An online library of rational evidence for the reliability and validity of God's Word
গীতসংহিতার লেখক
গীতসংহিতা পুস্তকটির লেখক কারা?দাউদ ও সলোমন এর লেখক এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে?
গীতসংহিতা পুস্তকের লেখক মূলত দাউদ (৭৬টি), আসফ (১২টি), কারুনের বংশের (১২টি), মূসা (১টি), ইষ্রাহীয় এথন (১টি), ইষ্রাহীয় হেমন (১টি), ও অন্যান্য নামহীন ৪৬টি। সোলায়মান জবুরের কিছু লিখেননি; তিনি মেসাল কিতাব লিখেছেন। ঐতিহাসিক প্রমাণ বলতে ডেড সি স্ক্রোলের আগে কেউ কেউ মনে করতো যে সেই লেখকের নামগুলো হয়তো আগে মূলে ছিল না, কিন্তু ডেড সি স্ক্রোলে প্রমাণ হলো যে জবুর শরিফের সেই নাম দিয়ে আখ্যায়িত ছিল প্রথম থেকেই। দাউদ যে সেই জবুর শরীফের বেশির ভাগ কাওয়ালী লিখেছে সেটা ঈসা মসীহ বলেছে, কোরআনও বলেছে, এবং এর বিপরীতে এরা কিছু বলেন নি, তাই আমরা যদি তাদের কথা বিশ্বাস করি তাহলে জবুর শরিফের সততাও বিশ্বাস করতে হয়।
…
বাইবেলে থাকার মাপকাঠি
সমালোচকের এই মতামত দিয়েছে:
Dead Sea Scroll যদি এতই “সহীহ” হয়, তাহলে ওখানে যেসব বই আছে, এর সবগুলো বাইবেলে নাই কেন? ওখানকার book of Enoch, book of Jubilees এগুলো এখনকার বাইবেলে নাই কেন?
এই লেখক সম্ভবত বুঝতে পারেন নি যে ডেড সি স্ক্রল একটি বই না বরং একটি গুহার মধ্যে বই (স্ক্রল) এর ভাণ্ডার। প্রাচীনকালে স্ক্রলের দৈর্ঘ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে পুরো পুরাতন নিয়ম একটি স্ক্রলে লেখা যেতো না, বরং ~২০ আলাদা স্ক্রলে লেখা হতো। পিরাতন নিয়মের স্ক্রলের পাশাপাশি অবশ্য অন্য সাহিত্য ও ধর্মীয় লেখালেখি ছিল, তাতে সমস্যা কি?…
বাইবেল কি শুধু অধিকাংশই ঠিক আছে?
বাইবেলের অধিকাংশই ঠিক আছে, শুধু দু’একটি আয়াত পরিবর্তন করা হয়েছে যার ফলে পুরো বাণী বিকৃত হয়ে গেল”
যেহেতু কিতাবুল মোকাদ্দসের নির্ভরযোগ্যতার জন্য এত বেশী শক্ত প্রমাণ রয়েছে, কিছু কিছু সমালোচক বলেন যে বাইবেলের অধিকাংশই নির্ভরযোগ্য, কিন্তু দু’একটি আয়াত যোগ করা বা বাদ দেওয়াতে এর বাণী পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গেল। যেমন, তারা স্বীকার করেন যে হযরত ঈসার মৃত্যু ও পুনরুত্থান এবং শুধু ঈমানের মাধ্যমে নাজাত পাওয়ার শিক্ষাগুলো অনেক পরে ইঞ্জিলে যোগ করা হয়েছে। তাদের কাছে যে আপত্তিকর “যোগ করানো” শিক্ষা (যার আরেক নাম ‘সুখবর’ অর্থাৎ ‘ইঞ্জিল’) এইভাবে সংক্ষিপ্ত করা যায়—
শুধু শরিয়ত পালন করার মাধ্যমে মানুষ নাজাত অর্জন করতে পারে না, কারণ তারা শরিয়ত পুঙ্খানপুঙ্খভাবে পালন করতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ্ তার রহমতের মাধ্যমে তিনি একটি নাজাত, কাফফারা এবং পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করলেন হযরত ঈসা মসীহ্র মাধ্যমে, যিনি একমাত্র নিষ্পাপ ব্যক্তি, “মনোনীত নাজাতদাতা”। তিনি ক্রুশে আমাদের পাপের শাস্তি বহন করলেন এবং পুনরুত্থিত হলেন। এই নাজাতের দান কোন সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায় না বরং তওবা করে ঈসা মসীহ্র উম্মত হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
এই সমালোচকদের কথা অনুযায়ী, উপরোক্ত শিক্ষা পরে যোগ করা হল কারণ এদের পূর্ববিশ্বাসের সঙ্গে সেটা মেলে না। এই সংশয়ীরা একথাও বলেছেন যে, ইঞ্জিলে যেখানেই ঈসাকে ‘প্রভু’ বা ‘ইবনুল্লাহ্’ বলা হয় সেটাও মূল ইঞ্জিলে ছিল না।
ইঞ্জিল শরীফ যারা পড়েছেন তাদের কাছে এই দাবী শুধু হাস্যকর, কারণ উপরোক্ত ‘সুসংবাদ’ শিক্ষাটি ইঞ্জিল শরীফের প্রত্যেকটি ২৭ খণ্ডে বার বার পাওয়া যায়। পুরো ইঞ্জিল শরীফের শিক্ষার কমপক্ষে ৫০% এর মধ্যে এই ‘সুখবর’ শিক্ষার স্বাদ পাওয়া যায়। এই শিক্ষা ছাড়া ইঞ্জিল শরীফ অর্থহীন হত।
এই একই সুসংবাদের বাণী হযরত ঈসা মসীহ্ নিজেই বার বার বলেছেন— মথি ২৬:২৮; ইউহোন্না ৩:১৫, মথি ২০:২৮; মার্ক ১০:৪৫; ইউহোন্না ১০:৯; ইউহোন্না ১৪:৬; ইউহোন্না ৬:৪৪,৪৭,৪৮,৫১; ইউহোন্না ১০:১১; ইউহোন্না ১০:২৮; ইউহোন্না ১১:২৫; ইউহোন্না ১৭:১-২; ইউহোন্না ১৭:৩; লূক ২৪:২৬-২৭; লূক ৪:৪৩; ইউহোন্না ৬:২৯; ইউহোন্না ৬:৩৩,৩৫; ইউহোন্না ৪:১৪; ইউহোন্না ৫:২১; মথি ১৮:২১-৩৫। এই একই সুসংবাদ প্রচার করেছেন হযরত ঈসার উম্মত পিতর (প্রেরিত ২:৩৮; প্রেরিত ৪:১২; ১ পিতর ১:১৮-১৯; ২ পিতর ১:১৬), উম্মত ইয়াকুব (ইয়াকুব ২:১০), এবং উম্মত ইউহোন্না (১ ইউহোন্না ২:১,২)। তা ছাড়াও, ইঞ্জিল শরীফের প্রত্যেকটি খণ্ডে ঈসা মসীহ্র সেই ‘আপত্তিকর’ উপাধি “প্রভু” এবং “ইবনুল্লাহ্” বার বার ব্যবহার হয়।
অর্থাৎ, ইঞ্জিল শরীফ থেকে এই সুসংবাদ শিক্ষাটি বাদ দেওয়া সম্ভব নয়, সেটা হচ্ছে ইঞ্জিল শরীফের মর্ম।
“কোরআনে বাইবেলের কথা বলা হয় নি,
বরং শুধু তৌরাত, জবুর এবং ইঞ্জিলের কথা বলা হয়েছে”
আসলে, ইংরেজী ‘বাইবেল’ শব্দ গ্রীক βιβλία ‘বিব্লিয়া’’ শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ “গ্রন্থগুলো” বা ল্যাটিন ভাষায় “গ্রন্থটি”। আরবী ভাষায় তা হয় الْكِتَاب (“আল-কিতাব”) অথবা الكتاب المقدس (“আল-কিতাবুল মোকাদ্দাস”), এবং হযরত মুহাম্মদের (সাঃ)-এর শত বছর আগে ও পরে বাইবেল সবসময়ই এই নামে পরিচিত। তাই যখন কোরআন শরীফে এই একই শব্দ الْكِتَاب ইহুদী-খ্রীষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ সম্বন্ধে ব্যবহার করা হয়েছে তখন কোন প্রশ্নই নাই যে সেখানে একই গ্রন্থ বোঝানো হচ্ছে—
ইয়াহূদীরা বলে, ‘খৃষ্টানদের কোন ভিত্তি নাই’ এবং খৃষ্টানরা বলে, ‘ইয়াহূদীদের কোন ভিত্তি নাই; অথচ তাহারা আল-কিতাব (الْكِتَاب) পাঠ করে। (সূরা বাকারা ২:১১৩)
“তোমরা (ইহুদীগণ) আল-কিতাব (الْكِتَاب) শিক্ষা দান কর” (সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৭৯)
আরবী ভাষায় বাইবেলকে আরও স্পষ্টভাবে বোঝানো সম্ভব না। কোরআন শরীফে যদি অন্য কোন কিছু বোঝানো হত তাহলে অবশ্য তা পরিষ্কারভাবে বলা হত।
আগেকার কিতাব সম্পর্কে কোরআনের শীর্ষ তাফসীরবিদদের ধারণা
জাকির নায়েকের মত সমালোচকদের মূল সমস্যা হল এরা কোরআনের শীর্ষ ব্যাখ্যাকারীদের বিপরীতে কথা বলছেন, যারা ইহুদী-খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থের নির্ভরযোগ্যতা স্বীকার করতেন। প্রসিদ্ধ মুসলমান অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ্ তার The Charge of Distortion of Jewish and Christian Scriptures (“ইহুদী ও খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থ বিকৃত করার অভিযোগ”) প্রবন্ধে এটা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,
“যেহেতু ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের অনুমোদিত ধর্মগ্রন্থগুলো বর্তমান পর্যন্ত অনেকটা আগের মত রয়েছে, তাই একথ বলা কঠিন যে তৌরাত ও ইঞ্জিল সম্পর্কে কোরআনের সাক্ষ্য শুধুমাত্র মূসা ও ঈসার আমলের আগেকার “খাঁটি” তৌরাত ও ইঞ্জিলের কথা বলছেন। যদি এই কিতাবগুলোর পাঠ মোটামুটি আগেকার সপ্তম শতাব্দীর পাঠের মত থেকে থাকে, তাহলে ইঞ্জিল ও তৌরাতের প্রতি কোরআন শরীফে যে পরিমাণ শ্রদ্ধা দেওয়া হয় তা এ যুগেও দেওয়া উচিত। কোরআনের অনেক তাফসীরকারীগণ, আল-তাবারী থেকে রাজি থেকে ইব্ন-তায়মিয়্য়া এমনকি কুতব্ এই মতামত পোষণ করেন। ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের কিতাবের প্রতি আধুনিক যুগে অনেক মুসলমানের যে পুরোপুরি গ্রাহ্য না করার মনোভাব আছে তা কোরআন ও তফসিরের প্রধান ব্যক্তিত্বের মধ্যে কোন সমর্থন পায় না” ১
হযরত ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)
হযরত ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস বলেছেন,
“তাহ্রিফ (বিকৃত করা) শব্দটি দিয়ে বোঝানো হচ্ছে একটি জিনিস তার মূল প্রকৃতি থেকে সরিয়ে দেওয়া; এবং যেহেতু আল্লাহ্র কাছে নাজিলকৃত একটিমাত্র শব্দও বিকৃত করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়, সেহেতু ইহুদী-খ্রীষ্টানরা কেবলমাত্র আল্লাহ্র বাণীর অর্থের ভুলব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছিল।২
অন্য একটি গ্রন্থে, হযরত ইবনে আব্বাসের একই কথা পাওয়া যায়—
“এরা কালাম বিকৃত করেন” কথার মানে হচ্ছে “এরা তার অর্থ পরিবর্তন বা বিকৃত করেন”। কারণ আল্লাহ্র কোন কিতাবের একটিও শব্দ পরিবর্তন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়– এর অর্থ হচ্ছে যে এরা কালামের ভুল ব্যাখ্যা করেন। ৩
হযরত ইবনে কাসীর ‘ইবনে আব্বাসের এই একই কথা উল্লেখ করেন-
“আল্লাহ্র কিতাবের বিষয়ে, সেগুলো এখনও সংরক্ষিত এবং পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।”৪
এই হল হযরত ‘আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসের তাফসীর, যিনি ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আপন চাচাত ভাই এবং সাহাবীদের একজন। একজন সাহাবী হিসেবে তার মতামত অন্যান্য তাফসীরকারীদের চেয়ে বেশী গ্রহনযোগ্য।
ইমাম আত-তাবারী (রাঃ) (৮৩৮-৯২৩ খ্রীষ্টাব্দ)
বিখ্যাত তাফসীরবিদ আত-তাবারী খুব পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেছেন যে তার মতে, ইহুদী-খ্রীষ্টানদের কাছে আল্লাহ্র প্রেরিত মূল কিতাবগুলো তখনও ছিল—
“সর্বপ্রথমটা ছিল তৌরাত, যেটা আহলে-কিতাবদের হাতে রয়েছে…তারপর ইঞ্জিল শরীফ, যেটা খ্রীষ্টানদের হাতে রয়েছে ।” ৫
তাবারীর মূল অভিযোগ ছিল যে এরা শুধু সেগুলোর প্রকৃত অর্থ বোঝেন নি। যদিও তিনি বাগদাদে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতেন, তিনি কিন্তু কখনও তাদের কিতাব পরিবর্তন করার অভিযোগ করেন নি।
বিখ্যাত তাফসীরবিদ আল-রাজীও সমর্থন করেন যে ইহুদীদের প্রতি ‘তাহ্রিফ’ অভিযোগ দিয়ে বোঝানো হচ্ছে কীভাবে ইহুদীরা নবীজীর কথাগুলো বিকৃত করতেন।৬
সূরা বাকারা ৭৫ আয়াতের তাফসীরে আল-রাজী ‘তাহরিফ’ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন যে “শব্দের পরিবর্তন” (التَّحْرِيف اللَفْظيআল-তাহ্রিফ আল-লাফজী ) হচ্ছে—
“অসম্ভব যদি আল্লাহ্র বাণী কোরআনের মত করে বহু লোকের সামনে প্রকাশিত হয়ে থাকে”৭
ইঞ্জিল শরীফ সম্পর্কে আমরা এই জানি যে, সেটা শুরু থেকেই বহু লোকের কাছে প্রকাশিত হল। ইমাম আল-রাজী আবার বলেন—
“এমন কোন কথা নেই যে এরা কোন শব্দ (তিল্কা-আল-লাফ্জা) কিতাব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন”৮
ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রাঃ)
ইমাম ইবনে তায়মিয়া (রাঃ) বলেন—
আবার, এই লোকদের মধ্যে (মুসলমানদের মধ্যে) এমন আছে যারা দাবী করেন যে তৌরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে অনেককিছু বাতিল, আল্লাহ্র কালাম নয়। কেউ কেউ বলেন বাতিল অংশই কম। আবার বলা হয় যে “কেউ লিখিত কিতাবের কোন কিছু পরিবর্তন করেন নি, বরং এরা (ইহুদী-খ্রীষ্টানগণ) এর অর্থ বিকৃত করেছেন ভুলব্যাখ্যার মাধ্যমে। এই উভয় মতামতের কিছু কিছু মুসলমানরা গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে তৃতীয়টি হচ্ছে সঠিক মতামত; সেগুলো হল পৃথিবীতে সেগুলোর সহীহ্ কপি রয়েছে, এবং সেগুলো হযরত মুহাম্মদ(সা) এর আমল পর্যন্ত রয়ে গেল, এবং বিকৃত কপিও অনেক আছে। যারা দাবী করেন যে এই কপির মধ্যে কোন কিছুই বিকৃত হয়নি তারা অসম্ভব কথা দাবী করছেন। যারা বলেন যে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পরে সব কপিগুলো বিকৃত করা হয়েছে, তারা প্রকাশ্য মিথ্যা বলছেন। কোরআন তো তাদেরকে বিচার করতে বলে তৌরাত ও ইঞ্জিলের মধ্যে আল্লাহ্ যা নাজিল করেছেন সেটা দিয়ে। আল্লাহ্ তাদের বলেন যে উভয় কিতাবের মধ্যে আছে হিকমত। এরা যে সকল কপি বিকৃত করেছেন তার পক্ষে কোরআনের কোন বক্তব্য নেই।” ৯
ইমাম ইবনে তায়মিয়ার মতামত নিয়ে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল্লাহ্ মন্তব্য করেন—
এই দুই ধর্মীয় ধারার ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে নবীজী (সাঃ) এর প্রচার কাল পর্যন্ত (খ্রীষ্টাব্দ সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে) ইহুদী খ্রীষ্টান উভয় সম্প্রদায়ের কিতাবের জন্য বহু পাণ্ডুলিপির প্রমাণ রয়েছে। সেই সময়ে এদের কাছে যে কিতাব ছিল, তা বর্তমানেও একই। ইঞ্জিলের ক্ষেত্রেও তাই। যেহেতু কোরআন শরীফ এই দুই কিতাবের কথা বলে, সেই কথা বর্তমান যুগেও সমানভাবে কার্যকর। তায়মিয়ার মতামত নিয়ে এটাই প্রধান সমস্যা।১০
তা ছাড়া অন্যান্য অনেক শীর্ষ মুসলমান চিন্তাবিদ, যেমন ইমাম আল-গাজালী (রাঃ), ইমাম শাহ্ ওয়ালি উল্লাহ্ (রাঃ) এই নিয়ে একমত ছিলেন। শুধু ইবনে কাজেম (মৃঃ ১০৬৪খ্রীঃ) এর যুগ থেকেই অনেক মুসলমানরা এই অভিযোগ শুরু করলেন যে ইহুদী-খ্রীষ্টানরা তাদের কিতাব পুরোপুরি বিকৃত করে দিয়েছেন, অর্থাৎ লিখিত পরিবর্তন। এই ছিল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনেক পরে, এবং ‘ইবনে আব্বাস (রা)-এর মত সাহাবীদের মতামতের বিপরীতে।
“আগের কিতাবসমূহ বিকৃত হওয়ার কারণে কোরআন পাঠানো হয়েছে।”
জাকির নায়েকের মত মৌলবাদীরা কোরআন-বহির্ভূত ধারণা প্রচার করেছে যে, আগের আমলের কিতাবসমূহের পরিবর্তনের কারণেই কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কোরআনে কিন্তু এরকম ধারণা কোথাও পাওয়া যায় না। বরং এর বিপরীতেই কোরআন আসলে বলে যে, আগের কিতাবসমূহ সমর্থন করার ( সাদ্দাক্বা ) জন্যই কোরআন দেওয়া হয়েছে:
“ইহার পূর্বে ছিল মূসার কিতাব আদর্শ ও অনুগ্রহস্বরূপ। আর এই কিতাব ইহার সমর্থক, আরবি ভাষায় যেন ইহা জালিমদিগকে সতর্ক করে এবং যাহারা সৎকর্ম করে তাহাদিগকে সুসংবাদ দেয়।” (আল আহকাফ ৫:১২)
কোরআন “আরবী” ভাষায় নাজিল হয়েছিল যাতে আরবের লোকেরা সেই সময় পর্যন্ত তাদের কাছে যেসব খোদায়ী বাণী অজ্ঞাত ছিল, সেসব সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করতে পারে। অভিধান অনুসারে ‘সমর্থন করা” অর্থ ‘অনুমোদন দেওয়া’ বা ‘কার্যকারিতা সম্বন্ধে নতুনভাবে নিশ্চয়তা দেওয়া।’
যারা বলেন কোরআন আগের কিতাবসমূহ প্রতিস্থাপন করে তারা নিচের আয়াতটি ব্যবহার করে:
“আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছি ইহার পূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে।” (৫:৪৮)
তাদের মতানুসারে, কোরআন হচ্ছে এক সংরক্ষক ( মুহাইয়িম ) এই অর্থে যে কিতাবসমূহকে কোন বিকৃতিসাধন থেকে তার মূল ও সঠিক বিষয় সংরক্ষণ করে। কিন্তু বিখ্যাত মুসলিম অনুবাদক ইউসুফ আলির মতানুসারে, এই আয়াতে মুহাইয়িম (সংরক্ষক) অর্থ হচ্ছে “যিনি রক্ষা করেন, দেখাশোনা করেন, সমর্থক হিসাবে সাক্ষ্য দান করেন, আগলে রাখেন, এবং উপস্থাপন করেন বা তুলে ধরেন।”
তৌরাতের প্রতি ঈসার মনোভাবের ক্ষেত্রে সেই একই ‘সমর্থন করা’ ( সাদ্দাক্বা ) শব্দটি কোরআনও ব্যবহার করা হয় (৫:৪৬)। ঈসা এমন শিক্ষা দেননি যে, তৌরাতকে অস্বীকার করতে হবে অথবা এর শিক্ষা বিকৃত হয়ে গেছে। বরং তিনি শিক্ষা দেন যে, এটা অপরিবর্তনীয়, পবিত্র বাক্য যা পাঠ করা এবং বোঝা উচিত:
“এই কথা মনে কোরো না, আমি তৌরাত কিতাব আর নবীদের কিতাব বাতিল করতে এসেছি। আমি সেগুলো বাতিল করতে আসি নি বরং পূর্ণ করতে এসেছি। আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, আসমান ও জমীন শেষ না হওয়া পর্যন্ত, যতদিন না তৌরাত কিতাবের সমস্ত কথা সফল হয় ততদিন সেই তৌরাতের এক বিন্দু কি এক মাত্রা মুছে যাবে না।” (মথি ৫:১৭-১৮)
“তৌরাত ও ইঞ্জিল এখন সর্বশেষ কিতাব কোরআন দ্বারা
বাতিল বা অচল হয়ে গেছে।”
কিছু কিছু লোক দাবি করেন যে, শেষ-বাণী কোরআন শরীফের আগমনেই তৌরাত-ইঞ্জিল এখন অচল ও বাতিল হয়ে গেছে । এই কাল্পনিক দাবির জন্য কিন্তু কোরআন বা হাদিসে বিন্দুমাত্র ভিত্তি নেই, বরং সেটা আসলে কোরআন-বিরুদ্ধ একটি মনগড়া ধারণা। এই দাবি সত্য হলে কোরআন শরীফ ইহুদী-খ্রীষ্টানদের বলত না—
قُلْ يَـأَهْلَ الْكِتَـبِ لَسْتُمْ عَلَى شَىْءٍ حَتَّى تُقِيمُواْ التَّوْرَاةَ وَالإِنجِيلَ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْكُمْ مِّن رَّبِّكُمْ
“তৌরাত, ইঞ্জিল ও যা তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে …তা পালন কর।”
(মায়িদা ৬৮)
—বরং বলতে, “তৌরাত ও ইঞ্জিল বাদ দিয়ে শুধু কোরআন শরীফই পালন করুন।” আবার কোরআন শরীফে বলা হত না—
—বরং বলা হত “ইঞ্জিল-অনুসারীগণ এখন ইঞ্জিল বাদ দিয়ে কোরআন পালন করুক।”
তাই এটা পরিষ্কার যে, কোরআন শরীফ কখনও দাবি করেননি যে সেটা আগের কিতাব বাতিল করতে আসল, বরং সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা সমর্থন করতে আসল (মায়িদা ৫:৪৮) স্পষ্ট আরবী ভাষাই (আশ-শো’আরা ২৬:১৯৫)।
এই দাবি সত্য হলে ঈসা মসীহ্ তৌরাত বাতিল করে ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠিত করতেন, কিন্ত তিনি সুস্পষ্টভাবে বলতেন যে তিনি তৌরাত বাতিল করতে আসেননি (ইঞ্জিল, মথি ৫:১৮)
বাতিল (মান্সুখ)?
…
“বিভিন্ন খ্রীষ্টান দলের কি আলাদা বাইবেল আছে?”
“বিভিন্ন খ্রীষ্টান দলের আলাদা বাইবেল আছে”
খ্রীষ্টধর্মের সকল শাখা—ক্যাথলিক, প্রোটেস্ট্যান্ট, অর্থোডক্স, লুথেরান, ইত্যাদি, তাদের প্রত্যেকে হুবহু একই তৌরাত (তোরাহ্), জবুর (গীতসংহিতা), এবং ইঞ্জিল (নতুন নিয়ম) আছে। কোরআনে উল্লেখিত এই তিনটি খণ্ডগুলো তুলনা করলে কোন পার্থক্য নেই। এমনকি, ইহুদী ধর্মাবলম্বিদের তৌরাত এবং জবুর শরীফ হুবহু একই, যদিও কিতাবের ক্রম একটু আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে।
“আপক্রিফা’ নামক কিছু খণ্ড নবীদের কিতাবের সঙ্গে দেওয়া উচিত কিনা এই নিয়ে প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিক/অর্থোডক্স খ্রীষ্টানদের মধ্যে মতের অমিল রয়েছে। এগুলো প্রোটেস্টান্টেরা অস্বীকার করে, কারণ সেগুলো নবীদের আমলে লেখা হয় নি, কিন্তু ক্যাথলিকেরা সেগুলোকে কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্যে রাখে এবং সেগুলো ‘গৌণ’ বা ‘উপকারি’ বলেন। ইসলামের মধ্যে এমন রকমের একটি বিতর্ক আছে – শিয়ারা বলে থাকেন যে কোরআনের বাড়তি দুটি সূরা আছে যেগুলো সুন্নিরা বাদ দিয়েছে। কিন্তু এই ধরণের বিতর্ক তো কিতাবের বিশুদ্ধতা পরিবর্তন করে না।
…
ইঞ্জিল সংকলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কোরআন এবং ইঞ্জিলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল বাণী এবং বাণীবাহকের পার্থক্য। কোরআনের ক্ষেত্রে, কোরআন হল বাণী এবং হযরত মুহাম্মদ (সা) শুধু সেই আল্লাহ্র বাণীর বাহক। কিন্তু ইঞ্জিলের ক্ষেত্রে বিপরীত; হযরত ঈসা মসীহ্ ছিলেন জীবিত আল্লাহ্র বাণী, এবং ইঞ্জিল শরীফ হচ্ছে সেই জীবিত বাণীর লিখিত সাক্ষ্য। ঈসা মসীহ্ কোন লিখিত বাণী নিয়ে আসেননি, বরং তার জীবন ও শিক্ষার আল্লাহ্-শ্বাশ্বত সাক্ষ্য হিসেবে ইঞ্জিল শরীফ লেখা হয়েছে। কোরআন এবং ইঞ্জিল তুলনা করার আগে এই কথা মনে রাখা দরকার।<p>
ইঞ্জিল শরীফের মূল খণ্ডগুলো হযরত ঈসার সাহাবীরা লিখেছিলেন খ্রীষ্টাব্দ ৫১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত, ঈসা মসীহ্র বেহেশতে ফিরে যাওয়ার বিশ বছর পর থেকে। এই মূল সুখবর এবং চিঠিগুলো লেখার পরপরই সেগুলোর বিভিন্ন কপি এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন জামাতের কাছে ছড়িয়ে পড়ল। কোরআন শরীফের ক্ষেত্রে যেমন হযরত আবু বকরের এবং হযরত ওসমানের (রা) সর্বপ্রথম কপিগুলো হারিয়ে গেছে, তেমনই ইঞ্জিলের প্রথম কপিগুলো হারিয়ে গেছে। <p>
ইঞ্জিল শরীফের সবচেয়ে পুরানো পাণ্ডুলিপি হচ্ছে <span class=”english” lang=”en”>p52</span> নামক ইউহোন্না ১৮ অধ্যায়ের এক পৃষ্ঠার অংশ যেটা লেখা হয়েছে ১৩৫ খ্রীষ্টাব্দ, অর্থাৎ মূল লেখার মাত্র চল্লিশ বছর পর। ২০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে লূক, ইউহোন্না এবং পৌলের দশটি চিঠির জন্য পাণ্ডুলিপি আছে।<p>
ইঞ্জিল শরীফের সবচেয়ে পুরানো পূর্ণ কপি হচ্ছে ৩০০ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে ব্রিটিশ যাদুঘরে অবস্থিত <span class=”english” lang=”en”>Codex Sinaiticus</span>.…
৩২৫ সালে রোমীয় শাসক কন্সটান্টিনের নিসিয়া কাউন্সিল
“৩২৫ সালে রোমীয় শাসক কন্সটান্টিন তার তৃত্ববাদ সমর্থন করার উদ্দেশ্যে ইঞ্জিলের অংশগুলো ঠিক করলেন”
৩২৫ সালের সে নিসিয়া কাউন্সিলে প্রায় ২০০ আগে থেকেই ইঞ্জিলের খণ্ড ঠিক করা হয়েছিল। নিসিয়া কাউন্সিলে বিভিন্ন এলাকার ঈসায়ী নেতারা একবাক্যে স্বীকার করেছে যা অনেক আগে থেকেই ঠিক করা ছিল।
জামাল বাদাওয়ীর মত টেলিভিশন প্রচারকগণ মনগড়া মিথ্যা গল্প ছড়িয়ে দিচ্ছে যে সেই কাউন্সিলে বিশপগণ শত শত বিকল্প গসপেলের মধ্যে চারটা পছন্দ করলেন। এই নিন্দাজক মনগড়া ইতিহাসের জন্য তারা কোন প্রমাণ দেয় না, রেফারেন্সও দেয় না। নিসিয়া কাউন্সিলের প্রত্যেক বিশপ শুধুমাত্র স্বীকৃত চারটি সুখবর (মথি, মার্ক, লূক, ইউহোন্না) মানতেন।
নিসিয়া কাউন্সিলের ১৫০ বছর আগে থেকে ইঞ্জিলের খণ্ডের একটি তালিকার পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে যাকে বলা হয় ‘মুরাতরিয়ান ক্যানন’ (খ্রীষ্টাব্দ ১৭০ সাল থেকে), যেখানে ইঞ্জিলের খণ্ডগুলো পাওয়া যায়। পাণ্ডুলিপির উপর অংশ ছেঁড়া কিন্তু অবশ্য মথি এবং মার্কের উল্লেখ ছিল কারণ লূক তৃতীয় সুখবর হিসেবে দিয়েছে; তারপর ইউহোন্না, প্রেরিত, তারপর ‘পৌলের লেখায় জামাতের কাছে ৯টা চিঠি এবং ব্যক্তির কাছে ৪টা চিঠি (ফিলিমন, তীত, ১ ও ২ তীমথিয়), এহুদা, ইউহোন্নার দু’টা চিঠি, ইউহোন্না লিখিত প্রকাশিত কালাম, এবং পিতরের লেখা।’ ১
ইঞ্জিলের মধ্যে কোন্ কোন্ খণ্ড থাকবে এই বিষয়ে ঈসায়ী জামাত নিজের মতামত নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেননি, বরং এই তালিকাগুলো দিয়ে শুধু ঘোষণা করা হত যা যা আগে থেকেই কিতাব হিসেবে গ্রহণ করা ছিল। ঈসায়ী নেতা এরেনাউস (১১০খ্রীঃ) এবং জাস্টিন মার্টার (১৫০খ্রীঃ)-এর লেখাগুলো থেকে আমরা জানি যে প্রাচীন যুগেই এই চারটি সুখবরগুলো থেকে ঈসায়ী এবাদতে শিক্ষা দেওয়া হত। মসীহ্র পরে দ্বিতীয় শতাব্দীতে আগে এই রকম ইঞ্জিলের খণ্ডের তালিকা লেখার প্রয়োজন ছিল না, কারণ এই সময়ে (মসীহ্র ২০০ বছর পরে) কিছু মানুষ মিথ্যা সুখবর বা চিঠি লিখতে শুরু করল। তাই এদের মিত্যাচার প্রকাশ করার জন্যই ইঞ্জিলের সহীহ্ অংশের তালিকা দেওয়ার প্রয়োজন হল।
এমনকি, ইঞ্জিল শরীফের মধ্যেও হযরত পিতর হযরত পৌলের লেখাকে বলে “কিতাব” (গ্রীক γραφήগ্রাফেয়, অর্থাৎ নাজিলকৃত ধর্মগ্রন্থ) এবং ১ তীমথিয় ৫:১৮ আয়াতে হযরত পৌল হুবহু লূকের সমাচারের উদ্ধৃতি দিয়ে (লূক ১০:৭) সেটাকে “পাক-কিতাব” বলে। তাই আমরা দেখা যে ইঞ্জিলের মধ্যেও সেটাকে পাক-কিতাব বলা হয়।
১৮০ খ্রীষ্টাব্দে ঈসায়ী নেতা এরেনেউস এই চারটি সুখবর (মথি, মার্ক, লূক, ইউহোন্না) সম্বন্ধে বলেছেন—
সুখবরগুলোর সংখ্যা যে চারের বেশী অথবা চারের কম হবে তা সম্ভব নয়, কারণ যেহেতু আমাদের এই দুনিয়ার চার দিক আছে, এবং চারটি প্রধান বায়ু, যখন ঈসায়ী জামাত দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছে, এবং জামাতের ভিত্তি এবং স্তম্ভ হল সেই ইঞ্জিল এবং জীবন্ত রূহ্; সেহেতু তা যুক্তিসঙ্গত হয় যে এর চারটা স্তম্ভ থাকবে, চারদিকে নতুন জীবন দিয়ে শ্বাসত হচ্ছে অনন্ত জীবন…কারণ জীবন্ত প্রাণী হল চতুর্পদ, এবং সুখবরও তেমনই চতুর্গুণ।২
এই ইরিনেওস ছিলেন সাহাবী ইউহোন্নার “রূহানিক নাতি”, কারণ তিনি ঈসার প্রিয় উম্মত এবং ইউহোন্না-সমাচারের লেখক হযরত ইউহোন্নার শিষ্য পলিকার্পের শিষ্য ছিলেন।
৩২৫ সালের নাইসিয়া কাউন্সিলের আসল উদ্দেশ্য
নাইসিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য আসলে কিতাবের খণ্ড সমর্থন করা নয় বরং ‘আরিয়ান বিতর্ক’ সমাধান করার জন্যই বসা হল। মূলত, আরিউস নামক একজন নেতা শিক্ষা দিচ্ছিল যে ঈসা মসীহ্ আক্ষরিক অর্থে আল্লাহ্র পুত্র, অর্থাৎ সৃষ্টির আগে কোন এক সময়ে আল্লাহ্র পুত্র হল (নাউজুবিল্লাহ)। আরিউস বলত:
“যদি পিতা থেকে আগত একজাতের পুত্র হয়, তাহলে তার একটা শুরু ছিল”
“আল্লাহ্ ঈসাকে তার একটি সন্তান হিসাবে তাকে জন্মালেন।”
কিন্তু নিসিয়ার ৯৯% নেতারা তার এই শিক্ষা অগ্রাহ্য করলেন, কারণ সেটা ইঞ্জিল বিপরীত৩ এবং খারাপ; ‘আল্লাহ্র পুত্র’ কথাটির সঠিক অর্থ আক্ষরিক না বরং রূপক।
তবুও, আরিউস এবং অন্যান্য নেতারা হুবহু একই ইঞ্জিল শরীফ মানত, এবং একই নাজাতের শিক্ষা (যে নাজাত কাজ দ্বারা অর্জন করা যায় না বরং একমাত্র মসীহের উপর ঈমান আনার মাধ্যমে আল্লাহ্র রহমত পাওয়া যায়)। কিতাবের খণ্ড নিয়ে এবং ইঞ্জিলের মূল শিক্ষা নিয়ে নিসিয়া কাউন্সিলে কোন দ্বিমত ছিল না। আরিউস পরে তার মন পরিবর্তন করল।
কিছু মুসলমান প্রচারক থেকে শোনা যায় যে সম্রাট কন্সটান্টিন খুব জোর করে বিশপদের অনিচ্ছায় আরিউসকে অগ্রাহ্য করার জন্য চাপ দিলেন। আসলে, আরিউসের মন পরিবর্তন করার পরে, তাকে চার্চে আবার ঢুকানোর জন্য সম্রাট কন্সটান্টিন বিশপ আথানাসিউসকে বিশেষভাবে অনুরোধ করলেন কিন্তু তিনি রাজি হননি। এইজন্য সম্রাট কন্সটান্টিন বিশপ আথানাসিউসকে নির্বাচনে পাঠিয়ে দিলেন। মূল কথা বিশপদের তুলনায়, আরিউসের প্রতি কন্সটান্টিনের বেশি দয়া ছিল।