সকল নবী কি নিষ্পাপ?
সকল নবী কি নিষ্পাপ?
এখন পাপ সম্পর্কে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাপ করা দরকার। আল্লাহ্ যে নবী পয়গম্বরদের পাঠিয়েছিলেন তাঁদের নিয়ে একটি ভূল ধারণা প্রায় সব মানুষই পোষন করে আর তা হল যে সমস্ত নবীরাই নিষ্পাপ। এই ধারণা আল্লাহ্র কালাম ও সাধারণ যুক্তির বিপরীত। এটি সাধারণ যুক্তির বিপরীত কারণ নবীরাও আমাদের মতো আদমের বংশভূত এবং তাঁদেরও ওই একই গুনাহ্-স্বভাব ও আত্মকেন্দ্রিক জীবন ছিল। এটা আল্লাহ্র কালামের বিপরীত কারণ আল্লাহ্র কিতাবে নবীদের গুনাহ্ সম্পর্কে পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আল্লাহ্র কালাম নবীদের ভুল-ত্রু টি ও আল্লাহ্কে অমান্য করার ঘটনার সাথে তাঁদের গভীর ঈমান ও বাধ্যতার কথাও সুস্পষ্টভাবে বলে। নবীদের জীবন সম্পর্কে সুন্দর ব্যাপারটা হল, যদিও তাঁরা পাপ করেছিল তবুও তাঁরা তওবা করে আল্লাহ্র ক্ষমা পেয়েছিলেন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, কোরআনে নবীরা যে সব পাপ করেছিলেন সে সব বিষয়ে পরিষ্কার বিশ্লেষণ না থাকলেও নবীরা আল্লাহ্র কাছে যে অনুশোচনা করেছেন তার উল্লেখ আছে। নবীদের অবাধ্যতার একটা পরিষ্কার চিত্র পেতে হলে এবং তাদেরকে কেন তওবা করতে বলা হয়েছে তা জানতে হলে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে খোঁজ করতে হবে। এই বিষয়ে কোরআনের কিছু অংশ নিচে দেওয়া হল। এই আয়াতগুলি পরিষ্কারভাবে বুঝায় যে নবীরাও পাপী ছিলেন আর আল্লাহ্র ক্ষমা তাঁদের দরকার ছিল।
হযরত মূসা (আঃ)
“এবং আশা করি, তিনি [আল্লাহ্] কিয়ামত দিবসে আমার আপরাধ মার্জনা করিয়া দিবেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা শু’আরা’ ২৬:৮২)
হযরত ইবরাহীম (আঃ)
“সে [মূসা নবী] নগরীতে প্রবেশ করিল, যখন ইহার অধিবাসীরা ছিলো অসতর্ক। সেথায় সে দুইটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখিল, একজন তাহার নিজ দলের এবং আপর জন তাহার শত্রুদলের। মূসার দলের লোকটি উহার শত্রুর বিরুদ্ধে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করিল, তখন মূসা উহাকে ঘুসি মারিল; এইভাবে সে তাহাকে হত্যা করিয়া বসিল। মূসা বলিল, ইহা শয়তানের কাণ্ড। সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান-কারী।” (কোরআন শরীফ, সূরা কাসাস ২৮:১৫-১৬)
হযরত ইউনুস (আঃ)
“ইউনুসও ছিলো রাসূলদের একজন। স্মরণ কর, যখন সে পলায়ন করিয়া বোঝাই নৌযানে পৌঁছিল, অতঃপর সে লটারীতে যোগদান করিল এবং পরাভুত হইল। পরে এক বৃহদাকার মৎস্য তাহাকে গিলিয়া ফেলিল, তখন সে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগিল। সে যদি আল্লাহ্র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করিত, তা হইলে তাহাকে উত্থান দিবস পর্যন- থাকিতে হইত উহার উদরে। অতঃপর ইউনুসকে আমি নিক্ষেপ করিলাম এক তৃণহীন প্রান-রে এবং সে ছিলো রুগ্ন। পরে আমি তাহার উপর এক লাউ গাছ উদ্গত করিলাম, তাহাকে আমি এক লক্ষ বা ততোধিক লোকের প্রতি প্রেরণ করিয়াছিলাম। এবং তাহারা ঈমান আনিয়াছিল; ফলে আমি তাহাদিগকে কিছু কালের জীবনোপভোগ করিতে দিলাম।” (কোরআন শরীফ, সূরা সাফ্ফাত ৩৭:১৩৯-১৪৮)
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
“এতএব তুমি [হে মুহাম্মাদ] ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য, তুমি তোমার ক্রটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সকাল ও সন্ধ্যায়।” (কোরআন শরীফ, সূরা মুমিন ৪০:৫৫
“সুতরাং জানিয়া রাখ [হে মুহাম্মাদ], আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু’মিন নর-নারীদের ক্রটির জন্য আল্লাহ্ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস’ান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৯)
“নিশ্চয়ই [হে মুহাম্মাদ] আমি তোমাদিগকে দিয়াছি সুস্পষ্ট বিজয়, যেন আল্লাহ্ তোমার অতীত ও ভবিষ্যত ক্রটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তাঁহার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন, এবং আল্লাহ্ তোমাকে বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা ফাত্হ ৪৮:১-৩)
গুনাহ্ ও তার খারাপ ফালাফল কী, তা ভালভাবে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ মনে করে যে বর্তমান সময়ে প্রচলিত কোন জনপ্রিয় প্রণালী বা তন্ত্র যেমন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ ব্যবহারের দ্বারাই দারিদ্র, অসাম্য, দুর্দশার মতো সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব। দুর্ভাগ্যবসত, আল্লাহ্র কালাম আমাদের এই রকম এতো সহজ সমাধানের কথা বলে না। সব থেকে ভাল আবিস্কৃত তন্ত্রও মানুষের দ্বারাই চালিত যে নিজেই স্বার্থপর ও কুলষিত এবং তার পরিচালনায় তার তন্ত্র সমাজকে অবিচার ও কষ্টের মধ্যেই নিয়ে যায়।
মানব সমাজের সমস্যাটা বাহিরের এই পন্থাগুলো নিয়ে নয় বরং তা মানুষের হৃদয়ের ভিতরের পন্থাকে নিয়েই। একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ প্রতিদিন গোসল করে ও নিত্য নতুন কাপড় পরিবর্তন করে পরিষ্কার থাকতে পারে ঠিকই কিন্তু সেভাবে যে রোগ তাকে ভিতর থেকে নিঃশেষ করে ফেলছে তাকে কিছুতেই সে দূর করতে পারবে না । মানব সমাজের এই বিশ্বজনীন যে নিপীড়ন তা কোন ভুল প্রথার জন্য নয়, তা বরং মানুষের পাপের জন্যই যা এই প্রথাগুলোকে পরিচালনা করে। অন্য দিকে, যদি একটা খারাপ প্রথা ভাল মানুষদের দ্বারা চালিত হয় তাহলে কিছু সময়ের মধ্যে তারা সেই প্রথাকে নির্ভুল করে তা ব্যবহার করে পৃথিবিকে কয়েক বছরের মধ্যেই বেহেশতে রূপান্তর করা সম্ভব হত।
প্রধান যে জিনিসটি যা আমাদের দরকার তা হল আমাদের হৃদয়ের পরিষ্কারকরণ । মন পরিবর্তন না হলে শুধু বাহিরকে পরিবর্তন করলেই হবে না। আদম-হাওয়ার পাপের মাধ্যমে যা বেঠিক হল তাকে আবার সঠিক করতে হবে। আমাদের স্বার্থপর কামনা বাসনা ও ইচ্ছা থেকে ফিরে আল্লাহ্র দিকে ফিরতে হবে যাতে আমরা তাঁর রাজ্যের ভাগি হতে পারি।
এই ব্যাপারে আমরা প্রত্যেকেই দুইটি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি। প্রথমত, আমরা কি নিজেরা স্বীকার করতে রাজি আছি যে, আমি পাপি আর আল্লাহ্র রহমত ও ক্ষমা না পেলে কেয়ামতের দিনে শুধু ভর্তসনা ও শাস্তি আশা করতে পারি?…
ইয়াকুব—“নাজাতের ব্যাপারে হযরত পৌল এবং ইয়াকুব বিপরীত নয়?”
<h2 class=”objection”>ইয়াকুব—“নাজাতের ব্যাপারে হযরত পৌল এবং ইয়াকুব বিপরীত নয়?”</h2>
নাজাত আসে কাজের মাধ্যমে না ঈমানের মাধ্যমে? কিছু সমালোচক হযরত পৌল এবং ইয়াকুবের বিশেষ কিছু আয়াত নিয়ে দাবী করেন যে প্রথম ঈসায়ী নেতাদের মধ্যে এই ব্যাপারে অনেক অমিল ছিল। কিন্তু ইঞ্জিল শরীফ ভালভাবে জানলে এই যুক্তি ভেঙ্গে যায়। হযরত পৌল এবং ইয়াকুবের সুসংবাদ বাণী এক ছিল, যদিও এরা শ্রোতাদের প্রয়োজন অনুসারে সুসংবাদের আলাদা অংশের উপর জোর দিতেন। তারা উভয় এই মূল বাণী বিশ্বাস করতেন:<blockquote>শরিয়ত ভাল, কিন্তু তার মাধ্যমে কখনও নাজাত অর্জন করা সম্ভব না, যেহেতু মানুষ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তা পালন করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ্ তার নাজাত এবং প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা প্রকাশ করেছেন—ঈসা মসীহ্। এই বিনামূল্য দান আল্লাহ্র কাছে গ্রহণ করতে হবে ঈমান দিয়ে, তওবা দিয়ে এবং তার উম্মত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ভাল কাজ (শরিয়ত পালন) হচ্ছে প্রকৃত ঈমানের চিহ্ন বা ফলাফল। একজনের “ঈমান”-এর ফলে যদি ভাল কাজ না আসে তাহলে বোঝা যায় এটি সত্যিকারের ঈমান ছিল না (এবং সেই ব্যক্তির নাজাত হবে না)। তাই ঈমান এবং কাজ দু’টোই প্রয়োজন, কিন্তু ঈমান হচ্ছে ভিত্তি। </blockquote>
<p>পৌল এবং ইয়াকুব দু’জনেরই লেখাগুলি উপরোক্ত বাণীর সঙ্গে মিলে যায়। হযরত পৌল কি সত্যি শরিয়তকে “ঘৃণা” করেছিলেন যেমন করে সমালোচকরা দাবী করেন?…
Contradictory standards for salvation?
Did Jesus Teach Contradictory Standards for Salvation?
One critic has attacked Jesus for having “contradictory” standards for salvation:
- “Love God and love neighbor” (Luke 10:25-28)
- “Sell all you have and follow me” (Luke 18:18-22)
- “Believe in Jesus” (John 3:16)
- ‘Born again” (John 3:3-8)
- “Eat Messiah’s flesh & drink his blood to get eternal life” (John 6:53-58)
- “Become like little children” (Matthew 18:2-3)
- “Righteousness must exceed the Pharisees” (Matthew 5:20)
If you are familiar with the gospel message and these passages, all these requirements are simply different ways of saying the same thing.…
১ ইউহোন্না ৫:৭ – পরে ঢুকানো হয়েছে?
১ ইউহোন্না ৫:৭—“বিশেষজ্ঞরা বলেন যে এই আয়াত জাল, এটা পরে ঢুকানো হয়েছে”
শত শত ভাল ইংরেজী অনুবাদের মধ্যে শুধুমাত্র কিং জেম্স অনুবাদেই ১ ইউহোন্না ৫:৭-এর শেষে এই বাক্য রয়েছে: —“For there are three that bear record in heaven, the Father, the Word and the Holy Ghost, and these three are one.”…
ইউহোন্না ১০:৮ – নবীরা কি চোর ও ডাকাত?”
ইউহোন্না ১০:৮—“ঈসা কীভাবে বলতে পারেন যে আগেকার সমস্ত নবী-পয়গম্বর ছিলেন চোর ও ডাকাত?”
ইঞ্জিলের উপর এই আক্রমন খুব দুর্বল। ইঞ্জিলের একটুমাত্র পড়লে বোঝা যায় যে ঈসা মসীহ্ আগেকার নবীদের খুব সম্মান করতেন (যেমন মথি ৫:১৭; মথি ১২:৩; লূক ১৩:২৮; ইউহোন্না জ৮:৩৯,৪০)। এইজন্য বোঝা যায় যে ঈসা মসীহ্ এখানে প্রকৃত নবীদের “চোর ও ডাকাত” বলেননি, বরং ভণ্ড নবী ও ভণ্ড ‘মসীহ’দের “চোর ও ডাকাত” বলেছিলেন (যারা নবীদের যুগের পরে এসে নিজেকে নবী বা মসীহ্ বলে মানুষকে ঠকিয়েছে)। তেমনভাবেও নবী ইহিষ্কেল তাদের সমালোচনা করেছিলেন, যারা নিজেকে ইহুদীদের নেতা বা নবী বলে কিন্তু শুধু নিজেকে সেবা করে। ঈসা মসীহ্ তাদের ‘চোর’ বলেছিলেন কারণ তারা অনেকসময় কৌশলে মানুষকে আকৃষ্ট করতেন এবং ‘ডাকাত’ বলতেন কারণ ভণ্ড নেতারা হিংস্রতা ব্যবহার করতেন।
…
ইউহোন্না ৮:১-১১ – মূল ইঞ্জিলে অনুপস্থিত?
ইউহোন্না ৮:১-১১—“কিতাবুল মোকাদ্দস কীভাবে নির্ভরযোগ্য হতে পারে যেহেতু এই অনুচ্ছেদ সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে ছিল না?”
মাঝে মাঝে কিছু সমালোচকগণ এই অনুচ্ছেদ দেখিয়ে বলেন যে কিতাবুল মোকাদ্দস নির্ভরযোগ্য নয়, যেহেতু কিছু পাণ্ডুলিপিতে এটা লূকের শেষে পাওয়া যায় এবং অন্য কিছু পাণ্ডুলিপিতে এটা নাই। কিন্তু ইউহোন্না ৮:১-১১ এর নির্ভরযোগ্যতার পক্ষে আমাদের যথেষ্ঠ প্রমাণ রয়েছে। এই অনুচ্ছেদের ভাষা এবং স্টাইল ইউহোন্নার সঙ্গে ভালভাবে মিলে যায়, এবং ঘটনার ক্রমের মধ্যে মিলে যায়। আবার মনে রাখতে হবে যে এই দুই ছোট বিতর্কিত অনুচ্ছেদ (মার্ক ১৬:৯-২০ এবং ইউহোন্না ৮:১-১১) হচ্ছে কিতাবুল মোকাদ্দসের মাত্র ০.০০০৭% এবং এগুলো থাকলে বা না থাকলে কিতাবের শিক্ষার কোনো পরিবর্তন হয় না।
যারা এগুলো দিয়ে ইঞ্জিলের নির্ভরযোগ্যতা প্রশ্ন করেন, তারা বলে না যে কোরআনের ক্ষেত্রেও সেরকম সন্দেহজনক অংশ আছে। নবীজী (স) ইবন মাসঊদকে সম্মান করেছেন কোরআনের শ্রেষ্ঠ পাঠক হিসেবে—
আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী(স)-কে বলতে শুনেছি, চার ব্যক্তির নিকট থেকে তোমরা কোরআনের পাঠ গ্রহণ করঃ (১) ইবনে মাসউদ (২) আবু হুযাইফার মুক্ত গোলাম সালিম (৩) উবাই (ইবনে কা’ব) ও (৪) মুয়ায ইবনে জাবাল।” (সহীহ আল-বোখারী, ৩৫২৪ (জামে’ সহীহ্ আল-বোখারী অনুবাদ মাওলানা মোবারক করীম জওহর, খান ব্রাদার্স আণ্ড কোম্পানি, ৯ বাংলাবাজার ১১০০; ঢাকা ২০০৮, পৃষ্ঠা ৬৪৩)
এই ইবনে মাসউদ সূরা ফাতেহা, সূরা আল-ফালাক, এবং সূরা আন-নাস কোরআনের অংশ হিসেবে তিনি গ্রহণ করেননি। অপর দিকে, উপরোক্ত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর মুসহাফে দু’টি বাড়তি সূরা ছিল—সূরা আল-হাফ্দ এবং সূরা আল-খাল’—
সূরা আল-হাফ্দ
সূরা আল-খাল
হযরত উবাই ইবনে কা’ব (রা)-এর মুসহাফের সূরা আল-হাফ্দ এবং সূরা আল-খাল
(বর্তমান কোরআনে অনুপস্থিত)
আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের কথা অনুযায়ী, আলী ইবন আবি তালিবের কোরআনের মধ্যে “আল-খাফ্ধ” নামক একটি বাড়তি সূরা ছিল, যেটা আজকাল কোরআনে নাই। আবার বিভিন্ন শি’য়া উলেমাদের কথা অনুযায়ী, হযরত উসমান কোরআন শরীফ থেকে “সূরা উলায়াহ্” এবং “সূরা নুরাইন” নামক দু’টি সূরা বাদ দিয়েছেন।
হয়ত এইজন্য ‘আব্দুল্লাহ্ ইবন ‘ওমর (মৃঃ৬৯২) বলেছেন, “কেউ না বলুক, ‘আমি পুরো কোরআন শিখেছি!’…
ইউহোন্না ৫:৩১ – নিজের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য?
ইউহোন্না ৫:৩১—“নিজের বিষয়ে ঈসা মসীহ্র সাক্ষ্য সত্যি (ইউহোন্না ৮:১৪) নাকি সত্যি নয় (৫:৩১)?”
প্রথম অনুচ্ছেদে (৫:৩১), ঈসা মসীহ্ আলোচনার জন্য ইহুদী নিয়ম মেনেছেন, যে কোন কিছু প্রতিষ্ঠিত করতে হলে একাধিক সাক্ষ্যর দরকার (দ্বিতীয়বিবরণ ১৯)। এই যুক্তি মেনে তিনি বলছেন যে তার পক্ষে ইয়াহিয়া (যাকে এরা সম্মান করেন) এবং পাক-কিতাব দুজনই সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে (৮:১৪), তিনি বলছেন যে তা হলেও, তার নিজের সাক্ষ্য যথেষ্ট কারণ তিনি এক আল্লাহ্র জীবন্ত কালাম (ইউহোন্না ১:১), তিনিই সত্য (ইউহোন্না ১৪:৪) এবং তিনি মসীহ্।
তাই পঞ্চম অধ্যায় তিনি বলছেন যে মানুষের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তার আত্মসাক্ষ্য অবৈধ হলেও, আমার পক্ষে আরও সাক্ষ্য রয়েছে…” কিন্তু ৮ অধ্যায়ে তিনি তার আত্মসাক্ষ্য বৈধতা প্রমাণ করেন। এখানে কোন পরস্পর-বিরোধী নেই।
…
ইউহোন্না ১:২১ – ইয়াহিয়া কি ইলিয়াস ছিলেন?
ইউহোন্না ১:২১—“তরিকাবন্দিদাতা ইয়াহিয়া কি ইলিয়াস ছিলেন (মথি ১১:১৪; ১৭:১৭:১০-১৩) নাকি তিনি ইলিয়াস ছিলেন না (ইউহোন্না ১:২১)?”
তরিকাবন্দিদাতা ইয়াহিয়া আক্ষরিক অর্থ ইলিয়াসের অবতার অবশ্যই ছিলেন না, কিন্তু তিনি নবী মালাখি এবং জিবরাইলের ভবিষ্যদ্বানী পূরণ করেছেন যে ইলিয়াসের মত একজন নবী এসে মসীহ্র পথ প্রস্তুত করবেন। ইয়াহিয়ার জন্মের আগে, জিব্রাইল ইয়াহিয়ার পিতা জাকারিয়ার কাছে এসে বললেন যে তার সন্তান “নবী ইলিয়াসের মত মনোভাব ও শক্তি নিয়ে সে মাবুদের আগে আসবে…লোককে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করবে।” (লূক ১:১৭)। জিব্রাইলের কথা অনেকটা নবী মালাখির কথা মত, যে মাবুদের দিনের আগে একজন ইলিয়াস এসে তার পথ প্রস্তুত করবে।
ফরীশীগণ এই ভবিষ্যদ্বানী ভুলব্যাখ্যা করে মনে করতেন যে ইলিয়াস নিজেই ফিরে আসবেন। তাই ইয়াহিয়া তাদের খুলাখুলি বললেন, যে তিনি সেই আক্ষরিক অর্থে ইলিয়াস নন। ঈসা মসীহ্ বরং বুঝতে পেরেছেন যে ইয়াহিয়া সেই ভবিষ্যদ্বানী পূরণ করেন যে ইলিয়াসের মত একজন আসবেন।
কোরআন শরীফে তেমন ধরনের জটিলতা রয়েছে। কোরআনের কিছু কিছু আয়াত কোন সাফায়াত পুরোপুরি অস্বীকার করেন (২:১২২-১২৩; ২:২৫৪; ৬:৫১; ৮২:১৮-১৯), আবার কিছু আয়াতে বলা হয় যে সাফায়াত সম্ভব হতে পারে (২০:১০৯; ৩৪:২৩; ৪৩:৮৬; ৫৩:২৬)।
…
লূক ৯:৯ – হেরোদ এবং ইয়াহিয়া
লূক ৯:৯—“হেরোদ ঈসা মসীহ্কে ইয়াহিয়া মনে করতেন (মথি ১৪:২; মার্ক ৬:১৬) নাকি তিনি তা মনে করেননি (লূক ৯:৯)?”
লূক রাজা হেরোদের প্রথম প্রতিক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন (যে ঈসা ইয়াহিয়া নন), কিন্তু মার্ক এবং মথি হেরোদের শেষ মতামত বর্ণনা করেন। লূকের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে হেরোদ ঈসার পরিচয় নিয়ে একটু অনিশ্চিত, কিন্তু মার্ক ও মথি অনুযায়ী তিনি শেষ সিদ্ধান্ত নেন যে ঈসা হচ্ছে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত ইয়াহিয়া নবী।
…
লূক ১৪:২৬ – বাবা-মাকে ঘৃণা করা?
লূক ১৪:২৬—“ঈসা মসীহ্ কি এখানে বাবা-মাকে ঘৃণা করতে বলেছিলেন?”
উপরোক্ত প্রশ্ন থেকে বোঝা যায় সমালোচক প্রাচীন সাহিত্যের সাথে অপরিচিত। এই rhetorical device-কে বলা হয় hyperbole, এবং প্রাচীন লেখায় তা খুব বেশী দেখা যায়। ঈসা মসীহ্র যুগে সবাই বুঝেছিল যে তিনি আক্ষরিক ‘ঘৃণা’ বলেননি বরং “তুলনামূলক ভাবে চেয়ে কম ভালবাসা”। কিতাবুল মোকাদ্দেসের অন্যান্য জায়গায় এই hyperbole –এর উদাহরণ পাওয়া যায় যেখানে সুস্পষ্টই আক্ষরিক ঘৃণার কথা বলা হচ্ছে না বরং শুধু “তুলনামূলক ভাবে কম মহব্বত করা”, যেমন পয়দায়েশ ২৯:৩০-৩১। আরেকটি উদাহরণ আছে লূক ১৬:১৩:
“কোন গোলাম দু’জন কর্তার সেবা করতে পারে না, কারণ সে একজনকে ঘৃণা করবে ও অন্যজনকে ভালবাসবে, কিংবা সে একজনের প্রতি মনোযোগ দেবে ও অন্যজনকে তুচ্ছ করবে। আ্লাহ্ ও ধন-সম্পত্তি এই দু’য়েরই সেবা তোমরা একসংগে করতে পার না।” (লূক ১৬:১৩)
এখানে অবশ্যই আক্ষরিক ঘৃণা বোঝানো হচ্ছে না, কারণ তিনি সাধীনভাবে দু’জন মালিক পছন্দ করার কথা বলছেন। এই hyperbole–এর আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যায় গ্রীক লেখা কোর্পুস হের্মেটিকুম থেকে:
“প্রিয় সন্তান, প্রথমে নিজের শরীরকে ঘৃণা না করলে নিজেকে মহব্বত করতে পারবে না” (পইমান্দ্রেজ ৪:৬)
Poetae Lyrici Graeci বইয়ের একটি যুদ্ধের গানে বলা হয়েছে যে মানুষ:
“স্পার্টা শহরের মর্জাদার জন্য নিজের জীবনকে নিজের শত্রু মনে করতে হবে”
এখানে আক্ষরিক ঘৃনা বলা হচ্ছে?…