মার্ক ১৬:৯-২০ – মূল ইঞ্জিলে কি ছিল?

মার্ক ১৬:৯-২০—“এই অনুচ্ছেদ যেহেতু সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোতে ছিল না, সেহেতু ইঞ্জিল শরীফ কীভাবে নির্ভরযোগ্য হতে পারে?”

ইঞ্জিলের সমালোচকগণ প্রায়ই মার্ক ১৬:৯-২০ এবং ইউহোন্না ৮:১-১১ দিয়ে “প্রমাণ” করেন যে বাইবেল পরিবর্তিত এবং অনির্ভরযোগ্য, যেহেতু ইঞ্জিলের কিছু কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে এই দুই অনুচ্ছেদ বাদ থাকে। কিন্তু মার্ক ১৬:৯-২০ যে মূল লেখার মধ্যে ছিল তা বিশ্বাস করার অনেক কারণ রয়েছে, কারণ অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপির মধ্যে তা রয়েছে এবং প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের নেতা ইরেন্যাউস( মৃঃ ২০০) এর উল্লেখ করেছেন। এই অনুচ্ছদ বাদে মার্ক খণ্ডটি অস্বাভাবিকভাবে শেষ হত, বরং এই অনুচ্ছেদ দিয়ে তা স্বাভাবিকভাবে সমাপ্ত হয়। আবার মার্ক ১৬:৯-২০ ও ইউহোন্না ৮:১-১১ অনুচ্ছেদগুলি গোটা ইঞ্জিলের তুলনায় যথার্থ গুরুত্ব দিতে হয়-পুরো কিতাবুল মোকাদ্দসে মাত্র এই দুই সামান্য অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, যেগুলো হচ্ছে কিতাবুল মোকাদ্দসের শতকরা ০.০০০৭% ভাগ মাত্র।

একই সমালোচকগণ প্রায়ই অবহেলা করেন যে কোরআন শরীফ নিয়েও তেমন ধরণের প্রশ্ন রয়েছে। নবীজী ইবনে মাসউদকে একজন শ্রেষ্ঠ কোর’আন পাঠক বলতেনঃ

আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী(স)-কে বলতে শুনেছি, চার ব্যক্তির নিকট থেকে তোমরা কোরআনের পাঠ গ্রহণ করঃ (১) ইবনে মাসউদ (২) আবু হুযাইফার মুক্ত গোলাম সালিম (৩) উবাই (ইবনে কা’ব) ও (৪) মুয়ায ইবনে জাবাল।” (সহীহ আল-বোখারী, ৩৫২৪ (জামে’ সহীহ্‌ আল-বোখারী অনুবাদ মাওলানা মোবারক করীম জওহর, খান ব্রাদার্স আণ্ড কোম্পানি, ৯ বাংলাবাজার ১১০০; ঢাকা ২০০৮, পৃষ্ঠা ৬৪৩)

এই ইবনে মাসউদ সূরা ফাতেহা, সূরা আল-ফালাক, এবং সূরা আন-নাস কোরআনের অংশ হিসেবে তিনি গ্রহণ করেননি। অপর দিকে, উপরোক্ত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর মুসহাফে দু’টি বাড়তি সূরা ছিল—সূরা আল-হাফ্‌দ এবং সূরা আল-খাল’:

Sura al-Hafd

সূরা আল-হাফ্দ

Sura al-Khal

সূরা আল-খাল

হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর মুসহাফের সূরা আল-হাফ্দ এবং সূরা আল-খাল
(বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত)
আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের কথা অনুযায়ী, আলী ইবন আবি তালিবের কোরআনের মধ্যে “আল-খাফ্‌ধ” নামক একটি বাড়তি সূরা ছিল, যেটা আজকাল কোরআনে নাই। আবার বিভিন্ন শি’য়া উলেমাদের কথা অনুযায়ী, হযরত উসমান কোরআন শরীফ থেকে “সূরা উলায়াহ্‌” এবং “সূরা নুরাইন” নামক দু’টি সূরা বাদ দিয়েছেন।

হয়ত এইজন্য ‘আব্দুল্লাহ্‌ ইবন ‘ওমর (মৃঃ৬৯২) বলেছেন, “কেউ না বলুক, ‘আমি পুরো কোরআন শিখেছি!’…

ইঞ্জিল শরীফ ও কোরআন শরীফে ভিন্নপাঠ এবং লিপিকারের ত্রুটি

আমরা সবাই একমত যে “আল্লাহ্‌র কালামের কোন পরিবর্তন নেই”, কারণ সেটা কোরআন এবং কিতাবুল মোকাদ্দসের স্পষ্ট সাক্ষ্য। তাই একটি পাণ্ডুলিপিতে কোন ভিন্নপাঠ বা ত্রুটি পাইলে, তাতে কি আল্লাহ্‌র কালামের বিশুদ্ধতা ভুলপ্রমাণ করে? অবশ্যই না, কারণ কোরআন এবং কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্যে এমন লিপিকারদের ত্রুটি আর প্রিন্টারের ভুল ছিল এবং আছে। শুধু গত মাসেই আমি আমার ইসলামি ফাউন্ডেশন কোরআন তরজমাতে পড়েছিলাম—

“আর যাহারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাহাদিগকে দাখিল করব জাহান্নামে” (সূরা নিসা ১২২)

এখানে ‘জান্নাত’-এর বদলে ‘জাহান্নাম’ ছাপানো হয়েছে। বই প্রকাশনীতে এরকম ভুল স্বাভাবিক, এবং মুদ্রাযন্ত্র আবেষ্কার হওয়ার আগে যখন হাতের লেখায় বই কপি করা হত তখন এগুলো আরও স্বাভাবিক ছিল। তাতে কি প্রমাণ হয় যে আল্লাহ্‌ কালাম পরিবর্তন করা সম্ভব?…

কোরআন এবং ইঞ্জিলের তুলনামূলক সংকলনের ইতিহাস

“ইঞ্জিল শরীফ ঈসা মসীহের শত শত বছর পরে রচনা হয়েছে, কিন্তু কোরআন মুহাম্মদ(সাঃ)-এর সময়কালেই লিখিত হয়েছে।”

আসলে, কোরআন ও ইঞ্জিল শরীফের লেখার ইতিহাসের মধ্যে অনেকখানি মিল রয়েছে, এবং শুধু ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী ইঞ্জিল শরীফের মধ্যে ঈসা মসীহ্‌র বাণী সঠিকভাবে রক্ষা করা আছে।

অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে যে আল্লাহ্‌ একটি সম্পূর্ণ এবং পূর্ণাঙ্গ কিতাব বেহেশত থেকে সরাসরি নবীদের নিকট প্রেরণ করেছেন। কিন্তু উভয় কিতাবের পিছনে বিভিন্ন ধাপ ছিলঃ

১। মৌখিক/বাচনিক ধাপ (১ম-প্রজন্ম উম্মতের দ্বারা সংরক্ষিত)২। বর্তমান-লুপ্ত মূল লিখিত দলীল (১ম-প্রজন্ম উম্মতের দ্বারা সংরক্ষিত)৩। বিদ্যমান আংশিক লিখিত পাণ্ডুলিপি (২য়-প্রজন্ম উম্মতের লেখায়)

৪। বিদ্যমান পূর্ণাঙ্গ লিখিত পাণ্ডুলিপি (২য়,৩য় ও ৪র্থ-প্রজন্ম উম্মতের লেখায়)

শুরুতে আমরা কোরআন শরীফের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস দৃষ্টিপাত করে সেটা ইঞ্জিলের ইতিহাসের সঙ্গে তুলনা করি।

একটি টাইমলাইনে ইঞ্জিল এবং কোরআনের সংকলনের ইতিহাস তুলনা করা যায়:

History of the Qur'ān and Bible Manuscripts
আরও পড়ুন:

 


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ: