গীতসংহিতার লেখক
গীতসংহিতা পুস্তকটির লেখক কারা?দাউদ ও সলোমন এর লেখক এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে?
গীতসংহিতা পুস্তকের লেখক মূলত দাউদ (৭৬টি), আসফ (১২টি), কারুনের বংশের (১২টি), মূসা (১টি), ইষ্রাহীয় এথন (১টি), ইষ্রাহীয় হেমন (১টি), ও অন্যান্য নামহীন ৪৬টি। সোলায়মান জবুরের কিছু লিখেননি; তিনি মেসাল কিতাব লিখেছেন। ঐতিহাসিক প্রমাণ বলতে ডেড সি স্ক্রোলের আগে কেউ কেউ মনে করতো যে সেই লেখকের নামগুলো হয়তো আগে মূলে ছিল না, কিন্তু ডেড সি স্ক্রোলে প্রমাণ হলো যে জবুর শরিফের সেই নাম দিয়ে আখ্যায়িত ছিল প্রথম থেকেই। দাউদ যে সেই জবুর শরীফের বেশির ভাগ কাওয়ালী লিখেছে সেটা ঈসা মসীহ বলেছে, কোরআনও বলেছে, এবং এর বিপরীতে এরা কিছু বলেন নি, তাই আমরা যদি তাদের কথা বিশ্বাস করি তাহলে জবুর শরিফের সততাও বিশ্বাস করতে হয়।
…
বাইবেলে থাকার মাপকাঠি
সমালোচকের এই মতামত দিয়েছে:
Dead Sea Scroll যদি এতই “সহীহ” হয়, তাহলে ওখানে যেসব বই আছে, এর সবগুলো বাইবেলে নাই কেন? ওখানকার book of Enoch, book of Jubilees এগুলো এখনকার বাইবেলে নাই কেন?
এই লেখক সম্ভবত বুঝতে পারেন নি যে ডেড সি স্ক্রল একটি বই না বরং একটি গুহার মধ্যে বই (স্ক্রল) এর ভাণ্ডার। প্রাচীনকালে স্ক্রলের দৈর্ঘ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে পুরো পুরাতন নিয়ম একটি স্ক্রলে লেখা যেতো না, বরং ~২০ আলাদা স্ক্রলে লেখা হতো। পিরাতন নিয়মের স্ক্রলের পাশাপাশি অবশ্য অন্য সাহিত্য ও ধর্মীয় লেখালেখি ছিল, তাতে সমস্যা কি?…
হযরত পৌল এবং ইয়াকুব বিপরীত নয়?
ইয়াকুব—“নাজাতের ব্যাপারে হযরত পৌল এবং ইয়াকুব বিপরীত নয়?”
নাজাত আসে কাজের মাধ্যমে না ঈমানের মাধ্যমে? কিছু সমালোচক হযরত পৌল এবং ইয়াকুবের বিশেষ কিছু আয়াত নিয়ে দাবী করেন যে প্রথম ঈসায়ী নেতাদের মধ্যে এই ব্যাপারে অনেক অমিল ছিল। কিন্তু ইঞ্জিল শরীফ ভালভাবে জানলে এই যুক্তি ভেঙ্গে যায়। হযরত পৌল এবং ইয়াকুবের সুসংবাদ বাণী এক ছিল, যদিও এরা শ্রোতাদের প্রয়োজন অনুসারে সুসংবাদের আলাদা অংশের উপর জোর দিতেন। তারা উভয় এই মূল বাণী বিশ্বাস করতেন:
শরিয়ত ভাল, কিন্তু তার মাধ্যমে কখনও নাজাত অর্জন করা সম্ভব না, যেহেতু মানুষ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তা পালন করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ্ তার নাজাত এবং প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা প্রকাশ করেছেন—ঈসা মসীহ্। এই বিনামূল্য দান আল্লাহ্র কাছে গ্রহণ করতে হবে ঈমান দিয়ে, তওবা দিয়ে এবং তার উম্মত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ভাল কাজ (শরিয়ত পালন) হচ্ছে প্রকৃত ঈমানের চিহ্ন বা ফলাফল। একজনের “ঈমান”-এর ফলে যদি ভাল কাজ না আসে তাহলে বোঝা যায় এটি সত্যিকারের ঈমান ছিল না (এবং সেই ব্যক্তির নাজাত হবে না)। তাই ঈমান এবং কাজ দু’টোই প্রয়োজন, কিন্তু ঈমান হচ্ছে ভিত্তি।
পৌল এবং ইয়াকুব দু’জনেরই লেখাগুলি উপরোক্ত বাণীর সঙ্গে মিলে যায়। হযরত পৌল কি সত্যি শরিয়তকে “ঘৃণা” করেছিলেন যেমন করে সমালোচকরা দাবী করেন?…
মার্ক ১৬:৯-২০ – মূল ইঞ্জিলে কি ছিল?
মার্ক ১৬:৯-২০—“এই অনুচ্ছেদ যেহেতু সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোতে ছিল না, সেহেতু ইঞ্জিল শরীফ কীভাবে নির্ভরযোগ্য হতে পারে?”
ইঞ্জিলের সমালোচকগণ প্রায়ই মার্ক ১৬:৯-২০ এবং ইউহোন্না ৮:১-১১ দিয়ে “প্রমাণ” করেন যে বাইবেল পরিবর্তিত এবং অনির্ভরযোগ্য, যেহেতু ইঞ্জিলের কিছু কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে এই দুই অনুচ্ছেদ বাদ থাকে। কিন্তু মার্ক ১৬:৯-২০ যে মূল লেখার মধ্যে ছিল তা বিশ্বাস করার অনেক কারণ রয়েছে, কারণ অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপির মধ্যে তা রয়েছে এবং প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের নেতা ইরেন্যাউস( মৃঃ ২০০) এর উল্লেখ করেছেন। এই অনুচ্ছদ বাদে মার্ক খণ্ডটি অস্বাভাবিকভাবে শেষ হত, বরং এই অনুচ্ছেদ দিয়ে তা স্বাভাবিকভাবে সমাপ্ত হয়। আবার মার্ক ১৬:৯-২০ ও ইউহোন্না ৮:১-১১ অনুচ্ছেদগুলি গোটা ইঞ্জিলের তুলনায় যথার্থ গুরুত্ব দিতে হয়-পুরো কিতাবুল মোকাদ্দসে মাত্র এই দুই সামান্য অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, যেগুলো হচ্ছে কিতাবুল মোকাদ্দসের শতকরা ০.০০০৭% ভাগ মাত্র।
একই সমালোচকগণ প্রায়ই অবহেলা করেন যে কোরআন শরীফ নিয়েও তেমন ধরণের প্রশ্ন রয়েছে। নবীজী ইবনে মাসউদকে একজন শ্রেষ্ঠ কোর’আন পাঠক বলতেনঃ
আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী(স)-কে বলতে শুনেছি, চার ব্যক্তির নিকট থেকে তোমরা কোরআনের পাঠ গ্রহণ করঃ (১) ইবনে মাসউদ (২) আবু হুযাইফার মুক্ত গোলাম সালিম (৩) উবাই (ইবনে কা’ব) ও (৪) মুয়ায ইবনে জাবাল।” (সহীহ আল-বোখারী, ৩৫২৪ (জামে’ সহীহ্ আল-বোখারী অনুবাদ মাওলানা মোবারক করীম জওহর, খান ব্রাদার্স আণ্ড কোম্পানি, ৯ বাংলাবাজার ১১০০; ঢাকা ২০০৮, পৃষ্ঠা ৬৪৩)
এই ইবনে মাসউদ সূরা ফাতেহা, সূরা আল-ফালাক, এবং সূরা আন-নাস কোরআনের অংশ হিসেবে তিনি গ্রহণ করেননি। অপর দিকে, উপরোক্ত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর মুসহাফে দু’টি বাড়তি সূরা ছিল—সূরা আল-হাফ্দ এবং সূরা আল-খাল’:
সূরা আল-হাফ্দ
সূরা আল-খাল
হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর মুসহাফের সূরা আল-হাফ্দ এবং সূরা আল-খাল
(বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত)
আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের কথা অনুযায়ী, আলী ইবন আবি তালিবের কোরআনের মধ্যে “আল-খাফ্ধ” নামক একটি বাড়তি সূরা ছিল, যেটা আজকাল কোরআনে নাই। আবার বিভিন্ন শি’য়া উলেমাদের কথা অনুযায়ী, হযরত উসমান কোরআন শরীফ থেকে “সূরা উলায়াহ্” এবং “সূরা নুরাইন” নামক দু’টি সূরা বাদ দিয়েছেন।
হয়ত এইজন্য ‘আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘ওমর (মৃঃ৬৯২) বলেছেন, “কেউ না বলুক, ‘আমি পুরো কোরআন শিখেছি!’…
মথি ৯:৯ – মথি কি সত্যই মথি কিতাবের লেখক ছিলেন?
মথি ৯:৯—“মথি কি সত্যই মথি কিতাবের লেখক ছিলেন?”
কিছু কিছু সমালোচক দাবী করেছেন যে, যেহেতু তৃতীয় ব্যক্তির মত মথির নামে উল্লেখ করা আছে, সেহেতু মথি এই লেখার লেখক হতে পারে না:
“ঈসা যখন সেখান থেকে চল যাচ্ছিলেন তখন পথে মথি নামে একজন লোককে খাজনা আদায় করবার ঘরে বসে থাকতে দেখলেন। ঈসা তাঁকে বললেন, “এস, আমার উম্মত হও।” মথি তখনই উঠে তাঁর সংগে গেলেন।” (মথি ৯:৯)
এটা অত্যন্ত দুর্বল একটি যুক্তি। একটা ঐতিহাসিক দলীল লিখতে গিয়ে, নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা অসাধারণ বিষয় নয়। একই দুর্বল যুক্তি অনুযায়ী, কোনআন শরীফ আল্লাহ্র বাণী হতে পারে না কারণ তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে তাঁর নাম লেখা হয়েছে:
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ
হুয়াল্লাহুল-লাথী লা ইলাহা ইল্লাহুয়া
“তিনি আল্লাহ্, তাহাকে ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই”
(সূরা ৫৯:২২)
প্রাচীন ঈসায়ী দলীলের সাক্ষ্য একবাক্যে বলেন যে ঈসার ১২জন সাহাবীর মধ্যে সাহাবী মথি এই “মথির সুখবর” লিখেছিলেন। এর বিপরীতে কোন সাক্ষ্য নেই। ইঞ্জিল শরীফের বিরুদ্ধে এই দুর্বল যুক্তির ভিত্তিতে রয়েছে কেবল অনুমান।
…
ইয়ারমিয়া ৮:৮ – তাওরাত শরীফ কি পরিবর্তন হয়েছিল।?
ইয়ারমিয়া ৮:৮—“এই আয়াত প্রমাণ করে যে তাওরাত শরীফ পরিবর্তন হয়েছিল।”
“তোমরা কেমন করে বল, ‘আমরা জ্ঞানী এবং মাবুদের শরীয়ত আমাদের কাছে আছে।’ আসলে আলেমেরা শরীয়ত ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে মিথ্যা কথা লিখেছে।”
(ইয়ারমিয়া ৮:৮)
এখানে মূসার শরীয়ত পরিবর্তন করার কথা বলা হয় নি বরং আলেমগণ শরীয়তের ব্যাখ্যা (তাফসীর) ভুলভাবে প্রচার করছে। ইয়ারমিয়া অবশ্যই শরীয়তের নির্ভরযোগ্যতা সন্দেহ করেনি, কারণ তিনি বলেছিলেন:
“তুমি তাদের এই কথা বলবে যে, মাবুদ বলছেন,
‘তোমরা এতদিন আমার কথা শোন নি এবং
তোমাদের সামনে আমি যে শরীয়ত রেখেছি তা পালন কর নি” (ইয়ারমিয়া ২৬:৪)
বনি-ইসরাইলদের কাছে হযরত ইয়ারমিয়ার মূল বাণী ছিল এই—“তোমরা মূসার শরীয়তের কাছে ফিরে আস”। তাদের শরীয়ত যদি বিকৃত ও পরিবর্তিত হত, তাহলে তিনি অবশ্যই সেটা পালন করতে বলেনি।
তাহলে কোন ধরণের ভুল ব্যাখ্যার কথা ৮:৮-এ বলা হচ্ছে?…
ইঞ্জিল কীভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল?
“কোরআন অনুযায়ী, ইঞ্জিল ঈসা মসীহ্র কাছে “নাজিল” হয়েছিল, কিন্তু বর্তমান ইঞ্জিল সাহাবীরাই লিখেছিলেন”
“নাজিল” কথাটির মানে এই না যে জিনিসটা বেহেশত থেকে পড়ে গিয়েছিল বা একজন নবীর হাতে দেওয়া হয়েছিল, বরং “নাজিল” দিয়ে আল্লাহ্র একটি উপহার বোঝায়। যেমন কোরআন শরীফে বলা হয় যে আল্লাহ্ মানব জাতির কাছে লৌহ “নাজিল” করেছিলেন:
“আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী” (সূরা হাদীদ ৫৭:২৫)
তার মানে কি এই, যে একজন নবীর হাতের মাধ্যমে আমরা লৌহ পেয়েছিলাম?…
সূরা মায়িদা ৫:৪৬ আয়াত- পথের নির্দেশ ও আলো ‘ছিল’ নাকি ‘আছে’?
“কোরআনের সূরা মায়িদা ৫:৪৬ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘উহাতে (ইঞ্জিলে) ছিল পথের নির্দেশ ও আলো’ (অতীত কাল)।”
এই দাবীটি আরবী পাঠের ভ্রান্ত-বোধভিত্তিক। আরবী বাক্যাংশটি হচ্ছে,“الإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ; আল ইনজিলা ফিইহি হুদায় ওয়া নূর, আক্ষরিকভাবে অনুবাদ হচ্ছে, “…এতে পথনির্দেশ ও আলো…” এখানে কোন ক্রিয়াপদ নেই, কিন্তু এতে বর্তমান কাল প্রকাশ করছে। আরবী ভাষায় বর্তমানকালের সংযোজক বাক্যে ‘হওয়া’ (‘কানা’) ক্রিয়াপদের দরকার হয় না, অনেকটা বাংলার মতন। প্রসঙ্গ অনুসারেই কাল বুঝে নিতে হয়। বিখ্যাত বাঙালি লেখক ডা.…
“প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের মধ্যে কি অনেক বিবাদ ও দ্বন্দ্ব ছিল?”
“প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের মধ্যে অনেক বিবাদ ও দ্বন্দ্ব ছিল, তাই কার বাণী বেরিয়ে এসেছে সেটা জানা কঠিন”
ইসলামী ইতিহাসের তুলনায়, প্রথম ঈসায়ী জামাতের মধ্যে অনেক বেশী একতা ও শান্তি ছিল। হযরত মুহাম্মদের মৃত্যুর পর থেকে বিভিন্ন মুসলমান দলের মধ্যে প্রায় অনবরত যুদ্ধ হচ্ছিল। নবীজীর ইন্তেকালের ২৫ বছর পর তাঁর বিধবা বিবি আয়েশার দল হযরত আলীর দলের বিরুদ্ধে বিখ্যাত ‘উটের যুদ্ধ’ চালালো এবং পরাজিত হল। ২৩ হিজরিতে ফিরোজ আবু লুলু নামক একজন পারস্য গোলাম খলিফা ওমর (রা)-কে ছুরিকাঘাত করেছেন। ৩৫ হিজরিতে অনেক অসন্তুষ্ট মুসলমান দল হযরত উসমান (রা)-এর ঘর অবরোধ করে তরবারি দ্বারা তাকে হত্যা করল। ৪০ হিজরিতে অন্য এক মুসলিম দল হযরত আলী (রা)-কে ছুরিকাঘাত করেছিল। ৬১ হিজরিতে উমাইয়া বংশের মুসলমানেরা এবং কুরাইশ বংশের মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল এবং ইয়াযিদের নেতৃত্বে নবীজী (স)-র গোষ্ঠী পরাজিত হল। তারপরও অন্যান্য দলের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল যেমন মুসায়লিমা যিনি হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুয়াত গ্রহণ করলেন কিন্তু নিজেকে একজন নবী বলে দাবি করলেন। ১১ হিজরিতে ইয়ামামা যুদ্ধে এই মুসায়লিমার দশ হাজার সৈন্যের বাহিনী নবীজীর দল প্রায় পরাজিত করেছিলেন।
এর তুলনায়, ঈসা মসীহ্র প্রথম অনুসারীদের সমাজের প্রথম ২৫০ বছর ধরে কোন যুদ্ধও হয় নি, কোন রাজনীতিও হয় নি, কোন মারামারিও হয় নি। সাহাবীদের যুগে তাদের মধ্যে আবার বড় ধরণের কোন বিবাদও দেখা দেয় নি। তারা একই মূল সুসংবাদের বাণী গ্রহণ করলেন, যেমন ইতিহাস প্রমাণ করে।
…
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চার্চ কি বাইবেল পরিবর্তন করেছে?
“রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চার্চ কি বাইবেল পরিবর্তন করতে পারেনি?”
সমালোচকরা দাবি করেন যে ইউরোপীয় চার্চ যেহেতু রাজনৈতিক প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত ছিল, সেহেতু এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারা বাইবেল পরিবর্তন করতেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা অবশ্য ধর্মীয় নেতৃত্বের জন্য খুব ক্ষতিকর, কিন্তু ইতিহাসের আলোকে এই অভিযোগ আসলে অসম্ভব।
হযরত ঈসা মসীহ্র পর প্রথম তিন শতাব্দী ধরে (৩১১খ্রীঃ পর্যন্ত), পৌত্তলিক রোমীয় সাম্রাজ্যে খ্রীষ্টধর্ম একটি নিষিদ্ধ ধর্ম ছিল। ঈসায়ী আন্দোলন প্রথম তিন শতাব্দী ধরে খুব অত্যাচারিত এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন ছিল। খ্রীষ্টাব্দ ৩১১ সালে রোমীয় শাসক কন্স্টান্টাইন খ্রীষ্টধর্মকে বৈধ করলেন এবং তার পর থেকে চার্চ ক্রমাগত একটি রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান হয়ে গেল। চার্চের উপর রাজনৈতিক প্রভাব শুরু হল ৩২৫ সালের নিসিয়া মহাসভা (Nicene Council)।
কিন্তু এই ৩১১ খ্রীষ্টাব্দ রাজনৈতিক প্রভাবের অনেক আগে থেকেই ইঞ্জিল শরীফ এবং ঈসায়ী শিক্ষার জন্য আমাদের বহু পাণ্ডুলিপির প্রমাণ আছে যে তখনকার বাণী এবং এখনকার বাণী এক। উদাহরণস্বরূপ, ২০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে আমাদের প্যাপিরাসে লেখা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি আছে লূক, ইউহোন্না এবং হযরত পৌলের ১০টি চিঠির জন্য, এবং ঈসায়ী নেতা তের্তুল্লিয়ান ইঞ্জিল থেকে ৩,৮০০ উদ্ধৃতি দিয়েছে ২০০ সালে। তেমনই ৩১১ খ্রীষ্টাব্দের আগে থেকেই আমাদের কাছে অনেক ইঞ্জিলের খণ্ডের তালিকা আছে প্রত্যেকের মধ্যে চারটা সুখবর (মথি, মার্ক, লূক, ইউহোন্না) রয়েছে এবং এই চারটা ছাড়া অন্য কোন সমাচারের উল্লেখ নেই। তাই চার্চ রাজনীতির মধ্যে ঢুকবার আগে থেকে ইঞ্জিলের নির্ভরযোগ্যতার জন্যে যথেষ্ট প্রমাণ আছে।
৩১১ সালের আগে ঈসায়ী জামাত পুরোপুরিভাবে রাজনীতিমুক্ত ছিল, অর্থাৎ ঈসায়ী হওয়ার জন্য কোন রকম দুনিয়াবী লাভ ছিল না বরং শুধু তার বিপরীত—সামাজিক চাপ, অত্যাচার এবং কষ্ট। ইসলামের প্রথম দুই শত বছর ঠিক তার বিপরীত ছিল, কারণ তখনকার ধর্মীয় নেতা পাশাপাশি সম্রাট বা ইসলামি সাম্রাজ্যের খলিফা ছিল। ইসলামের প্রথম যুগের অধিকাংশ যুদ্ধ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে হয়েছিল (যেমন রিদ্দা যুদ্ধগুলো)। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী এই সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জাল হাদিস লেখা হত। কিছু ক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর সবচেয়ে কাছের আত্মীয় এবং সাহাবীরা হারিয়ে গেল, যেমন কারবালাতে, অথবা যখন হযরত উসমান ইবন মাসঊদ এবং উবায় ইবন কা’বের কোরআন ধ্বংস করার হুকুম দিলেন।
(এই বিষয়ে আরও দেখুন ‘প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের মধ্যে অনেক বিবাদ ও দ্বন্দ্ব ছিল?’…