মথি ১:১৬ – মরিয়মের পিতা কি ইয়াকুব নাকি আলী?

মথি ১:১৬—“ঈসার মা মরিয়মের স্বামী ইউসুফের পিতা কি ইয়াকুব (মথি ১:১৬) নাকি আলী (লূক ৩:২৩)?

একটি সাধারণ ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মথিতে ঈসার আইনগত বংশতালিকা তার পিতা ইউসুফের মাধ্যমে, এবং লূকে ঈসার জন্মগত বংশতালিকা তার মা মরিয়মের মাধ্যমে আছে। তাহলে একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন হল, “তাহলে কেন লূকের বংশতালিকায় ‘মরিয়ম আলীর ছেলে’ লেখা হয়নি বরং লেখা আছে ‘ ইউসুফ আলীর ছেলে’?”।…

পৃথিবীর কি ধ্বংস হবে নাকি চিরকাল থাকবে?

জবুর ১০২:২৬—“এখানে বলা হয়েছে যে পৃথিবী ধ্বংস হবে না, কিন্তু জবুর ৭৮:৬৯ তার বিপরীত কথা লেখা আছ।”

অভিযোগটা হল যে জবুর ১০২:২৬ এবং ইবরানী ১:১১ বলা হয়েছে যে আসমান জমীন ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু হেদায়েতকারী ১:৪ এবং ৭৮:৬৯ আয়াতে বলা হয়েছে যে দুনিয়া চিরকাল থাকবে। কেমন করে দু’টোই ঠিক হতে পারে?…

উযায়ের এবং নহিমিয়ার তালিকার মোট সংখ্যা

উযায়ের ২:৬৪—“উযায়ের ২:৬৪ এবং নহিমিয়া ৭:৬৬ উভয়ই বলে যে মোট সংখ্যা ছিল ৪২,৩৬০, কিন্তু সংখ্যাগুলো যোগ করলে উযায়েরে হয় ২৯,৮১৮ এবং নহিমিয়ায় ৩১,০৮৯।”

[As stated above, Nehemiah is simply recording faithfully the numbers he found written on some genealogical register, not vouching for their accuracy ( .”.I

উযায়ের ২ অধ্যায় এবং নহিমিয়া ৭ অধ্যায়ে নির্বাসিত লোকদের সংখ্যা

উযায়ের ২ অধ্যায়—“নির্বাসিত লোকদের সংখ্যা নহিমিয়ায় ঠিক নাকি উযায়েরে ঠিক?”

এই প্রশ্নটি কিতাবের পরস্পরবিরোধিতা নয়, বরং সমালোচনাকারীর অজ্ঞতা প্রকাশ করে।

প্রথমতঃ উযায়ের যথার্থ হিসাবের দাবি করেছেন (“…তাদের সংখ্যা এই” – উযায়ের ২:২), কিন্তু নহিমিয়া এমন কোন দাবি করেন নি, বরং তিনি শুধু একটি তালিকায় যা দেখেছেন তাই বিশ্বস্তভাবে লিপিবদ্ধ করছেন (“…যারা প্রথমে ফিরে এসেছিল সেই লোকদের বংশ-তালিকা পেলাম। সেখানে যা লেখা ছিল তা এই:…” – নহিমিয়া ৭:৫)। তিনি কখনও এই তালিকার নির্ভরযোগ্যতা দাবি করেনি, বরং একজন ভাল ঐতিহাসিক হিসেবে ঐতিহাসিক দলিল লিপিবদ্ধ করেছেন।

দ্বিতীয়তঃ ঘটনার পটভূমি থেকে জানা যায় যে হযরত উযায়েরের তালিকা গণনা হয়েছে জেরুজালেমে যাবার আগেই যখন তারা সবাই ব্যাবিলনে ছিলেন (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫০ দশকে), কিন্তু হযরত নহিমিয়ার তালিকা লেখা হয়েছে জেরুজালেমে পৌঁছানোর কয়েক বছর পরে (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৪৫ দশকে)। সম্ভবত সফরের সময়ে একটি চলমান তালিকা ছিল যেটা বার বার সংস্কার করা হত। দলের মধ্যে কেউ মারা গেলে বা ব্যাবিলনে ফিরে গেলে, বা নতুন কেউ দলে যোগ দিলে তালিকাটা পরিবর্তন করা হত। তাই উযায়েরের তালিকা হচ্ছে এই চলমান তালিকার শুরুর একটি সঠিক কপি, আর নহিমিয়ার তালিকা হচ্ছে সফরের শেষে তালিকার সঠিক লিপি।

দুই তালিকার মধ্যে নামের অমিল থাকা স্বাভাবিক। হিব্রু এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতিতে একজনের ২ বা ৩টি নাম থাকত। তাই “হারীফ”-কে (নহিমিয়া ৭:২৪) উযায়েরে বলা হয় “যোরাহ্‌” (উযায়ের ২:১৮), এবং “সীয়”-কে (নহিমিয়া ৭:৪৭) উযায়েরে বলা হয়েছে “সীয়হা” (উযায়ের ২:৪৪)।

উযায়ের ২:৬৪—“উযায়ের ২:৬৪ এবং নহিমিয়া ৭:৬৬ উভয়ই বলে যে মোট সংখ্যা ছিল ৪২,৩৬০, কিন্তু সংখ্যাগুলো যোগ করলে উযায়েরে হয় ২৯,৮১৮ এবং নহিমিয়ায় ৩১,০৮৯।”

সহজ উত্তর হচ্ছে যে মোট সংখ্যায় নহিমিয়া তার তালিকায় বাড়তি ১১,২৭১ জনকে যোগ করেছিলেন এবং উযায়ের তার তালিকায় বাড়তি ১২,৫৪২ জনকে যোগ করেছিলেন। কোন না কোন কারণে, তারা এই বাড়তি লোকদের উল্লেখ করতে চান নি। মোট সংখ্যা যদি যোগফলের কম হত, তাহলেই সমস্যা হত, কিন্তু বেশী হলে সমস্যা নেই। হয়ত সেই বাড়তি ১২,৫৪২ জন হচ্ছে যারা ছেলে কিন্তু মোট হিসাবে ‘পুরুষ মানুষ’ হিসাবে গোণা হয়নি। আমরা জানি গোষ্ঠীর সংখ্যায় আছে শুধু ১২ বছর বয়সের উপর যারা। অন্য ব্যাখ্যাকারী বলেন যে এরা ছিলেন ইসরাইলের অন্যান্য গোষ্ঠীর লোক যারা দক্ষীণ এহুদা, বিনইয়ামীন ও লেবীয় রাজ্যের বাইরে ছিল, তাই এদের বিস্তারিত হিসাব দেওয়া হয়নি। তাদের পরিচয় যাই হোক, এদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য কোন না কোন কারণ নিশ্চয়ই ছিল।

২ খান্দাননামা ৩৬:৯ – যেহোয়াখীন ৮ নাকি ১৮ বছর বয়সে বাদশাহ্‌ হলেন?

২ খান্দাননামা ৩৬:৯—“এখানে বলা হয়েছে যে যেহোয়াখীন ৮ বছর বয়সে বাদশাহ্‌ হলেন, কিন্তু ২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৮ আয়াতে বলা হয়েছে তিনি ১৮ বছর বয়সে রাজা হলেন।”

এই প্রথম আয়াতের অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে (যেমন সেপ্টুয়াজিন্ট, সীরিয়, এবং একটী হিব্রু পাণ্ডুলিপিতে) আসলে “১৮” লেখা আছে, যেটা ২ বাদশাহ্‌নামার সঙ্গে মিলে যায়। এটা কিন্তু স্পষ্ট যে “১৮”তে “১” সংখ্যা বাদ দেওয়া একটি কপি করার ভুল ছিল, তাই অধিকাংশ অনুবাদ “১৮” সংখ্যাটা ব্যবহার করা হয়েছে।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

২ খান্দাননামা ২২:২ – বাদশাহ্‌ অহসিয় ৪২ বছর বয়সে নাকি ২২ বছর বয়সে বাদশাহ্‌ হলেন?

২ খান্দাননামা ২২:২—“বাদশাহ্‌ অহসিয় ৪২ বছর বয়সে নাকি ২২ বছর বয়সে (২ বাদশাহ্‌নামা ৮:২৬) বাদশাহ্‌ হলেন?”

কিছু কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে (সেপ্টুয়াজিন্ট এবং সীরিয়) লেখা আছে “২২”, যেটা ২ বাদশাহ্‌নামার সঙ্গে মিলে যায়; অন্য কিছু পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে “৪২”। এটা অবশ্যই একটি কপি করার ভুল।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

২ খান্দাননামা ২:২—“৩,৬০০ নাকি মাত্র ৩,৩০০ জন?”

২ খান্দাননামা ২:২—“এখানে বলা হয়েছে যে সোলায়মান ৩,৬০০ লোককে বাইতুল মোকাদ্দস তৈরির তদারক করার কাজে লাগালেন, কিন্তু ১ বাদশাহ্‌নামা ৫:১৬ অনুযায়ী মাত্র ৩,৩০০ জন।”

এটা বড় কোন সমস্যা না। সম্ভবত ৩,৩০০ জন প্রতিদিন কাজ করতেন, কিন্তু মোট ৩,৬০০ তদারক প্রস্তুত ছিল, অর্থাৎ ৩০০ জন অতিরিক্ত ছিল যদি কেউ অসুস্থ হয় বা মারা যায়। এত বড় একটি দলের ক্ষেত্রে অবশ্য অসুস্থতার জন্য হিসাব করতে হবে। কোরআন শরীফেও এই ধরণের সাংখ্যিক সমস্যা রয়েছে—সূরা আলে-‘ইমরান অনুযায়ী একাধিক ফেরেশতা মরিয়মের কাছে আসলেন, কিন্তু সূরা মরিয়ম ১৯:১৭-২১ অনুযায়ী একজন ফেরেশতা আসলেন। সূরা কামার ৫৪:১৯ অনুযায়ী আল্লাহ্‌ এক দিনে আদ জাতি ধ্বংস করলেন, কিন্তু সুরা হাক্কা ৬৯:৬-৭ অনুযায়ী দীর্ঘ ৮ দিনে হয়েছে। অর্থাৎ উভয় কিতাবে এই ধরণের জটিলতা রয়েছে।

১ বাদশাহ্‌নামা ১৫:৩৩ – বাদশাহ্‌ বাশা কোন সালে মারা গিয়েছিলেন?

১ বাদশাহ্‌নামা ১৫:৩৩—“এখানে বলা হয়েছে যে বাদশাহ্‌ আসার রাজত্বের ষড়বিংশ বছরে বাশা মারা গেলেন, কিন্তু ২ খান্দাননামা ১৬:১ অনুযায়ী তিনি ৩৬শ বছরে তিনি জীবিত ছিলেন।”

এখানে “রাজত্ব” এর মূল হিব্রু শব্দ হল מלכות “মাল্‌কুত”, যার অর্থ “রাজ্য”, শুধু “রাজত্বকাল” নয়। যদি আমরা এই অর্থে ব্যাখ্যা করি, তাহলে এখানে বাদশাহ আসার ব্যক্তিগত রাজত্বকাল বোঝানো হচ্ছে না বরং তার রাজ্যের শুরু থেকে, অর্থাৎ ইসরাইলীয় এবং ইহুদী রাজ্য যখন দু’ভাগ হয়ে গেল সেই সময় থেকে (৯৩০খ্রীষ্টপূর্ব)। এইভাবে হিসাব করলে ১ বাদশাহ্‌নামার সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মিলে যায়। অন্য কেউ কেউ মনে করেন এখানে একটি লিপিকরের ভুল দেখা যাচ্ছে, কারণ পুরাতন হিব্রু বর্ণমালায় ‘৩’ এবং ‘১’ নেক কাছাকাছি।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

 

  1. ১.

২ শামুয়েল ২৪:১৩ – সাত বছর দুর্ভিক্ষ নাকি মাত্র তিন বছর?

২ শামুয়েল ২৪:১৩—“এখানে বলা হয়েছে যে সাত বছর দুর্ভিক্ষ হবে, কিন্তু ১ খান্দাননামা ২১:১২ আয়াতে মাত্র তিন বছরের কথা বলা হয়েছে।”

কিছু কিছু প্রাচীন পান্ডুলিপিতে শামুয়েলে “তিন” আছে, অন্য পান্ডুলিপিতে “সাত” আছে। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেন যেহেতু প্রাচীন হিব্রু আব্জাদ সংখ্যায় ‘সাত’ (ז) এবং ‘তিন’ (ג) এর মধ্যে অনেক মিল আছে, সেহেতু লিপিকর ভুল করে ‘তিন’ এর বদলে ‘সাত’ লিখেছিলেন (কোরআন এবং কিতাবুল মোকাদ্দসে এই ধরনের ভিন্নপাঠের বিষয় আরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য নিচের লিংক দেখুন)। ‘তিন’ সঠিক হলে, অবশ্যই কোন অমিল নেই।

‘সাত’ সঠিক হলে, আমরা সহজে অনুমান করতে পারি যে ১ খান্দাননামাতে শুধু দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে তীব্র বছরের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু ২ শামুয়েলে সেই তিনটি কঠিন বছরের আগে ও পরের দুটো বছরের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যখন দুর্ভিক্ষটা শুরু হচ্ছিল এবং কমিয়ে যাচ্ছিল। কোরআন শরীফের ক্ষেত্রেও আমরা একই ধরনের জটিলতা দেখি— সূরা ক্বার ৫৪:১৯ অনুযায়ী আল্লাহ্‌ আদ সম্প্রদায়কে এক দিনে ধ্বংস করেছিলেন, কিন্তু সূরা হাক্কা ৬৯:৬-৭ আয়াত অনুযায়ী দীর্ঘ আট দিন লেগেছে। আমরা অনুমান করতে পারি যে আট দিনে তাদের ধ্বংস হয়েছিল কিন্তু বিশেষ করে এক দিনে সবচেয়ে কঠিন ধ্বংস চলচ্ছিল।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

 

২ শামুয়েল ২৪:৯ – ৫ নাকি ৪.৭ লক্ষ সৈন্য ?

২ শামুয়েল ২৪:৯—(দ্বিতীয় প্রশ্ন) “এখানে বলা হয়েছে এহুদার ৫ লক্ষ সৈন্য ছিল, কিন্তু ১ খান্দাননামা ২১:৫ আয়াতে ৪.৭ লক্ষ সৈন্য ছিল।”

১ খান্দাননামা ২১:৬ আয়াতে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে যে যোয়াব তার গণনা শেষ করতে পারেনি কারণ তিনি বিনয়ামীন এবং লেবীয় গোষ্ঠী গণনা করেননি। তাই কিছু কিছু সংখ্যাতে বিভিন্ন দল বা ঘোষ্ঠী বাদ দেওয়া হল অথবা যোগ দেওয়া হল। অন্য একটি আয়াতে (১ খান্দাননামা ২৭:২৩-২৪) বলা হয়েছে যে দাউদ বিশ বছরের কম বয়সে কোন ছেলের হিসাব করেননি, এবং যে যোয়াবের গণনা অসমাপ্ত বলে বাদশাহ্‌ দাউদের ইতিহাস বইয়ে কোন সংখ্যা দেওয়া হয়নি।

কোরআনের সূরা নিসা ৪:১১-২ এবং ১৭৬ আয়াতের উত্তরাধিকার নিয়মের মধ্যে একই রকমের সংখ্যার জটিলতা পাওয়া যায়। যখন একজন মানুষ মারা গিয়ে তিনটি মেয়ে, তার বাবা-মা এবং স্ত্রী রেখে যায়, সম্পত্তির ২/৩ ভাগ পাবে তাঁর মেয়েরা, ১/৩ ভাগ পাবে তাঁর বাবা-মা (১১ আয়াত অনুযায়ী), এবং ১/৮ ভাগ পাবে তাঁর স্ত্রী (১২ আয়াত অনুযায়ী); যোগ করলে সেই ব্যক্তির সম্পত্তির বেশী হয়ে যায়। দ্বিতীয় উদাহরণ— একজন তার মা, স্ত্রী এবং দুই বোন রেখে মারা গেলে, তাঁর মা পাবে সম্পত্তির ১/৩ ভাগ (১১ আয়াত), স্ত্রী পাবে ১/৪ ভাগ (১২ আয়াত), এবং দুই বোন পাবে ২/৩ ভাগ (১৭৬ আয়াত), আবার সেটা হয় সম্পত্তির ১৫/১২ ভাগ। মূল কথা, কিতাবুল মোকাদ্দস এবং কোরআন উভয় গ্রন্থে আপাত দৃষ্টিতে এই রকম সাংখ্যিক জটিলতা আছে, কিন্তু একটু গভীরে গেলে অনেক ক্ষেত্রে সমাধান পাওয়া যায়।