‘ঈসা’ নামের অর্থ
#খ্রীষ্টান_ভাইদের_প্রতি_যীশু_সম্পর্কে_কিছু_প্রশ্ন।
প্রশ্ন ১ – আপনারা বলেন ‘ঈসা’ শব্দের অর্থ নাজাত দাতা, মুক্তিদাতা, পরিত্রাণ দাতা। বলুনতো এই অর্থটি কোন বিধানে আছে? ঈসা শব্দটি আরবি। আরবি কোন অভিধানে ঈসা শব্দের অর্থ নাজার দাতা নেই এ বিষয়ে কী বলবেন?
“কোন বিধানে আছে?” আপনি কি ‘অভিধান’ বোঝাতে চাচ্ছিলেন?…
যীশু কি মনুষ্যপুত্র নাকি ঈশ্বরপুত্র?
অভিযোগ:
যীশু কি মনুষ্যপুত্র নাকি ইশ্বরপুত্র???
যদি বলেন ইশ্বরেরপুত্র তাহলে বাইবেলে তাকে মনুষ্যপুত্র বলা হলো কেন? যেমন…
“মনে রেখো, মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেননি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।”” (মার্ক ১০:৪৫)
যীশু খ্রীষ্টের এই নাম প্রথম বলা হয়েছে দানিয়েল ৭:১৩ পদে। এই নামটি যীশু খ্রীষ্ট নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। যদিও অন্যেরা এই নাম খুব কমই ব্যবহার করত। এই নাম যীশু খ্রীষ্টের মানব হওয়া প্রকাশ করে। আরো কিছু সূত্র: দানিয়েল ৭:১৩, মথি ১৬:২৭-২৮, ২৬:৬৪, লূক ২১:২৭।
উত্তর:
ইঞ্জিল শরিফে ঈসাকে উভয়ই বার বার বলা হয়েছে, “মনুষ্যপুত্র” ও “ঈশ্বরপুত্র” – দুটোই ঠিক। “আল্লাহ্র পুত্র” রুপক বর্ণনা দিয়ে বোঝানো হচ্ছে যে পিতা ও পুত্রের যে বিশেষ ভালোবাসা ও বাধ্যতার সম্পর্ক থাকে সেটা আল্লাহ ও ঈসার মধ্যেও ছিল (সেটা শারীরিক কিছু বোঝায় না)। “মনুষ্যপুত্র” উপাধির দুটি অর্থ আছে:
- ১.
…
হযরত ঈসা মসীহের পরিচয়
ঈসা মসীহ্ কে?
আহল-ই-কিতাব-বিশ্বাসীদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হল মরিয়ম-তনয় ঈসা মসীহ্ (আঃ)-কে নিয়ে এবং তার সঠিক পরিচয়। যেমন ধরেন, জাকির নায়েক এবং আহ্মেদ দীদাতের মত কিছু মুসলমান সহজে ঈসাকে কুমারী-মেয়ে জন্মিত ‘মসীহ্’ হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু খ্রীষ্টানদের ভুলপ্রমাণ করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে তারা প্রচুর চেষ্টা করে, কারণ তারা মনে করা যে খ্রীষ্টানরা ‘তিন আল্লাহ্ বিশ্বাস করে’ এবং যে ঈসা মসীহ্ ক্রুশে মারা যাননি। আবার ইহুদীগণ সহজে গ্রহণ করে যে মসীহ্ ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তিনি যে কুমারী-মেয়ে জন্মিত ‘মাসীহ্’ ছিলেন তা এরা গ্রহণ করতে পারে না। এমনকি খ্রীষ্টানদের মধ্যেও ঈসার সঠিক পরিচয় নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছিল।
এতো মতের অমিলের স্পষ্ট কারণ হল যে হযরত ঈসা অনন্য, তিনি পৃথিবীর অন্যান্য মানুষদের মত না। তার জন্ম, শিক্ষা, কাজ, অলৌকিক ঘটনা, এবং মৃত্যু—সবই অনন্য। তাই এতো বিস্ময়কর মানুষের পরিচয় নিয়ে বিতর্ক করা স্বাভাবিক।
এই আলোচনায় আমি দার্শনিকদের অর্থহীন তর্কযুদ্ধের ফাঁদ এড়াতে চাই। যেমন ‘ত্রিত্ববাদ’-এর মত শব্দ নিয়ে প্রচণ্ড তর্কাতর্কি হয়েছে, যদিও সেই শব্দ ইঞ্জিলে নাই। কিতাবে অনুপস্থিত শব্দ নিয়ে তর্ক না করে আমি বরং ঈসার বিষয়ে বিভিন্ন কিতাবে যা যা বলা হয় তার উপর লক্ষ্য করব। বিভিন্ন কিতাব থেকে, বিশেষ করে ইঞ্জিল থেকে, আমি ঈসা মসীহের পরিচয় এবং কাজ সম্বন্ধে একটি স্পষ্ট ছবি উপস্থাপন করতে চাই।
আল্লাহ্ এক
এই তদন্তের আরম্ভ বা ভিত্তি হল সকল আহলে-কিতাবীদের সেই স্বীকৃত মূল সত্য, আল্লাহ্র একতা। সকল কিতাবী লোক একমত যে মাত্র একজন আল্লাহ্ আছেন, যিনি সৃষ্টিকর্তা, চিরন্তন, অপরিবর্তনীয়, সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ। এই হল তৌরাত, জবুর, নবীদের কিতাব, ইঞ্জিল এবং কোরআনের স্পষ্ট সাক্ষ্য এবং আমাদের ঈমানের ভিত্তি।
উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন ইহুদী আলেম হযরত ঈসাকে জিজ্ঞাসা করল কোন্ হুকুম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তিনি বলেছিলেন:
জবাবে ঈসা বললেন, “সবচেয়ে দরকারী হুকুম হল, ‘বনি-ইসরাইলরা, শোন, আমাদের মাবুদ আল্লাহ্ এক। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত দিল, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্কে মহব্বত করবে।’ (মার্ক ১২:২৯,৩০)
তাঁর স্পষ্ট সাক্ষ্য হল যে আল্লাহ্ এক। অথবা ইঞ্জিলের অন্য জায়গায় এই ভাবে লেখা আছে—
আল্লাহ্ মাত্র একজনই আছেন এবং আল্লাহ্ ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থও মাত্র একজন আছেন। সেই মধ্যস্থ হলেন মানুষ মসীহ্ ঈসা। (১ তীমথিয় ২:৫)
একজন অদ্বিতীয় নবী
তাহলে প্রশ্ন উঠে, যদি সকল কিতাবীগণ তাই বিশ্বাস করে, তাহলে হযরত ঈসা মসীহ্কে নিয়ে এতো বিতর্ক কেন হয়?…
কোর’আন শরীফে হযরত ঈসা মসীহের নাম ও উপাধী
কোর’আন শরীফ আরবীতে লেখা একটি বিশাল বড় বই, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের জন্য বিদেশী ভাষায়। সেই কারণে খুব অল্প কিছু মানুষ এর বিভিন্ন বিষয়গুলো সিঠিকভাবে বুঝে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আল্লাহ্ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নবী ও রাসূলদের পৃথিবীতে পাঠানো সম্পর্কে। ঐ সব নবী ও রাসূলদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন বিবি মারইয়ামের পুত্র ঈসা নবী যাঁর কথা কোর’আনে অনেক কিছু বলা হয়েছে।
পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ হযরত ঈসার নাম জানে এবং তাঁর জীবনী ও কর্ম সম্পর্ক অল্প কিছু কথাও শুনেছে। যাই হোক, কোরআনের বর্ণনা আনুযায়ী তাঁর অনেক ও বিভিন্ন পথের কথা খুব অল্প কিছু মানুষ সঠিকভাবে জানে। সেইজন্য এই পাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছোট এই পাঠটির উদ্দেশ্য হল পাঠককে কোর’আন আনুসারে ঈসা নবী সম্পর্কে সঠিক ও পরিষ্কারভাবে ধারণা দেওয়া। নিচের উক্তিগুলো সরাসরি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ হতে প্রকাশিত আল-কুরআনুল করীম থেকে নেওয়া হয়েছে। একজন পাঠক এই বইটি পড়ে নিজে আরো সঠিক ও ভালভাবে জানতে সক্ষম হবে, কিভাবে কোরআন ঈসা নবীকে নবুয়তের মর্যাদা দিয়েছে।
’ঈসা (নাজাতদাতা)
فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللّهِ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللّهِ آمَنَّا بِاللّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
“যখন ‘ঈসা তাহাদের অবিশ্বাস উপলব্ধি করিল তখন সে বলিল, ‘আল্লাহ্র পথে কাহারা আমার সাহায্যকারী?’
…
সকল নবী কি নিষ্পাপ?
সকল নবী কি নিষ্পাপ?
এখন পাপ সম্পর্কে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাপ করা দরকার। আল্লাহ্ যে নবী পয়গম্বরদের পাঠিয়েছিলেন তাঁদের নিয়ে একটি ভূল ধারণা প্রায় সব মানুষই পোষন করে আর তা হল যে সমস্ত নবীরাই নিষ্পাপ। এই ধারণা আল্লাহ্র কালাম ও সাধারণ যুক্তির বিপরীত। এটি সাধারণ যুক্তির বিপরীত কারণ নবীরাও আমাদের মতো আদমের বংশভূত এবং তাঁদেরও ওই একই গুনাহ্-স্বভাব ও আত্মকেন্দ্রিক জীবন ছিল। এটা আল্লাহ্র কালামের বিপরীত কারণ আল্লাহ্র কিতাবে নবীদের গুনাহ্ সম্পর্কে পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আল্লাহ্র কালাম নবীদের ভুল-ত্রু টি ও আল্লাহ্কে অমান্য করার ঘটনার সাথে তাঁদের গভীর ঈমান ও বাধ্যতার কথাও সুস্পষ্টভাবে বলে। নবীদের জীবন সম্পর্কে সুন্দর ব্যাপারটা হল, যদিও তাঁরা পাপ করেছিল তবুও তাঁরা তওবা করে আল্লাহ্র ক্ষমা পেয়েছিলেন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, কোরআনে নবীরা যে সব পাপ করেছিলেন সে সব বিষয়ে পরিষ্কার বিশ্লেষণ না থাকলেও নবীরা আল্লাহ্র কাছে যে অনুশোচনা করেছেন তার উল্লেখ আছে। নবীদের অবাধ্যতার একটা পরিষ্কার চিত্র পেতে হলে এবং তাদেরকে কেন তওবা করতে বলা হয়েছে তা জানতে হলে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে খোঁজ করতে হবে। এই বিষয়ে কোরআনের কিছু অংশ নিচে দেওয়া হল। এই আয়াতগুলি পরিষ্কারভাবে বুঝায় যে নবীরাও পাপী ছিলেন আর আল্লাহ্র ক্ষমা তাঁদের দরকার ছিল।
হযরত মূসা (আঃ)
“এবং আশা করি, তিনি [আল্লাহ্] কিয়ামত দিবসে আমার আপরাধ মার্জনা করিয়া দিবেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা শু’আরা’ ২৬:৮২)
হযরত ইবরাহীম (আঃ)
“সে [মূসা নবী] নগরীতে প্রবেশ করিল, যখন ইহার অধিবাসীরা ছিলো অসতর্ক। সেথায় সে দুইটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখিল, একজন তাহার নিজ দলের এবং আপর জন তাহার শত্রুদলের। মূসার দলের লোকটি উহার শত্রুর বিরুদ্ধে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করিল, তখন মূসা উহাকে ঘুসি মারিল; এইভাবে সে তাহাকে হত্যা করিয়া বসিল। মূসা বলিল, ইহা শয়তানের কাণ্ড। সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান-কারী।” (কোরআন শরীফ, সূরা কাসাস ২৮:১৫-১৬)
হযরত ইউনুস (আঃ)
“ইউনুসও ছিলো রাসূলদের একজন। স্মরণ কর, যখন সে পলায়ন করিয়া বোঝাই নৌযানে পৌঁছিল, অতঃপর সে লটারীতে যোগদান করিল এবং পরাভুত হইল। পরে এক বৃহদাকার মৎস্য তাহাকে গিলিয়া ফেলিল, তখন সে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগিল। সে যদি আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করিত, তা হইলে তাহাকে উত্থান দিবস পর্যন- থাকিতে হইত উহার উদরে। অতঃপর ইউনুসকে আমি নিক্ষেপ করিলাম এক তৃণহীন প্রান-রে এবং সে ছিলো রুগ্ন। পরে আমি তাহার উপর এক লাউ গাছ উদ্গত করিলাম, তাহাকে আমি এক লক্ষ বা ততোধিক লোকের প্রতি প্রেরণ করিয়াছিলাম। এবং তাহারা ঈমান আনিয়াছিল; ফলে আমি তাহাদিগকে কিছু কালের জীবনোপভোগ করিতে দিলাম।” (কোরআন শরীফ, সূরা সাফ্ফাত ৩৭:১৩৯-১৪৮)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
“এতএব তুমি [হে মুহাম্মাদ] ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য, তুমি তোমার ক্রটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সকাল ও সন্ধ্যায়।” (কোরআন শরীফ, সূরা মুমিন ৪০:৫৫
“সুতরাং জানিয়া রাখ [হে মুহাম্মাদ], আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু’মিন নর-নারীদের ক্রটির জন্য আল্লাহ্ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস’ান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৯)
“নিশ্চয়ই [হে মুহাম্মাদ] আমি তোমাদিগকে দিয়াছি সুস্পষ্ট বিজয়, যেন আল্লাহ্ তোমার অতীত ও ভবিষ্যত ক্রটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তাঁহার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন, এবং আল্লাহ্ তোমাকে বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা ফাত্হ ৪৮:১-৩)
গুনাহ্ ও তার খারাপ ফালাফল কী, তা ভালভাবে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ মনে করে যে বর্তমান সময়ে প্রচলিত কোন জনপ্রিয় প্রণালী বা তন্ত্র যেমন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ ব্যবহারের দ্বারাই দারিদ্র, অসাম্য, দুর্দশার মতো সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব। দুর্ভাগ্যবসত, আল্লাহ্র কালাম আমাদের এই রকম এতো সহজ সমাধানের কথা বলে না। সব থেকে ভাল আবিস্কৃত তন্ত্রও মানুষের দ্বারাই চালিত যে নিজেই স্বার্থপর ও কুলষিত এবং তার পরিচালনায় তার তন্ত্র সমাজকে অবিচার ও কষ্টের মধ্যেই নিয়ে যায়।
মানব সমাজের সমস্যাটা বাহিরের এই পন্থাগুলো নিয়ে নয় বরং তা মানুষের হৃদয়ের ভিতরের পন্থাকে নিয়েই। একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ প্রতিদিন গোসল করে ও নিত্য নতুন কাপড় পরিবর্তন করে পরিষ্কার থাকতে পারে ঠিকই কিন্তু সেভাবে যে রোগ তাকে ভিতর থেকে নিঃশেষ করে ফেলছে তাকে কিছুতেই সে দূর করতে পারবে না । মানব সমাজের এই বিশ্বজনীন যে নিপীড়ন তা কোন ভুল প্রথার জন্য নয়, তা বরং মানুষের পাপের জন্যই যা এই প্রথাগুলোকে পরিচালনা করে। অন্য দিকে, যদি একটা খারাপ প্রথা ভাল মানুষদের দ্বারা চালিত হয় তাহলে কিছু সময়ের মধ্যে তারা সেই প্রথাকে নির্ভুল করে তা ব্যবহার করে পৃথিবিকে কয়েক বছরের মধ্যেই বেহেশতে রূপান্তর করা সম্ভব হত।
প্রধান যে জিনিসটি যা আমাদের দরকার তা হল আমাদের হৃদয়ের পরিষ্কারকরণ । মন পরিবর্তন না হলে শুধু বাহিরকে পরিবর্তন করলেই হবে না। আদম-হাওয়ার পাপের মাধ্যমে যা বেঠিক হল তাকে আবার সঠিক করতে হবে। আমাদের স্বার্থপর কামনা বাসনা ও ইচ্ছা থেকে ফিরে আল্লাহ্র দিকে ফিরতে হবে যাতে আমরা তাঁর রাজ্যের ভাগি হতে পারি।
এই ব্যাপারে আমরা প্রত্যেকেই দুইটি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি। প্রথমত, আমরা কি নিজেরা স্বীকার করতে রাজি আছি যে, আমি পাপি আর আল্লাহ্র রহমত ও ক্ষমা না পেলে কেয়ামতের দিনে শুধু ভর্তসনা ও শাস্তি আশা করতে পারি?…
ইউহোন্না ১০:৮ – নবীরা কি চোর ও ডাকাত?”
ইউহোন্না ১০:৮—“ঈসা কীভাবে বলতে পারেন যে আগেকার সমস্ত নবী-পয়গম্বর ছিলেন চোর ও ডাকাত?”
ইঞ্জিলের উপর এই আক্রমন খুব দুর্বল। ইঞ্জিলের একটুমাত্র পড়লে বোঝা যায় যে ঈসা মসীহ্ আগেকার নবীদের খুব সম্মান করতেন (যেমন মথি ৫:১৭; মথি ১২:৩; লূক ১৩:২৮; ইউহোন্না জ৮:৩৯,৪০)। এইজন্য বোঝা যায় যে ঈসা মসীহ্ এখানে প্রকৃত নবীদের “চোর ও ডাকাত” বলেননি, বরং ভণ্ড নবী ও ভণ্ড ‘মসীহ’দের “চোর ও ডাকাত” বলেছিলেন (যারা নবীদের যুগের পরে এসে নিজেকে নবী বা মসীহ্ বলে মানুষকে ঠকিয়েছে)। তেমনভাবেও নবী ইহিষ্কেল তাদের সমালোচনা করেছিলেন, যারা নিজেকে ইহুদীদের নেতা বা নবী বলে কিন্তু শুধু নিজেকে সেবা করে। ঈসা মসীহ্ তাদের ‘চোর’ বলেছিলেন কারণ তারা অনেকসময় কৌশলে মানুষকে আকৃষ্ট করতেন এবং ‘ডাকাত’ বলতেন কারণ ভণ্ড নেতারা হিংস্রতা ব্যবহার করতেন।
…
ঈসার শিক্ষা অনুযায়ী কি শরিয়ত দ্বারা নাজাত পাওয়া যায়?
ঈসা মসীহের অন্যান্য ভূমিকা এড়ানোর জন্য দুএকটি আয়াতের ভিত্তিতে (মথি ৫:১৭, মথি ১৯:১৬-৩০) বলা হয় যে তিনি শুধু শরিয়ত সমর্থন করতে আসলেন। এটাই তাদের অভ্যাস— দুএকটি আয়াত ভুল-ব্যাখ্যা করা এবং বাকি ৯৯ আয়াত অবহেলা করা। তাই আসুন, আমরা তৌরাত থেকে শুরু করে ভালভাবে দেখব কিতাবুল মোকাদ্দসে নাজাত এবং শরিয়তের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করি:
তৌরাত শরীফে নাজাত
হযরত ঈসা যখন বার বার বললেন যে নাজাত শরিয়তের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না বরং রহমতের মাধ্যমে আসে, এটা কোন নতুন শিক্ষা ছিল না বরং তৌরাত এবং নবীদের কিতাবের শিক্ষার সঙ্গে মিলে যায়। তৌরাত শরীফ থেকে বলা হয়েছে যে নাজাত আসবে একজন ‘মসীহ্’ এর মাধ্যমে। পয়দায়েশে বলা হয়েছে যে ইবরাহিম “মাবুদের কথার উপর ঈমান আনলেন আর মাবুদ সেইজন্য তাঁকে ধার্মিক বলে গ্রহণ করলেন।” (পয়দায়েশ ১৫:৬)—তার ঈমানের জন্য, প্রচেষ্টার জন্য নয়।
হযরত মূসার শরিয়তে, এমন কথা কোথাও বলা হয় নি যে ‘এই শরিয়ত পালন করলে বেহেশতে যাওয়া যাবে’:
“বনি-ইসরাইলরা, তোমরা আমার কথা শোন এবং সতর্ক হয়ে এই সব মেনে চল, যাতে দুধ আর মধুতে ভরা সেই দেশে যাবার পরে তোমাদের পূর্বপুরুষদের মাবুদ আল্লাহ্র ওয়াদা অনুসারে তোমাদের উন্নতি হয় আর তোমরা সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠতে পার।”(দ্বিতীয়বিবরণ ৬:৩)
বনি-ইসরাইলীয়দের জন্য মূসার শরয়িত পালনের পুরস্কার বেহেশত নয়, বরং প্যালেষ্টাইনে শান্তি ও সফলতা। আবার এই শরিয়তের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল পাপ সম্বন্ধে চেতনা, যেন আমরা বুঝতে পারি যে আল্লাহ্র ইচ্ছা কী কী এবং যে আমরা তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করচ্ছি না।
জবুর শরীফে নাজাত
প্রথমত, দাউদ নবীর জবুর শরীফে বলা হয় যে আল্লাহ্র সামনে সকল মানুষ গুনাহ্গার এবং নাজাত পাওয়ার অযোগ্য:
“আমার অন্যায়ের মধ্যে আমি ডুবে গেছি;
তা এমন বোঝার মত হয়েছে যা আমি বইতে পারি না।” (জবুর ৩৮:৪)
“তোমার এই সেবাকারীর বিচার কোরো না,
কারণ তোমার চোখে কোন প্রাণীই নির্দোষ নয়।” (জবুর ১৪৩:২)
“তুমি আমার গুনাহের দিকে চেয়ে দেখো না;
আমার সমস্ত অন্যায় তুমি মাফ কর।” (জবুর ৫১:৯)
“আমার অন্তর নীরবে কেবল আল্লাহ্র অপেক্ষা করছে,
কারণ তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা।
কেবল তিনিই আমার উঁচু পাহাড় আর আমার উদ্ধার;
তিনিই আমার কেল্লা আমি সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হব না।” (জবুর ৬২:১,২)
“হে মাবুদ, তুমি যদি অন্যায়ের হিসাব রাখ,
তবে হে মালিক, কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে?
…
“ঈসা মসীহ্কে ‘প্রভু’ বলা যাবে না”
“ঈসা মসীহ্কে ‘প্রভু’ বলা যাবে না”
যেহেতু কোরআন শরীফে বলা হয় যে আল্লাহ্কে ছাড়া কোন প্রভু বা অধিপতি (রব্ব) নেই, সেহেতু অনেকে ইঞ্জিল পড়ে আপত্তি করে যে ঈসাকে ‘প্রভু’ বলা যাবে না। আসলে এর পিছনে কোরআন শরীফ নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে, কারণ কোরআন শরীফেও ফেরাউনকে “রব্ব” বা প্রভু বলা হয়:
“এবং বহু সৈন্য-শিবিরের অধিপতি ( ‘রাব্ব’) ফির’আওনের প্রতি?”
…
শুধু ঈসা নয়, হযরত ইয়াহিয়াকেও ‘আল্লাহ্র কালাম’ বলা হয়
কোরআন অনুযায়ী কেবল হযরত ঈসা “আল্লাহ্র কালাম” নয়, বরং সূরা আলে-‘ইমরান ৩৯ আয়াতে হযরত ইয়াহিয়াকেও ‘কালাম’ বলা হয়”
জাকির নায়েক দাবী করেছেন যে আলে-‘ইমরান ৩৯ আয়াতে তরিকাবন্দিদাতা ইয়াহিয়াকেও “আল্লাহ্র কালাম” বলা হয়েছে, অর্থাৎ কেবলমাত্র হযরত ঈসা “আল্লাহ্র কালাম” নয়। কিন্তু এই আয়াত পড়লে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় সেখানে হযরত ইয়াহিয়া অন্য একজন প্রেরিত “কালাম”-এর কথা সমর্থন করছেন—
“আল্লাহ্ তোমাকে (অর্থাৎ ইয়াহিয়ার পিতা জাকারিয়াকে) ইহাহ্ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্র বাণীর সমর্থক” (সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৩৯)
কোরআনের তাফসীরকারী প্রায় একবাক্যে বলেন যে এই আয়াতে উক্ত ‘কালাম’ ঈসাকে বোঝাচ্ছে। যেমন হযরত ইবনে ‘আব্বাস (রা) এর তাফসীর—
তিনি যখন মসজিদে মোনাজাত করছিলেন তখন ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে এসে তাকে একজন সন্তানের সংবাদ দেন যার নাম ইয়াহিয়া, যিনি আল্লাহ্র কাছে একটি কালাম সমর্থন করবেন; মরিয়ম-তনয় ঈসা যিনি আল্লাহ্র কালাম হবেন, বিনা পিতায় সৃষ্ট…
এবং বিখ্যাত তাফসীরে জালালাইন শরীফে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—
…“আল্লাহ্ তোমাকে ইহাহ্ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্র বাণীর সমর্থক”—অর্থাৎ ঈসা; তিনি রূহুল্লাহ, তাকে ‘কালাম’ও বলা হয়…”
প্রসিদ্ধ মুফাস্সির শায়েখ তাবারসি এবং আল্লামা জামাখশারি এর সঙ্গে একমত, এবং অবশ্য ইঞ্জিল শরীফে হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর বিস্তারিত বর্ণনা থেকে দেখা যায় তার প্রধান কাজ ছিল হযরত ঈসার পথ প্রস্তুত করা—
তিনি (ইয়াহিয়া) নূরের বিষয়ে সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন যেন সকলে তাঁর সাক্ষ্য শুনে ঈমান আনতে পারে। তিনি নিজে সেই নূর ছিলেন না কিন্তু সেই নূরের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। (ইউহোন্না ১:৭, এবং দেখুন ইউহোন্না ১:১৪)
ইঞ্জিলে বলা হয় যে হযরত ঈসা মসীহ্র আত্মীয় হযরত ইয়াহিয়া ঈসার পথ প্রস্তুত করলেন এবং লোকদের তাকে অনুসরণ করতে বলেছেন।
…
ঈসা মসীহের কথা অনুযায়ী কি শরিয়ত দ্বারা নাজাত পাওয়া যায়?
ঈসার শিক্ষা অনুযায়ী কি
শরিয়ত দ্বারা নাজাত পাওয়া যায়?
ঈসা মসীহের অন্যান্য ভূমিকা এড়ানোর জন্য দুএকটি আয়াতের ভিত্তিতে (মথি ৫:১৭, মথি ১৯:১৬-৩০) বলা হয় যে তিনি শুধু শরিয়ত সমর্থন করতে আসলেন। এটাই তাদের অভ্যাস— দুএকটি আয়াত ভুল-ব্যাখ্যা করা এবং বাকি ৯৯ আয়াত অবহেলা করা। তাই আসুন, আমরা তৌরাত থেকে শুরু করে ভালভাবে দেখব কিতাবুল মোকাদ্দসে নাজাত এবং শরিয়তের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করি:
তৌরাত শরীফে নাজাত
হযরত ঈসা যখন বার বার বললেন যে নাজাত শরিয়তের মাধ্যমে অর্জন করা যায় না বরং রহমতের মাধ্যমে আসে, এটা কোন নতুন শিক্ষা ছিল না বরং তৌরাত এবং নবীদের কিতাবের শিক্ষার সঙ্গে মিলে যায়। তৌরাত শরীফ থেকে বলা হয়েছে যে নাজাত আসবে একজন ‘মসীহ্’ এর মাধ্যমে। পয়দায়েশে বলা হয়েছে যে ইবরাহিম “মাবুদের কথার উপর ঈমান আনলেন আর মাবুদ সেইজন্য তাঁকে ধার্মিক বলে গ্রহণ করলেন।” (পয়দায়েশ ১৫:৬)—তার ঈমানের জন্য, প্রচেষ্টার জন্য নয়।
হযরত মূসার শরিয়তে, এমন কথা কোথাও বলা হয় নি যে ‘এই শরিয়ত পালন করলে বেহেশতে যাওয়া যাবে’:
“ বনি-ইসরাইলরা, তোমরা আমার কথা শোন এবং সতর্ক হয়ে এই সব মেনে চল, যাতে দুধ আর মধুতে ভরা সেই দেশে যাবার পরে তোমাদের পূর্বপুরুষদের মাবুদ আল্লাহ্র ওয়াদা অনুসারে তোমাদের উন্নতি হয় আর তোমরা সংখ্যায় অনেক বেড়ে উঠতে পার। ” (দ্বিতীয়বিবরণ ৬:৩)
বনি-ইসরাইলীয়দের জন্য মূসার শরয়িত পালনের পুরস্কার বেহেশত নয়, বরং প্যালেষ্টাইনে শান্তি ও সফলতা। আবার এই শরিয়তের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল পাপ সম্বন্ধে চেতনা, যেন আমরা বুঝতে পারি যে আল্লাহ্র ইচ্ছা কী কী এবং যে আমরা তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করচ্ছি না।
জবুর শরীফে নাজাত
প্রথমত, দাউদ নবীর জবুর শরীফে বলা হয় যে আল্লাহ্র সামনে সকল মানুষ গুনাহ্গার এবং নাজাত পাওয়ার অযোগ্য:
“আমার অন্যায়ের মধ্যে আমি ডুবে গেছি;
তা এমন বোঝার মত হয়েছে যা আমি বইতে পারি না।” (জবুর ৩৮:৪)
“তোমার এই সেবাকারীর বিচার কোরো না,
কারণ তোমার চোখে কোন প্রাণীই নির্দোষ নয়।” (জবুর ১৪৩:২)
“তুমি আমার গুনাহের দিকে চেয়ে দেখো না;
আমার সমস্ত অন্যায় তুমি মাফ কর।” (জবুর ৫১:৯)
“আমার অন্তর নীরবে কেবল আল্লাহ্র অপেক্ষা করছে,
কারণ তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা।
কেবল তিনিই আমার উঁচু পাহাড় আর আমার উদ্ধার;
তিনিই আমার কেল্লা আমি সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হব না।” (জবুর ৬২:১,২)
“হে মাবুদ, তুমি যদি অন্যায়ের হিসাব রাখ,
তবে হে মালিক, কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে?
…