লূক ৩:৩৫-৩৬—“কীনান নাকি আরফাখশাদ?”

লূক ৩:৩৫-৩৬—“শালেখের আব্বা কীনান (লূক ৩:৩৫) নাকি আরফাখশাদ (পয়দায়েশ ১১:১২)?”

এটা দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। অনেকে বলেন যে পয়দায়েশে “জন্ম দেওয়া” এবং “পিতা” বোঝাতে হয় শুধু পিতা নয় বরং পিতার পিতা বা দাদা, এবং তাই কীনান ছিলেন শালেখের পিতা এবং আরফাখশাদ ছিলেন এর দাদা। এর সমর্থনে তওরাতের গ্রীক পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী আরফাখশাদের বয়স ১৩৫ বছর ছিল যখন শালেখের জন্ম হয়।

আবার অনেকে বলেন যে লূক কিতাবের সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপির মত বাড়তি কীনান দেওয়া উচিত না। এর সমর্থনে ঐতিহাসিক ফ্লাভিয়ুস যোসেফুস এবং জুলিয়স আফ্রিকানুস তাদের বংশতালিকায় দ্বিতীয় কীনান বাদ দিয়েছেন। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, একজন প্রাচীন লেখক কিতাবের অনুলিপি করতে গিয়ে ভুল করে কীনানের নাম দুই বার লিখেছেন।

    ১.

লূক ১:৩২ – মসীহ্‌ কি দাউদের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী?

লূক ১:৩২—“এই আয়াতের কথায়, ঈসা মসীহ্‌ ছিলেন বাদশাহ্‌ দাউদের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী, কিন্তু ঈসা মসীহ্‌র পুর্বপুরুষ যিকনিয় (মথি ১:১১) বংশধরের শেষ রাজা হয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন (ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০), তাই সেই সূত্র অবৈধ ।”

হযরত ঈসা মসীহ্‌র বংশ শুধু তার পিতা ইউসুফের মাধ্যমে নয় বরং তার মা মরিয়মের মধ্যেও (লূকের বংশতালিকা), এবং সেটা যিকনিয় ছাড়া অন্য এক লাইনে। আল্লাহ্‌র ফেরেশতা জিবরাইল আবার এই লাইনের বৈধতা সমর্থন করে বলেছেন: “মাবুদ আল্লাহ্ তাঁর পূর্বপুরুষ বাদশাহ্ দাউদের সিংহাসন তাঁকে দেবেন” (লূক ১:৩২)।

মার্ক ১৬:১৪-১৮ – প্রকৃত ঈসায়ী হওয়ার পরীক্ষা?

মার্ক ১৬:১৪-১৮—“এই আয়াতের পরীক্ষা অনুযায়ী, একজন প্রকৃত ঈসায়ী হতে হলে সব ভাষায় কথা বলতে হবে এবং বিষ খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে।”

ইঞ্জিলের সমালোচকগণ হযরত ঈসা মসীহ্র এই কথা ভুলব্যাখ্যা করে সেটাকে একটি পরীক্ষা বানিয়েছে – প্রকৃত ঈসায়ী হতে হলে, এই চ্যালেঞ্জে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু একই যুক্তি অনুযায়ী, মুসলমানদের জন্য তেমন একটা ‘পরীক্ষা’ রয়েছে – হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন, “যে চুপ থাকে সে নাজাত পায়।” – অর্থাৎ এই যুক্তিতে, যারা জীবনে একবারও মুখ খুলে, তারা জাহান্নামী। কিন্তু এই দুই ক্ষেত্রে আসল ব্যাখ্যা হচ্ছে যে প্রকৃত ঈমানদারের জীবনে এই ধরনের প্রবণতা বেশী দেখা যায় (চুপ থাকা, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা এবং বিষ খেয়ে বেঁচে থাকা)।

এই আয়াতে বলা হয়নি যে প্রত্যেক ঈমানদারের মধ্যে এই অলৌকিক গুণ সবসময় দেখা যাবে, বরং বলা হচ্ছে যে ঈমানদারদের মধ্যে এই চিহ্ন দেখা যাবে। এটা নিশ্চয় কোনো ‘falsification test’ (δοκιμάζω) নয়। তার সাহাবীদের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা হিসেবে ঈসা মসীহ্ এই কথা বলেছেন, যে শয়তান যাই করেন না কেন, তিনি ঈমানদারদের উপর জয়লাভ করবেন না। প্রথম ঈসায়ী জামাতের মধ্যে এই চিহ্ন দেখা দিয়েছে – হযরত পৌলকে একটি বিষাক্ত সাপ কামড়াল কিন্তু তার ক্ষতি হয়নি (প্রেরিত ২৮:৩-৯) এবং প্রথম জামাতের উদ্বোধনে ১২জন সাহাবী অলৌকিকভাবে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলছিলেন যখন পাক-রূহ্ তাদের উপর নেমে গেলেন। আমরা ইঞ্জিল শরীফ থেকে জানি যে বিভিন্ন ভাষা কথা বলার রূহানী দান সবাইকে দেওয়া হয়নি (১ করিন্থীয় ১২:১০); তেমনই ভাবে অন্যান্য চিহ্ন প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য নয়।

দ্বিতীয়ত, লোক দেখানোর জন্য আল্লাহ্ তাৎক্ষণিক কেরামতী করেন না। যখন মরুভূমিতে শয়তান হযরত ঈসার কাছে একটি “falsification test”-এর দাবী করলেন, ঈসা মসীহ্ কিতাবের তৌরাত শরীফের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে উত্তর দিলেন, “তোমার মাবুদ আল্লাহ্কে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।” (মথি ৪:৭; মথি ১৬:৪)। আবার ইহুদী নেতারা যখন ঈসাকে একটি চিহ্ন দেখাতে বলল, তিনি তাদের কোন চিহ্ন দেখাতে চাননি। তিনি অবশ্যই অনেক চিহ্ন দেখাতে পারতেন (এবং অন্যান্য সময়ে তিনি প্রায়ই কেরামতী কাজ করতেন), কিন্তু লোক দেখানোর চিহ্ন করেননা। তেমনভাবেও হযরত মুহাম্মদের সমালোচকগণ তাকে একটি কেরামতী কাজ দেখাতে বলল, কিন্তু তিনি কখন তা করেননি। ঈসা মসীহ্র শিক্ষা অনুযায়ী, কেরামতী কাজ দ্বারা ঈমানদার এবং অ-ঈমানদার বোঝা যায় না, কারণ—

“…অনেক ভণ্ড মসীহ্ ও ভণ্ড নবী আসবে এবং বড় বড় চিহ্ন-কাজ ও কুদরতি দেখাবে যাতে সম্ভব হলে আল্লাহ্‌র বাছাই করা বান্দাদেরও তারা ঠকাতে পারে।” (মথি ২৪:২৪)

অর্থাৎ ঈসা মসীহ্ এই ধরণের ঈমানের পরীক্ষা সমর্থন করেননি।

তৃতীয়তঃ, “নতুন ভাষা” এবং “সব ভাষা” এক না। মার্ক ১৬:১৭ আয়াতে “καιναι” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ “অজানা, নতুন”। অনেকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সেটা বোঝাচ্ছে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে তবলিগ করতে গিয়ে নতুন ভাষা শিক্ষার গুণ। অন্য ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটা হচ্ছে একটি পুরোপুরি রূহানিক দান বা ‘বেহেশতি ভাষা’ যা আল্লাহ্ দান করেন।

মার্ক ১৬:৯-২০ – মূল ইঞ্জিলে কি ছিল?

মার্ক ১৬:৯-২০—“এই অনুচ্ছেদ যেহেতু সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলোতে ছিল না, সেহেতু ইঞ্জিল শরীফ কীভাবে নির্ভরযোগ্য হতে পারে?”

ইঞ্জিলের সমালোচকগণ প্রায়ই মার্ক ১৬:৯-২০ এবং ইউহোন্না ৮:১-১১ দিয়ে “প্রমাণ” করেন যে বাইবেল পরিবর্তিত এবং অনির্ভরযোগ্য, যেহেতু ইঞ্জিলের কিছু কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে এই দুই অনুচ্ছেদ বাদ থাকে। কিন্তু মার্ক ১৬:৯-২০ যে মূল লেখার মধ্যে ছিল তা বিশ্বাস করার অনেক কারণ রয়েছে, কারণ অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপির মধ্যে তা রয়েছে এবং প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের নেতা ইরেন্যাউস( মৃঃ ২০০) এর উল্লেখ করেছেন। এই অনুচ্ছদ বাদে মার্ক খণ্ডটি অস্বাভাবিকভাবে শেষ হত, বরং এই অনুচ্ছেদ দিয়ে তা স্বাভাবিকভাবে সমাপ্ত হয়। আবার মার্ক ১৬:৯-২০ ও ইউহোন্না ৮:১-১১ অনুচ্ছেদগুলি গোটা ইঞ্জিলের তুলনায় যথার্থ গুরুত্ব দিতে হয়-পুরো কিতাবুল মোকাদ্দসে মাত্র এই দুই সামান্য অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, যেগুলো হচ্ছে কিতাবুল মোকাদ্দসের শতকরা ০.০০০৭% ভাগ মাত্র।

একই সমালোচকগণ প্রায়ই অবহেলা করেন যে কোরআন শরীফ নিয়েও তেমন ধরণের প্রশ্ন রয়েছে। নবীজী ইবনে মাসউদকে একজন শ্রেষ্ঠ কোর’আন পাঠক বলতেনঃ

আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী(স)-কে বলতে শুনেছি, চার ব্যক্তির নিকট থেকে তোমরা কোরআনের পাঠ গ্রহণ করঃ (১) ইবনে মাসউদ (২) আবু হুযাইফার মুক্ত গোলাম সালিম (৩) উবাই (ইবনে কা’ব) ও (৪) মুয়ায ইবনে জাবাল।” (সহীহ আল-বোখারী, ৩৫২৪ (জামে’ সহীহ্‌ আল-বোখারী অনুবাদ মাওলানা মোবারক করীম জওহর, খান ব্রাদার্স আণ্ড কোম্পানি, ৯ বাংলাবাজার ১১০০; ঢাকা ২০০৮, পৃষ্ঠা ৬৪৩)

এই ইবনে মাসউদ সূরা ফাতেহা, সূরা আল-ফালাক, এবং সূরা আন-নাস কোরআনের অংশ হিসেবে তিনি গ্রহণ করেননি। অপর দিকে, উপরোক্ত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর মুসহাফে দু’টি বাড়তি সূরা ছিল—সূরা আল-হাফ্‌দ এবং সূরা আল-খাল’:

Sura al-Hafd

সূরা আল-হাফ্দ

Sura al-Khal

সূরা আল-খাল

হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর মুসহাফের সূরা আল-হাফ্দ এবং সূরা আল-খাল
(বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত)
আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের কথা অনুযায়ী, আলী ইবন আবি তালিবের কোরআনের মধ্যে “আল-খাফ্‌ধ” নামক একটি বাড়তি সূরা ছিল, যেটা আজকাল কোরআনে নাই। আবার বিভিন্ন শি’য়া উলেমাদের কথা অনুযায়ী, হযরত উসমান কোরআন শরীফ থেকে “সূরা উলায়াহ্‌” এবং “সূরা নুরাইন” নামক দু’টি সূরা বাদ দিয়েছেন।

হয়ত এইজন্য ‘আব্দুল্লাহ্‌ ইবন ‘ওমর (মৃঃ৬৯২) বলেছেন, “কেউ না বলুক, ‘আমি পুরো কোরআন শিখেছি!’…

মথি ২৩:৯ – পিতার প্রতি অসম্মান?

মথি ২৩:৯—“এখানে ঈসা কি নিজের পিতাকে “পিতা” বলতে নিষেধ করছেন?”

এই আয়াত সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে প্রসঙ্গ ভালভাবে বুঝতে হবে। ঈসা মসীহ্ এই পুরো অনুচ্ছেদে ইহুদী আলেম ও ফরীশীদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, পারিবারিক সম্পর্কের কথা এখানে বলা হচ্ছে না। এখানে ঈসা ফরীশীদের বিভিন্ন অনুপযুক্ত গুরু-শিষ্য উপাধি মানা করেছিলেন। লম্বা লম্বা নাম দিয়ে ইহুদী ধর্মিয় নেতারা দুনিয়াবী সম্মান পেতে পছন্দ করতেন (আজকাল ইসলামী সমাজে একই রকম দুনিয়াবী সম্মানের ভালবাসা দেখা যায় – “মাহ্বুব-ই-খোদা আল-হজ্জ মাওলানা সূফী-সাধক হযরত…” ইত্যাদি ইত্যাদি)। তখনকার ইহুদী ফরীশীগণ “রাব্বী” (শিক্ষক) এবং “উস্তাদ” উপাধিগুলো ভালবাসতেন এবং তার সঙ্গে নিজেকে বানাতেন তাদের শিষ্যদের “পিতা”। এভাবে অন্য মানুষের কাছে আত্মসমর্পন করার বিরুদ্ধে ঈসা মসীহ্ নিজের অভ্যাস মত hyperbole ব্যবহার করেছিলেন। ঈসা মসীহ্ তার শ্রোতাদের সতর্ক করেছিলেন যে রূহানিক বিষয়ে কোন একজন সীমিত মানুষকে নিজের একমাত্র “উস্তাদ” বা “পিতা” বানানো উচিত না। ঈসা মসীহ্ বলেছিলেন যে ধর্মীয় নেতাদের কথা সবসময় বিনা প্রশ্নে মানা উচিত না বরং নিজেই কিতাব খুলে গবেষণা করা উচিত।

ধর্মীয় নেতার ক্ষেত্রে “পিতা” বললে তার কর্তৃত্ব অতিরিক্ত হয়ে যায়, কারণ ছোটবেলায় যেমন পিতার কথা বিনা প্রশ্নে মানতে হয়, তেমনভাবে ধর্মীয় নেতাদের কথা বিনা প্রশ্নে মানা উচিত নয়। এই পুরো অধ্যায়ের আলোকে বোঝা যায় যে এটাই হল ঈসার কথার সঠিক ব্যাখ্যা।

মথি ২১:১২ – ঈসা মসীহ্‌ কোন্‌ দিনে বাইতুল মোকাদ্দসে গিয়েছিলেন?

মথি ২১:১২—“ঈসা মসীহ্‌ কোন্‌ দিনে বাইতুল মোকাদ্দসে বিক্রেতাদের তাড়িয়ে দিলেন—জেরুজালেমে ঢুকবার প্রথম দিনে (মথি ২১:১২) নাকি দ্বিতীয় দিনে (মার্ক ১১:১-১৭)?” এবং ডুমুর গাছটি তিনি কখন ধমক দিলেন? (দেখুন মার্ক ১১:১২)”

ঘটনাগুলো এই ক্রমে ঘটেছে:

প্রথম দিনে : ঈসা মসীহ্‌ একটি গাধার পিঠে করে জেরুজালেমে প্রবেশ করলেন, অল্পক্ষণের জন্য বাইতুল মোকাদ্দসে গেলেন, এবং সন্ধ্যায় আবার বেথানিয়া গ্রামে ফিরে গেলেন।

দ্বিতীয় দিন : ঈসা মসীহ্‌ ভোরে উঠে জেরুজালেমে যাওয়ার পথে ডুমুর গাছটিকে ধমক দিলেন, এবং তারপর বাইতুল মোকাদ্দসে বিক্রেতাদের তাড়িয়ে দিলেন।

মার্ক এবং লূকে এটা বেশ পরিষ্কার, কিন্তু মথি তার লেখায় বাইতুল মোকাদ্দসের ঘটনা রাখলেন জেরুজালেম প্রবেশ এবং ডুমুর গাছের ঘটনাগুলোর মাঝখানে। মথিতে এইভাবে আছে কারণ এই সমাচারে ঘটনাগুলো সাজানো হয়েছে প্রধানত বিষয় অনুসারে, সময়ের ক্রম অনুসারে নয়। অন্যান্য অনেক প্রাচীন লেখায় এইভাবে করা হয়। ঈসা মসীহ্‌র জেরুজালেম প্রবেশ এবং বাইতুল মোকাদ্দস পরিষ্কার করার ঘটনাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মথি এখানে দেখাতে চাচ্ছিলেন, যার কারণে তিনি মাঝখান থেকে ডুমুর গাছের ঘটনা সরিয়ে দিলেন।

মথি ২১:৭ – কয়টা গাধা?

মথি ২১:৭—“ঈসা মসীহ্‌ কি একটা গাধা ও গাধীর বাচ্চার পিঠে করে জেরুজালেমে প্রবেশ করলেন নাকি শুধু একটি গাধা ছিল যেমন মার্ক ১১:৭ এবং লূক ১৯:৩৫-এ আছে?”

মার্ক এবং লূক শুধু উল্লেখ করেছেন যে গাধীর বাচ্চা উপর ঈসা চড়ল, কিন্তু মথি এ-ও উল্লেখ করেছিলেন যে সেই গাধীর বাচ্চা শান্ত রাখার জন্য তার মা সঙ্গে করে নিয়ে নেয়া হল। জাকারিয়া ৯:৯ এর ভবিষ্যদ্বানী পূরণ করার জন্য ঈসা মসীহ্ ইচ্ছাকৃতভাবে গাধীর বাচ্চার উপরে চড়ে আসলেন।

মথি ৯:৯ – মথি কি সত্যই মথি কিতাবের লেখক ছিলেন?

মথি ৯:৯—“মথি কি সত্যই মথি কিতাবের লেখক ছিলেন?”

কিছু কিছু সমালোচক দাবী করেছেন যে, যেহেতু তৃতীয় ব্যক্তির মত মথির নামে উল্লেখ করা আছে, সেহেতু মথি এই লেখার লেখক হতে পারে না:

“ঈসা যখন সেখান থেকে চল যাচ্ছিলেন তখন পথে মথি নামে একজন লোককে খাজনা আদায় করবার ঘরে বসে থাকতে দেখলেন। ঈসা তাঁকে বললেন, “এস, আমার উম্মত হও।” মথি তখনই উঠে তাঁর সংগে গেলেন।” (মথি ৯:৯)

এটা অত্যন্ত দুর্বল একটি যুক্তি। একটা ঐতিহাসিক দলীল লিখতে গিয়ে, নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা অসাধারণ বিষয় নয়। একই দুর্বল যুক্তি অনুযায়ী, কোনআন শরীফ আল্লাহ্‌র বাণী হতে পারে না কারণ তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে তাঁর নাম লেখা হয়েছে:

هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ
হুয়াল্লাহুল-লাথী লা ইলাহা ইল্লাহুয়া
“তিনি আল্লাহ্‌, তাহাকে ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নাই”
(সূরা ৫৯:২২)

প্রাচীন ঈসায়ী দলীলের সাক্ষ্য একবাক্যে বলেন যে ঈসার ১২জন সাহাবীর মধ্যে সাহাবী মথি এই “মথির সুখবর” লিখেছিলেন। এর বিপরীতে কোন সাক্ষ্য নেই। ইঞ্জিল শরীফের বিরুদ্ধে এই দুর্বল যুক্তির ভিত্তিতে রয়েছে কেবল অনুমান।

মথি ১৫:২৬ – বিদেশিনীকে ‘কুকুর’ বলা?

<h2 class=”objection”>মথি ১৫:২৬—“ঈসা মসীহ্‌ কেমন করে একজন বিদেশী মহিলাকে ‘কুকুর’ বলতে পারে?”</h2>
তখনকার সমাজে দুই ধরনের কুকুর ছিল—একটা খারাপ (বন্য ও নোংরা), আরেকটি ভাল যারা মেষ দেখাশোনা করতে খুব গুণী ছিল। ইহুদীরা প্রায়ই অ-ইহুদীদের গালি হিসেবে “κύων” (কুওন) বলতেন, যাকে দিয়ে বোঝানো হত রাস্তার নোংরা কুকুর। কিন্তু এখানে মসীহ্ সেই সব্দ ব্যবহার করেননি, তিনি বলেছিলেন “κυνάριον” (কুনারিওন) অর্থাৎ গৃহপালিত বাচ্চা-কুকুর যারা ঘরের মধ্যে থাকত, সম্ভবত মেষ-পালকদের বাসায়। বাংলায় যেমন “অমুক প্রাণীর-বাচ্চা” একটি গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, গ্রীক ভাষায় কিন্তু সেরকম অর্থ নেই, “বাচ্চা-প্রাণী” একটি আদরের ডাক হিসেবে ব্যবহার করা হত। যদি এটা একটি গালি হত, তাহলে মহিলাটি অবশ্য রেগে যেত বা চলে যেত; কিন্তু এই কথা শুনবার পরেও তিনি ঈসার সাহায্য চেয়েছিলেন, এবং শেষ ঈসা মসীহ্ মহিলাটির ঈমান প্রশংসা করেছিলেন।<p>
এখানে ঈসার পুরো গল্প দেখতে হবে—তিনি বাড়ীর বিভিন্ন ভাগ (মালিক, সন্তান, গৃহপালিত পশু, ইত্যাদি) দিয়ে বোঝাচ্ছে যে তার তবলিগ কাজের ক্ষেত্রেও প্রথমত ইহুদীদের কাছে তার প্রচার করার দায়িত্ব ছিল। <p>
কোরআন শরীফও বিভিন্ন খারাপ জাতি বা মানুষকে পশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়—“কুকুর” (৭:১৭৫-১৭৭), “পশু” (৮:২২,২৫), এবং “গাধা” (৬২:৫)।

মথি ১৬:১৭ – বেহেশত নাকি আন্দ্রিয়?

<h2 class=”objection”>মথি ১৬:১৭—“শিমোন পিতর কিভাবে জানতে পারলেন যে ঈসা ছিলেন সেই মসীহ্‌–সরাসরি বেহেশত থেকে, নাকি আন্দ্রিয়র মাধ্যমে (ইউহোন্না ১:৪১)?”</h2>
এটার ব্যাখ্যা বেশ সহজ—আন্দ্রিয় প্রথমে তাকে বলেছিলেন যে ঈসা ছিলেন মসীহ্, কিন্তু পিতর তার কথা তখন বিশ্বাস করেননি। পরে, হযরত ঈসার সঙ্গে সঙ্গে চলার পরে আল্লাহ্ তার অন্তরে প্রকাশ করলেন যে ঈসা সত্যই মসীহ্ ছিলেন। পিতরের আদর্শ খুব সুন্দর, কেমন করে একজন গ্রহণ করতে পারে যে সত্যই, ঈসা হচ্ছেন আল্লাহ্‌র সেই ওয়াদাকৃত এবং মনোনীত নাজাতদাতা।