সেই নূরের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। (ইউহোন্না ১:৭, এবং দেখুন ইউহোন্না ১:১৪)

ইঞ্জিলে বলা হয় যে হযরত ঈসা মসীহ্‌র আত্মীয় হযরত ইয়াহিয়া ঈসার পথ প্রস্তুত করলেন এবং লোকদের তাকে অনুসরণ করতে বলেছেন।

  1. জাকির নায়েক, দা’ওয়া ট্রেনিং প্রোগ্রাম, www.irf.net/irf/dtp/dawah_tech/t18/t18a/pg1.htm

বাইবেল কি শুধু অধিকাংশই ঠিক আছে?

বাইবেলের অধিকাংশই ঠিক আছে, শুধু দু’একটি আয়াত পরিবর্তন করা হয়েছে যার ফলে পুরো বাণী বিকৃত হয়ে গেল”

যেহেতু কিতাবুল মোকাদ্দসের নির্ভরযোগ্যতার জন্য এত বেশী শক্ত প্রমাণ রয়েছে, কিছু কিছু সমালোচক বলেন যে বাইবেলের অধিকাংশই নির্ভরযোগ্য, কিন্তু দু’একটি আয়াত যোগ করা বা বাদ দেওয়াতে এর বাণী পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গেল। যেমন, তারা স্বীকার করেন যে হযরত ঈসার মৃত্যু ও পুনরুত্থান এবং শুধু ঈমানের মাধ্যমে নাজাত পাওয়ার শিক্ষাগুলো অনেক পরে ইঞ্জিলে যোগ করা হয়েছে। তাদের কাছে যে আপত্তিকর “যোগ করানো” শিক্ষা (যার আরেক নাম ‘সুখবর’ অর্থাৎ ‘ইঞ্জিল’) এইভাবে সংক্ষিপ্ত করা যায়—

শুধু শরিয়ত পালন করার মাধ্যমে মানুষ নাজাত অর্জন করতে পারে না, কারণ তারা শরিয়ত পুঙ্খানপুঙ্খভাবে পালন করতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ্‌ তার রহমতের মাধ্যমে তিনি একটি নাজাত, কাফফারা এবং পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করলেন হযরত ঈসা মসীহ্‌র মাধ্যমে, যিনি একমাত্র নিষ্পাপ ব্যক্তি, “মনোনীত নাজাতদাতা”। তিনি ক্রুশে আমাদের পাপের শাস্তি বহন করলেন এবং পুনরুত্থিত হলেন। এই নাজাতের দান কোন সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায় না বরং তওবা করে ঈসা মসীহ্‌র উম্মত হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়।

এই সমালোচকদের কথা অনুযায়ী, উপরোক্ত শিক্ষা পরে যোগ করা হল কারণ এদের পূর্ববিশ্বাসের সঙ্গে সেটা মেলে না। এই সংশয়ীরা একথাও বলেছেন যে, ইঞ্জিলে যেখানেই ঈসাকে ‘প্রভু’ বা ‘ইবনুল্লাহ্‌’ বলা হয় সেটাও মূল ইঞ্জিলে ছিল না।

ইঞ্জিল শরীফ যারা পড়েছেন তাদের কাছে এই দাবী শুধু হাস্যকর, কারণ উপরোক্ত ‘সুসংবাদ’ শিক্ষাটি ইঞ্জিল শরীফের প্রত্যেকটি ২৭ খণ্ডে বার বার পাওয়া যায়। পুরো ইঞ্জিল শরীফের শিক্ষার কমপক্ষে ৫০% এর মধ্যে এই ‘সুখবর’ শিক্ষার স্বাদ পাওয়া যায়। এই শিক্ষা ছাড়া ইঞ্জিল শরীফ অর্থহীন হত।

এই একই সুসংবাদের বাণী হযরত ঈসা মসীহ্‌ নিজেই বার বার বলেছেন— মথি ২৬:২৮; ইউহোন্না ৩:১৫, মথি ২০:২৮; মার্ক ১০:৪৫; ইউহোন্না ১০:৯; ইউহোন্না ১৪:৬; ইউহোন্না ৬:৪৪,৪৭,৪৮,৫১; ইউহোন্না ১০:১১; ইউহোন্না ১০:২৮; ইউহোন্না ১১:২৫; ইউহোন্না ১৭:১-২; ইউহোন্না ১৭:৩; লূক ২৪:২৬-২৭; লূক ৪:৪৩; ইউহোন্না ৬:২৯; ইউহোন্না ৬:৩৩,৩৫; ইউহোন্না ৪:১৪; ইউহোন্না ৫:২১; মথি ১৮:২১-৩৫। এই একই সুসংবাদ প্রচার করেছেন হযরত ঈসার উম্মত পিতর (প্রেরিত ২:৩৮; প্রেরিত ৪:১২; ১ পিতর ১:১৮-১৯; ২ পিতর ১:১৬), উম্মত ইয়াকুব (ইয়াকুব ২:১০), এবং উম্মত ইউহোন্না (১ ইউহোন্না ২:১,২)। তা ছাড়াও, ইঞ্জিল শরীফের প্রত্যেকটি খণ্ডে ঈসা মসীহ্‌র সেই ‘আপত্তিকর’ উপাধি “প্রভু” এবং “ইবনুল্লাহ্‌” বার বার ব্যবহার হয়।

অর্থাৎ, ইঞ্জিল শরীফ থেকে এই সুসংবাদ শিক্ষাটি বাদ দেওয়া সম্ভব নয়, সেটা হচ্ছে ইঞ্জিল শরীফের মর্ম।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

কোরআনে বাইবেলের কথা বলা আছে কি?

“কোরআনে বাইবেলের কথা বলা হয় নি,
বরং শুধু তৌরাত, জবুর এবং ইঞ্জিলের কথা বলা হয়েছে”

আসলে, ইংরেজী ‘বাইবেল’ শব্দ গ্রীক βιβλία ‘বিব্‌লিয়া’’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ “গ্রন্থগুলো” বা ল্যাটিন ভাষায় “গ্রন্থটি”। আরবী ভাষায় তা হয় الْكِتَاب (“আল-কিতাব”) অথবা الكتاب المقدس (“আল-কিতাবুল মোকাদ্দাস”), এবং হযরত মুহাম্মদের (সাঃ)-এর শত বছর আগে ও পরে বাইবেল সবসময়ই এই নামে পরিচিত। তাই যখন কোরআন শরীফে এই একই শব্দ الْكِتَاب ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ সম্বন্ধে ব্যবহার করা হয়েছে তখন কোন প্রশ্নই নাই যে সেখানে একই গ্রন্থ বোঝানো হচ্ছে—

ইয়াহূদীরা বলে, ‘খৃষ্টানদের কোন ভিত্তি নাই’ এবং খৃষ্টানরা বলে, ‘ইয়াহূদীদের কোন ভিত্তি নাই; অথচ তাহারা আল-কিতাব (الْكِتَاب) পাঠ করে। (সূরা বাকারা ২:১১৩)

“তোমরা (ইহুদীগণ) আল-কিতাব (الْكِتَاب) শিক্ষা দান কর” (সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৭৯)

আরবী ভাষায় বাইবেলকে আরও স্পষ্টভাবে বোঝানো সম্ভব না। কোরআন শরীফে যদি অন্য কোন কিছু বোঝানো হত তাহলে অবশ্য তা পরিষ্কারভাবে বলা হত।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

আগেকার কিতাব সম্পর্কে কোরআনের শীর্ষ তাফসীরবিদদের ধারণা

জাকির নায়েকের মত সমালোচকদের মূল সমস্যা হল এরা কোরআনের শীর্ষ ব্যাখ্যাকারীদের বিপরীতে কথা বলছেন, যারা ইহুদী-খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থের নির্ভরযোগ্যতা স্বীকার করতেন। প্রসিদ্ধ মুসলমান অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ্‌ তার The Charge of Distortion of Jewish and Christian Scriptures (“ইহুদী ও খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থ বিকৃত করার অভিযোগ”) প্রবন্ধে এটা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

“যেহেতু ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের অনুমোদিত ধর্মগ্রন্থগুলো বর্তমান পর্যন্ত অনেকটা আগের মত রয়েছে, তাই একথ বলা কঠিন যে তৌরাত ও ইঞ্জিল সম্পর্কে কোরআনের সাক্ষ্য শুধুমাত্র মূসা ও ঈসার আমলের আগেকার “খাঁটি” তৌরাত ও ইঞ্জিলের কথা বলছেন। যদি এই কিতাবগুলোর পাঠ মোটামুটি আগেকার সপ্তম শতাব্দীর পাঠের মত থেকে থাকে, তাহলে ইঞ্জিল ও তৌরাতের প্রতি কোরআন শরীফে যে পরিমাণ শ্রদ্ধা দেওয়া হয় তা এ যুগেও দেওয়া উচিত। কোরআনের অনেক তাফসীরকারীগণ, আল-তাবারী থেকে রাজি থেকে ইব্ন-তায়মিয়্য়া এমনকি কুতব্‌ এই মতামত পোষণ করেন। ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের কিতাবের প্রতি আধুনিক যুগে অনেক মুসলমানের যে পুরোপুরি গ্রাহ্য না করার মনোভাব আছে তা কোরআন ও তফসিরের প্রধান ব্যক্তিত্বের মধ্যে কোন সমর্থন পায় না”

হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)

হযরত ‘আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আব্বাস বলেছেন,

“তাহ্‌রিফ (বিকৃত করা) শব্দটি দিয়ে বোঝানো হচ্ছে একটি জিনিস তার মূল প্রকৃতি থেকে সরিয়ে দেওয়া; এবং যেহেতু আল্লাহ্‌র কাছে নাজিলকৃত একটিমাত্র শব্দও বিকৃত করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, সেহেতু ইহুদী-খ্রীষ্টানরা কেবলমাত্র আল্লাহ্‌র বাণীর অর্থের ভুলব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছিল।

অন্য একটি গ্রন্থে, হযরত ইবনে আব্বাসের একই কথা পাওয়া যায়—

“এরা কালাম বিকৃত করেন” কথার মানে হচ্ছে “এরা তার অর্থ পরিবর্তন বা বিকৃত করেন”। কারণ আল্লাহ্‌র কোন কিতাবের একটিও শব্দ পরিবর্তন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়– এর অর্থ হচ্ছে যে এরা কালামের ভুল ব্যাখ্যা করেন।

হযরত ইবনে কাসীর ‘ইবনে আব্বাসের এই একই কথা উল্লেখ করেন-

“আল্লাহ্‌র কিতাবের বিষয়ে, সেগুলো এখনও সংরক্ষিত এবং পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।”

এই হল হযরত ‘আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আব্বাসের তাফসীর, যিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আপন চাচাত ভাই এবং সাহাবীদের একজন। একজন সাহাবী হিসেবে তার মতামত অন্যান্য তাফসীরকারীদের চেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য।

ইমাম আত-তাবারী (রাঃ) (৮৩৮-৯২৩ খ্রীষ্টাব্দ)

বিখ্যাত তাফসীরবিদ আত-তাবারী খুব পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেছেন যে তার মতে, ইহুদী-খ্রীষ্টানদের কাছে আল্লাহ্‌র প্রেরিত মূল কিতাবগুলো তখনও ছিল—

“সর্বপ্রথমটা ছিল তৌরাত, যেটা আহলে-কিতাবদের হাতে রয়েছে…তারপর ইঞ্জিল শরীফ, যেটা খ্রীষ্টানদের হাতে রয়েছে ।”

তাবারীর মূল অভিযোগ ছিল যে এরা শুধু সেগুলোর প্রকৃত অর্থ বোঝেন নি। যদিও তিনি বাগদাদে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন, তিনি কিন্তু কখনও তাদের কিতাব পরিবর্তন করার অভিযোগ করেন নি।

ইমাম ফকরুদ্দিন আল-রাজী (রাঃ) (মৃঃ ১২১০ খ্রীষ্টাব্দ)

বিখ্যাত তাফসীরবিদ আল-রাজীও সমর্থন করেন যে ইহুদীদের প্রতি ‘তাহ্‌রিফ’ অভিযোগ দিয়ে বোঝানো হচ্ছে কীভাবে ইহুদীরা নবীজীর কথাগুলো বিকৃত করতেন।

সূরা বাকারা ৭৫ আয়াতের তাফসীরে আল-রাজী ‘তাহরিফ’ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন যে “শব্দের পরিবর্তন” (التَّحْرِيف اللَفْظي আল-তাহ্‌রিফ আল-লাফজী ) হচ্ছে—

“অসম্ভব যদি আল্লাহ্‌র বাণী কোরআনের মত করে বহু লোকের সামনে প্রকাশিত হয়ে থাকে”

ইঞ্জিল শরীফ সম্পর্কে আমরা এই জানি যে, সেটা শুরু থেকেই বহু লোকের কাছে প্রকাশিত হল। ইমাম আল-রাজী আবার বলেন—

“এমন কোন কথা নেই যে এরা কোন শব্দ (তিল্কা-আল-লাফ্‌জা) কিতাব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন”

ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রাঃ)

ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রাঃ) বলেন—

আবার, এই লোকদের মধ্যে (মুসলমানদের মধ্যে) এমন আছে যারা দাবী করেন যে তৌরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে অনেককিছু বাতিল, আল্লাহ্‌র কালাম নয়। কেউ কেউ বলেন বাতিল অংশই কম। আবার বলা হয় যে “কেউ লিখিত কিতাবের কোন কিছু পরিবর্তন করেন নি, বরং এরা (ইহুদী-খ্রীষ্টানগণ) এর অর্থ বিকৃত করেছেন ভুলব্যাখ্যার মাধ্যমে। এই উভয় মতামতের কিছু কিছু মুসলমানরা গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে তৃতীয়টি হচ্ছে সঠিক মতামত; সেগুলো হল পৃথিবীতে সেগুলোর সহীহ্‌ কপি রয়েছে, এবং সেগুলো হযরত মুহাম্মদ(সা) এর আমল পর্যন্ত রয়ে গেল, এবং বিকৃত কপিও অনেক আছে। যারা দাবী করেন যে এই কপির মধ্যে কোন কিছুই বিকৃত হয়নি তারা অসম্ভব কথা দাবী করছেন। যারা বলেন যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরে সব কপিগুলো বিকৃত করা হয়েছে, তারা প্রকাশ্য মিথ্যা বলছেন। কোরআন তো তাদেরকে বিচার করতে বলে তৌরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে আল্লাহ্‌ যা নাজিল করেছেন সেটা দিয়ে। আল্লাহ্‌ তাদের বলেন যে উভয় কিতাবের মধ্যে আছে হিকমত। এরা যে সকল কপি বিকৃত করেছেন তার পক্ষে কোরআনের কোন বক্তব্য নেই।”

ইমাম ইবনে তায়মিয়ার মতামত নিয়ে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ্‌ মন্তব্য করেন—

এই দুই ধর্মীয় ধারার ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে নবীজী (সাঃ) এর প্রচার কাল পর্যন্ত (খ্রীষ্টাব্দ সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে) ইহুদী খ্রীষ্টান উভয় সম্প্রদায়ের কিতাবের জন্য বহু পাণ্ডুলিপির প্রমাণ রয়েছে। সেই সময়ে এদের কাছে যে কিতাব ছিল, তা বর্তমানেও একই। ইঞ্জিলের ক্ষেত্রেও তাই। যেহেতু কোরআন শরীফ এই দুই কিতাবের কথা বলে, সেই কথা বর্তমান যুগেও সমানভাবে কার্যকর। তায়মিয়ার মতামত নিয়ে এটাই প্রধান সমস্যা।১০

তা ছাড়া অন্যান্য অনেক শীর্ষ মুসলমান চিন্তাবিদ, যেমন ইমাম আল-গাজালী (রাঃ), ইমাম শাহ্‌ ওয়ালি উল্লাহ্‌ (রাঃ) এই নিয়ে একমত ছিলেন। শুধু ইবনে কাজেম (মৃঃ ১০৬৪খ্রীঃ) এর যুগ থেকেই অনেক মুসলমানরা এই অভিযোগ শুরু করলেন যে ইহুদী-খ্রীষ্টানরা তাদের কিতাব পুরোপুরি বিকৃত করে দিয়েছেন, অর্থাৎ লিখিত পরিবর্তন। এই ছিল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনেক পরে, এবং ‘ইবনে আব্বাস (রা)-এর মত সাহাবীদের মতামতের বিপরীতে।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

কোরআনে কি আগেকার কিতাব হেফাজত করে?

“আগের কিতাবসমূহ বিকৃত হওয়ার কারণে কোরআন পাঠানো হয়েছে।”

value=”http://www.youtube.com/v/8Zv-Z3Cc5wQ&hl=id_ID&fs=1?version=3&autohide=1&rel=0″ > type=”application/x-shockwave-flash”wmode=”transparent”allowscriptaccess=”always”width=”100%”>

জাকির নায়েকের মত মৌলবাদীরা কোরআন-বহির্ভূত ধারণা প্রচার করেছে যে, আগের আমলের কিতাবসমূহের পরিবর্তনের কারণেই কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কোরআনে কিন্তু এরকম ধারণা কোথাও পাওয়া যায় না। বরং এর বিপরীতেই কোরআন আসলে বলে যে, আগের কিতাবসমূহ সমর্থন করার ( সাদ্দাক্বা ) জন্যই কোরআন দেওয়া হয়েছে:

“ইহার পূর্বে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ। আর এই কিতাব ইহার সমর্থক, আরবি ভাষায় যেন ইহা জালিমদিগকে সতর্ক করে এবং যাহারা সৎকর্ম করে তাহাদিগকে সুসংবাদ দেয়।” (আল আহকাফ ৫:১২)

কোরআন “আরবী” ভাষায় নাজিল হয়েছিল যাতে আরবের লোকেরা সেই সময় পর্যন্ত তাদের কাছে যেসব খোদায়ী বাণী অজ্ঞাত ছিল, সেসব সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করতে পারে। অভিধান অনুসারে ‘সমর্থন করা” অর্থ ‘অনুমোদন দেওয়া’ বা ‘কার্যকারিতা সম্বন্ধে নতুনভাবে নিশ্চয়তা দেওয়া।’

যারা বলেন কোরআন আগের কিতাবসমূহ প্রতিস্থাপন করে তারা নিচের আয়াতটি ব্যবহার করে:

“আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি ইহার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে।” (৫:৪৮)

তাদের মতানুসারে, কোরআন হচ্ছে এক সংরক্ষক ( মুহাইয়িম ) এই অর্থে যে কিতাবসমূহকে কোন বিকৃতিসাধন থেকে তার মূল ও সঠিক বিষয় সংরক্ষণ করে। কিন্তু বিখ্যাত মুসলিম অনুবাদক ইউসুফ আলির মতানুসারে, এই আয়াতে মুহাইয়িম (সংরক্ষক) অর্থ হচ্ছে “যিনি রক্ষা করেন, দেখাশোনা করেন, সমর্থক হিসাবে সাক্ষ্য দান করেন, আগলে রাখেন, এবং উপস্থাপন করেন বা তুলে ধরেন।”

তৌরাতের প্রতি ঈসার মনোভাবের ক্ষেত্রে সেই একই ‘সমর্থন করা’ ( সাদ্দাক্বা ) শব্দটি কোরআনও ব্যবহার করা হয় (৫:৪৬)। ঈসা এমন শিক্ষা দেননি যে, তৌরাতকে অস্বীকার করতে হবে অথবা এর শিক্ষা বিকৃত হয়ে গেছে। বরং তিনি শিক্ষা দেন যে, এটা অপরিবর্তনীয়, পবিত্র বাক্য যা পাঠ করা এবং বোঝা উচিত:

“এই কথা মনে কোরো না, আমি তৌরাত কিতাব আর নবীদের কিতাব বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আসমান ও জমীন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না তৌরাত কিতাবের সমস্ত কথা সফল হয় ততদিন সেই তৌরাতের এক বিন্দু কি এক মাত্রা মুছে যাবে না।” (মথি ৫:১৭-১৮)

কোরআনও আগের কিতাবসমূহ সম্বন্ধে এই একই কথা বলে।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

“হযরত পৌল ঈসা মসীহ্‌র বাণী তার নিজ উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করেছে”

“হযরত পৌল ঈসা মসীহ্‌র বাণী তার নিজ উদ্দেশ্যে পরিবর্তন করেছে”

হযরত পৌল এবং অন্যান্য সাহাবীদের মধ্যে যে কোন বড় ধরণের বিবাদ বা দ্বন্দ্ব ছিল তার জন্য ইঞ্জিলে কোন প্রমাণও নেই, ইঞ্জিলের বাইরে কোন স্বীকৃত ঐতিহাসিক দলিলেও কোন প্রমাণ নেই। সমালোচকেরা প্রেরিত ১৫:৩৯ আয়াতে হযরত পৌল ও বার্নাবাসের মধ্যে তর্কটা অনেক বাড়িয়ে দেয়। এই আয়াত আমরা একটু দৃষ্টিপাত করি:

কিছু দিন পরে পৌল বার্নাবাসকে বললেন, “যে সব জায়গায় আমরা মাবুদের কালাম তবলিগ করেছি, চল, এখনই সেই সব জায়গায় ফিরে গিয়ে ঈমানদার ভাইদের সংগে দেখা করি এবং তারা কেমন ভাবে চলছে তা দেখি।” তখন বার্নাবাস ইউহোন্নাকে সংগে নিতে চাইলেন। এই ইউহোন্নাকে মার্ক বলেও ডাকা হত। পৌল কিন্তু তাঁকে সংগে নেওয়া ভাল মনে করলেন না, কারণ মার্ক পাম্ফুলিয়াতে তাঁদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের সংগে আর কাজ করেন নি। তখন পৌল ও বার্নাবাসের মধ্যে এমন মতের অমিল হল যে, তাঁরা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। বার্নাবাস মার্ককে নিয়ে জাহাজে করে সাইপ্রাস দ্বীপে গেলেন, আর পৌল সীলকে বেছে নিলেন। তখন এণ্টিয়কের ভাইয়েরা পৌল ও সীলকে মাবুদের রহমতের হাতে তুলে দিলে পর তাঁরা রওনা হলেন। পৌল সিরিয়া ও কিলিকিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়ে সমস্ত জামাতগুলোর ঈমান বাড়িয়ে তাদের আরও শক্তিশালী করে তুললেন। (প্রেরিত ১৫:৩৬-৪১)

এই ঘটনার আগে হযরত পৌল এবং বার্নাবাস দুই ভাই হিসেবে দীর্ঘদিনের একটি তবলিগ করেছিল একসাথে। উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায় যে বিবাদের বিষয় মার্ককে সফরে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন নিয়ে। এটা কোন রকম ধর্মবিশ্বাসের বিবাদ ছিল না।

তার পরিবর্তে মজবুত প্রমাণ আছে যে এরা বিশ্বাসের ব্যাপারে একমত ছিল। যখন ৪৯ খ্রীষ্টাব্দে হযরত পৌল জেরুজালেমের ঈসায়ী নেতাদে্র সামনে তার বিশ্বাস এবং কাজের কথা বলেছিলেন, তখন এই সাহাবীরা খুশি হয়ে তাকে সম্পুর্ণভাবে গ্রহণ করলেন। হযরত পৌলের চিঠিগুলোর মধ্যে যে বিশ্বাস এবং সুসংবাদের কথা আছে, সেটা সাহাবী পিতর, সাহাবী ইয়াকুব এবং সাহাবী ইউহোন্নার চিঠিগুলোর মধ্যেও আছে। তারা ঈসায়ী মূল ‘সুসংবাদ’ বিশ্বাস নিয়ে একমত, যেটা এইভাবে সংক্ষিপ্ত করা যায়:

শুধু শরিয়ত পালন করার মাধ্যমে মানুষ নাজাত অর্জন করতে পারে না, কারণ তারা শরিয়ত পুঙ্খানপুঙ্খভাবে পালন করতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ্‌র রহমতে তিনি একটি নাজাত, কাফফারা এবং পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করলেন হযরত ঈসা মসীহ্‌র মাধ্যমে, যিনি একমাত্র নিষ্পাপ ব্যক্তি, “মনোনীত নাজাতদাতা”। তিনি ক্রুশে আমাদের পাপের শাস্তি বহন করলেন এবং পুনরুত্থিত হলেন। এই নাজাতের দান কোন সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায় না বরং তওবা করে ঈসা মসীহ্‌র উম্মত হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়।

উপরোক্ত ‘সুসংবাদ’ শিক্ষাটি ইঞ্জিল শরীফের প্রত্যেকটি ২৭ খণ্ডে বার বার পাওয়া যায়। পুরো এই একই সুসংবাদের বাণী হযরত ঈসা মসীহ্ নিজেই বার বার বলেছেন— মথি ২৬:২৮; ইউহোন্না ৩:১৫, মথি ২০:২৮; মার্ক ১০:৪৫; ইউহোন্না ১০:৯; ইউহোন্না ১৪:৬; ইউহোন্না ৬:৪৪,৪৭,৪৮,৫১; ইউহোন্না ১০:১১; ইউহোন্না ১০:২৮; ইউহোন্না ১১:২৫; ইউহোন্না ১৭:১-২; ইউহোন্না ১৭:৩; লূক ২৪:২৬-২৭; লূক ৪:৪৩; ইউহোন্না ৬:২৯; ইউহোন্না ৬:৩৩,৩৫; ইউহোন্না ৪:১৪; ইউহোন্না ৫:২১; মথি ১৮:২১-৩৫। এই একই সুসংবাদ প্রচার করেছেন হযরত ঈসার উম্মত পিতর (প্রেরিত ২:৩৮; প্রেরিত ৪:১২; ১ পিতর ১:১৮-১৯; ২ পিতর ১:১৬), উম্মত ইয়াকুব (ইয়াকুব ২:১০), এবং উম্মত ইউহোন্না (১ ইউহোন্না ২:১,২)।

হযরত পৌলের জীবনী পড়লে বোঝা যায় যে তার বাণী থেকে তিনি কোন রকম দুনিয়াবী লাভ পাননি, অর্থাৎ মসীহ্‌ প্রকৃত শিক্ষা বিকৃত করার জন্য তার কোন কারণ ছিল না। হযরত পৌল যেভাবে প্রচার করতেন সেটা তার স্বার্থের বিপরীত ছিল। মসীহ্‌র উপর ঈমান আনার আগে তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল ছিল, তিনি বিখ্যাত আলেম গমলীয়েলের শিষ্য ছিলেন এবং রোমীয় নাগরিক ছিলনে (ইহুদীদের মধ্যে খুব কম লোকের এই সুবিধা ছিল)। মসীহ্‌র বাণী গ্রহণ না করলে তার নিশ্চয় মান-সম্মান, ধন এবং খ্যাতি অনেক থাকত। তিনি যদি ইহুদীদের কথামত বলতেন যে মসীহ্‌ কোন নাজাতদাতা নয় বরং শুধু একজন শরিয়ত-সমর্থক তাহলে সবাই তাকে পছন্দ করতেন এবং তার মান-সম্মান বেড়ে যেত। হযরত পৌল নিজেই লিখেছিলেন, “আমি যদি এখনও মানুষকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করি তবে তো আমি মসীহের গোলাম নই।” (গালাতীয় ১:১০)।

মসীহ্‌র উপর ঈমান আনার আগে, হযরত পৌল ঈসায়ী জামাতের কঠিন শত্রু ছিলেন, তিনি ঈসায়ীদের ধরে তাদেরকে জেলখানায় ফেলে দিতেন (প্রেরিত ৯)। এইভাবে দামেষ্ক যাওয়ার পথে তিনি হঠাৎ মসীহ্‌র দর্শন পেয়েছিলেন। দুনিয়াবী স্বার্থের দৃষ্টি থেকে, তখন থেকেই তার জীবন পতন হল। ঈমান আনার পর থেকে তার জীবন কষ্টে ভরা ছিল। তাকে অত্যাচার ও মারধর করা হত, চাবুক দিয়ে আঘাত করত, পাথর ছুড়ে মারত, এবং তার জীবনে বিপদ, হুমকি, খিদে ও পিপাসার অভাব ছিল না (২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৯)। তিনি অনেক বছর জেল কেটেছেন এবং সফরে জাহাজের দুর্ঘটনা ও ডাকাতের বিপদ সহ্য করেছিলেন। এই সময়ে তিনি কষ্ট করে চামড়ার কাজ করে আয় করতেন যেন কারো কাছে টাকা চাইতে না হয়। শেষে রোম শহরে তিনি শহীদ হলেন। এমন জীবনের এমন ব্যক্তি যে নিজ স্বার্থে মসীহ্‌র বাণী বিকৃত করেছেন, তা বলা বোকামি এবং সম্পূর্ণ অবিশ্বাসযোগ্য।

কেউ অপরের বোঝা বহন করিবে না

“ঈসা মসীহ্‌ আমাদের পাপ বহন করতে পারেন না, কারণ কোরআনে বলা হয়েছে “কোন বহনকারী অপরের বোঝা বহন করিবে না” (সূরা ৫৩:৩৮)”

হযরত ঈসা মসীহ্‌ যে আমাদের পাপের শাস্তি বহন করেছেন, তা আসলে কোরআন শরীফের এই আয়াতে অস্বীকার করা হচ্ছে না। আয়াতটি এরকম—

তাহাকে কি অবগত করা হয় নাই যাহা আছে মূসার কিতাবে, এবং ইব্‌রাহীমের কিতাবে, যে পালন করিয়াছিল তাহার দায়িত্ব?