পয়দায়েশ ১:১১-১৩–“সূর্য সৃষ্টি হওয়ার আগে কীভাবে গাছ-পালা থাকতে পারে?”
পয়দায়েশ ১:১১-১৩–“সূর্য সৃষ্টি হওয়ার আগে কীভাবে গাছ-পালা থাকতে পারে?”
জাকির নায়েক তৌরাতের বর্ণনা সমালোচনা করে বলেন যে সূর্য সৃষ্টির আগে গাছপালা সৃষ্টি করা অসম্ভব। উপরের বর্ণনায় সমস্যা সমাধান হলেও, আমরা সহীহ্ হাদিস ও আল-তাবারীর বিবরণে একই জিনিস দেখি যে, সেখানেও সূর্য সৃষ্টির দুই দিন আগেই গাছপালা সৃষ্টি হয়েছে। উপরোক্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য থেকে জানা যায় যে উদ্ভিদের বিবর্তনের প্রাথমিক পর্যায়ে বায়ূমণ্ডল দিয়ে আলো আসতো কিন্তু পৃথিবীর তল থেকে সূর্য দেখা যেত না। চতুর্থ দিনে বায়ুমন্ডল স্বচ্ছ হয়ে সূর্য ও চাঁদ দৃশ্যমান হয়। এই আংশিক আলোতে সালোকসংশ্লেষণ সম্ভব হয়ে উদ্ভিদের বিবর্তন হয়, যার বৃদ্ধির ফলে অক্সিজেনযুক্তকরণ হয় যেন বায়ূমণ্ডল পরিষ্কার ও স্বচ্ছ হয়। ডঃ রবার্ট সি নিউম্যান (কোর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে পি.এইচ.ডি.…
কোরবানী সম্পর্কে
সুন্নি শরীয়ত অনুযায়ী, কোরবানী দেওয়া ফরজ না বরং ওয়াজিব। কিন্তু ইরানে বলা হয় যে কোরবানী কেবন মক্কায় যারা হজ্জে যায় তাদের জন্য ওয়াজিব; তাই খুব কম লোক ইরানে কোরবানী দেয়। তাই ধর্মের ব্যাপারে অনেক মতবাদ আছে।
কোরবানী সম্পর্কে কোরআন শরীফে আমরা পড়ি:
“সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলাম। অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস!
…
ইঞ্জিল কীভাবে অবতীর্ণ হয়েছিল?
“কোরআন অনুযায়ী, ইঞ্জিল ঈসা মসীহ্র কাছে “নাজিল” হয়েছিল, কিন্তু বর্তমান ইঞ্জিল সাহাবীরাই লিখেছিলেন”
“নাজিল” কথাটির মানে এই না যে জিনিসটা বেহেশত থেকে পড়ে গিয়েছিল বা একজন নবীর হাতে দেওয়া হয়েছিল, বরং “নাজিল” দিয়ে আল্লাহ্র একটি উপহার বোঝায়। যেমন কোরআন শরীফে বলা হয় যে আল্লাহ্ মানব জাতির কাছে লৌহ “নাজিল” করেছিলেন:
“আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ জেনে নিবেন কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী” (সূরা হাদীদ ৫৭:২৫)
তার মানে কি এই, যে একজন নবীর হাতের মাধ্যমে আমরা লৌহ পেয়েছিলাম?…
“কিতাবুল মোকাদ্দস কি অবৈজ্ঞানিক নয়?”
“কিতাবুল মোকাদ্দস কি অবৈজ্ঞানিক নয়?”
কিছু কিছু মুসলমান এবং খ্রীষ্টান এই নিয়ে তর্কাতর্কি করে যে কার ধর্মগ্রন্থ আধুনিক বিজ্ঞানের সঙ্গে বেশী ভাল মিলে। অবশ্য আমরা জানি যে আসমানী কিতাবের লেখক আবার পৃথিবীর স্রষ্টা, তাই সেগুলোর মধ্যে মিল থাকার কথা। কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দস এবং কোরআন উভয় গ্রন্থ নিয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক জটিলতা আছে। আসলে নাস্তিক বৈজ্ঞানিকদের কাছে সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলো উভয় কিতাবে আছে—
- কোরআন এবং কিতাবুল মোকাদ্দসে অলৌকিক ঘটনার ইতিহাস
- হযরত নূহের ৯৫০ বছর বেঁচে থাকা
- ঈসা মসীহ্র বিনা পিতা জন্ম
- ঈসা মসীহ্ মৃতদের জীবিত করে তোলা
- ঈসা মসীহ্ জন্মান্ধদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া
- ছয় দিনে পৃথিবীর সৃষ্টি
যারা সৎ ঈমানদার তারা এই জটিলতাগুলো অস্বীকার করে না কিন্তু নম্রভাবে যুক্তিসঙ্গত উত্তর খঁজে, এবং সেই উত্তরগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। এই লেখাগুলোতে কিতাবুল মোকাদ্দসের উপর সমালোচকদের এক একটা আপত্তির উত্তর দেওয়া হয়।
বিজ্ঞান এবং ঈমানের সম্পর্ক নিয়ে আরও পড়তে চাইলে “বুকাইলিবাদ পেরিয়ে: বিজ্ঞান, কিতাব ও ঈমান” বইটি সংগ্রহ করুন।
…
সূরা মায়িদা ৫:৪৬ আয়াত- পথের নির্দেশ ও আলো ‘ছিল’ নাকি ‘আছে’?
“কোরআনের সূরা মায়িদা ৫:৪৬ আয়াতে বলা হয়েছে যে, ‘উহাতে (ইঞ্জিলে) ছিল পথের নির্দেশ ও আলো’ (অতীত কাল)।”
এই দাবীটি আরবী পাঠের ভ্রান্ত-বোধভিত্তিক। আরবী বাক্যাংশটি হচ্ছে,“الإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ; আল ইনজিলা ফিইহি হুদায় ওয়া নূর, আক্ষরিকভাবে অনুবাদ হচ্ছে, “…এতে পথনির্দেশ ও আলো…” এখানে কোন ক্রিয়াপদ নেই, কিন্তু এতে বর্তমান কাল প্রকাশ করছে। আরবী ভাষায় বর্তমানকালের সংযোজক বাক্যে ‘হওয়া’ (‘কানা’) ক্রিয়াপদের দরকার হয় না, অনেকটা বাংলার মতন। প্রসঙ্গ অনুসারেই কাল বুঝে নিতে হয়। বিখ্যাত বাঙালি লেখক ডা.…
“ঈসা মসীহ্কে ‘প্রভু’ বলা যাবে না”
“ঈসা মসীহ্কে ‘প্রভু’ বলা যাবে না”
যেহেতু কোরআন শরীফে বলা হয় যে আল্লাহ্কে ছাড়া কোন প্রভু বা অধিপতি (রব্ব) নেই, সেহেতু অনেকে ইঞ্জিল পড়ে আপত্তি করে যে ঈসাকে ‘প্রভু’ বলা যাবে না। আসলে এর পিছনে কোরআন শরীফ নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে, কারণ কোরআন শরীফেও ফেরাউনকে “রব্ব” বা প্রভু বলা হয়:
“এবং বহু সৈন্য-শিবিরের অধিপতি ( ‘রাব্ব’) ফির’আওনের প্রতি?”
…
“প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের মধ্যে কি অনেক বিবাদ ও দ্বন্দ্ব ছিল?”
“প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের মধ্যে অনেক বিবাদ ও দ্বন্দ্ব ছিল, তাই কার বাণী বেরিয়ে এসেছে সেটা জানা কঠিন”
ইসলামী ইতিহাসের তুলনায়, প্রথম ঈসায়ী জামাতের মধ্যে অনেক বেশী একতা ও শান্তি ছিল। হযরত মুহাম্মদের মৃত্যুর পর থেকে বিভিন্ন মুসলমান দলের মধ্যে প্রায় অনবরত যুদ্ধ হচ্ছিল। নবীজীর ইন্তেকালের ২৫ বছর পর তাঁর বিধবা বিবি আয়েশার দল হযরত আলীর দলের বিরুদ্ধে বিখ্যাত ‘উটের যুদ্ধ’ চালালো এবং পরাজিত হল। ২৩ হিজরিতে ফিরোজ আবু লুলু নামক একজন পারস্য গোলাম খলিফা ওমর (রা)-কে ছুরিকাঘাত করেছেন। ৩৫ হিজরিতে অনেক অসন্তুষ্ট মুসলমান দল হযরত উসমান (রা)-এর ঘর অবরোধ করে তরবারি দ্বারা তাকে হত্যা করল। ৪০ হিজরিতে অন্য এক মুসলিম দল হযরত আলী (রা)-কে ছুরিকাঘাত করেছিল। ৬১ হিজরিতে উমাইয়া বংশের মুসলমানেরা এবং কুরাইশ বংশের মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল এবং ইয়াযিদের নেতৃত্বে নবীজী (স)-র গোষ্ঠী পরাজিত হল। তারপরও অন্যান্য দলের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল যেমন মুসায়লিমা যিনি হযরত মুহাম্মদ (স)-এর নবুয়াত গ্রহণ করলেন কিন্তু নিজেকে একজন নবী বলে দাবি করলেন। ১১ হিজরিতে ইয়ামামা যুদ্ধে এই মুসায়লিমার দশ হাজার সৈন্যের বাহিনী নবীজীর দল প্রায় পরাজিত করেছিলেন।
এর তুলনায়, ঈসা মসীহ্র প্রথম অনুসারীদের সমাজের প্রথম ২৫০ বছর ধরে কোন যুদ্ধও হয় নি, কোন রাজনীতিও হয় নি, কোন মারামারিও হয় নি। সাহাবীদের যুগে তাদের মধ্যে আবার বড় ধরণের কোন বিবাদও দেখা দেয় নি। তারা একই মূল সুসংবাদের বাণী গ্রহণ করলেন, যেমন ইতিহাস প্রমাণ করে।
…
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চার্চ কি বাইবেল পরিবর্তন করেছে?
“রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চার্চ কি বাইবেল পরিবর্তন করতে পারেনি?”
সমালোচকরা দাবি করেন যে ইউরোপীয় চার্চ যেহেতু রাজনৈতিক প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত ছিল, সেহেতু এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারা বাইবেল পরিবর্তন করতেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা অবশ্য ধর্মীয় নেতৃত্বের জন্য খুব ক্ষতিকর, কিন্তু ইতিহাসের আলোকে এই অভিযোগ আসলে অসম্ভব।
হযরত ঈসা মসীহ্র পর প্রথম তিন শতাব্দী ধরে (৩১১খ্রীঃ পর্যন্ত), পৌত্তলিক রোমীয় সাম্রাজ্যে খ্রীষ্টধর্ম একটি নিষিদ্ধ ধর্ম ছিল। ঈসায়ী আন্দোলন প্রথম তিন শতাব্দী ধরে খুব অত্যাচারিত এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন ছিল। খ্রীষ্টাব্দ ৩১১ সালে রোমীয় শাসক কন্স্টান্টাইন খ্রীষ্টধর্মকে বৈধ করলেন এবং তার পর থেকে চার্চ ক্রমাগত একটি রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান হয়ে গেল। চার্চের উপর রাজনৈতিক প্রভাব শুরু হল ৩২৫ সালের নিসিয়া মহাসভা (Nicene Council)।
কিন্তু এই ৩১১ খ্রীষ্টাব্দ রাজনৈতিক প্রভাবের অনেক আগে থেকেই ইঞ্জিল শরীফ এবং ঈসায়ী শিক্ষার জন্য আমাদের বহু পাণ্ডুলিপির প্রমাণ আছে যে তখনকার বাণী এবং এখনকার বাণী এক। উদাহরণস্বরূপ, ২০০ খ্রীষ্টাব্দ থেকে আমাদের প্যাপিরাসে লেখা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি আছে লূক, ইউহোন্না এবং হযরত পৌলের ১০টি চিঠির জন্য, এবং ঈসায়ী নেতা তের্তুল্লিয়ান ইঞ্জিল থেকে ৩,৮০০ উদ্ধৃতি দিয়েছে ২০০ সালে। তেমনই ৩১১ খ্রীষ্টাব্দের আগে থেকেই আমাদের কাছে অনেক ইঞ্জিলের খণ্ডের তালিকা আছে প্রত্যেকের মধ্যে চারটা সুখবর (মথি, মার্ক, লূক, ইউহোন্না) রয়েছে এবং এই চারটা ছাড়া অন্য কোন সমাচারের উল্লেখ নেই। তাই চার্চ রাজনীতির মধ্যে ঢুকবার আগে থেকে ইঞ্জিলের নির্ভরযোগ্যতার জন্যে যথেষ্ট প্রমাণ আছে।
৩১১ সালের আগে ঈসায়ী জামাত পুরোপুরিভাবে রাজনীতিমুক্ত ছিল, অর্থাৎ ঈসায়ী হওয়ার জন্য কোন রকম দুনিয়াবী লাভ ছিল না বরং শুধু তার বিপরীত—সামাজিক চাপ, অত্যাচার এবং কষ্ট। ইসলামের প্রথম দুই শত বছর ঠিক তার বিপরীত ছিল, কারণ তখনকার ধর্মীয় নেতা পাশাপাশি সম্রাট বা ইসলামি সাম্রাজ্যের খলিফা ছিল। ইসলামের প্রথম যুগের অধিকাংশ যুদ্ধ ধর্মীয় বিষয় নিয়ে হয়েছিল (যেমন রিদ্দা যুদ্ধগুলো)। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী এই সময়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন জাল হাদিস লেখা হত। কিছু ক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর সবচেয়ে কাছের আত্মীয় এবং সাহাবীরা হারিয়ে গেল, যেমন কারবালাতে, অথবা যখন হযরত উসমান ইবন মাসঊদ এবং উবায় ইবন কা’বের কোরআন ধ্বংস করার হুকুম দিলেন।
(এই বিষয়ে আরও দেখুন ‘প্রাচীন ঈসায়ী জামাতের মধ্যে অনেক বিবাদ ও দ্বন্দ্ব ছিল?’…
শুধু ঈসা নয়, হযরত ইয়াহিয়াকেও ‘আল্লাহ্র কালাম’ বলা হয়
কোরআন অনুযায়ী কেবল হযরত ঈসা “আল্লাহ্র কালাম” নয়, বরং সূরা আলে-‘ইমরান ৩৯ আয়াতে হযরত ইয়াহিয়াকেও ‘কালাম’ বলা হয়”
জাকির নায়েক দাবী করেছেন যে আলে-‘ইমরান ৩৯ আয়াতে তরিকাবন্দিদাতা ইয়াহিয়াকেও “আল্লাহ্র কালাম” বলা হয়েছে, অর্থাৎ কেবলমাত্র হযরত ঈসা “আল্লাহ্র কালাম” নয়। কিন্তু এই আয়াত পড়লে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় সেখানে হযরত ইয়াহিয়া অন্য একজন প্রেরিত “কালাম”-এর কথা সমর্থন করছেন—
“আল্লাহ্ তোমাকে (অর্থাৎ ইয়াহিয়ার পিতা জাকারিয়াকে) ইহাহ্ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্র বাণীর সমর্থক” (সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৩৯)
কোরআনের তাফসীরকারী প্রায় একবাক্যে বলেন যে এই আয়াতে উক্ত ‘কালাম’ ঈসাকে বোঝাচ্ছে। যেমন হযরত ইবনে ‘আব্বাস (রা) এর তাফসীর—
তিনি যখন মসজিদে মোনাজাত করছিলেন তখন ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে এসে তাকে একজন সন্তানের সংবাদ দেন যার নাম ইয়াহিয়া, যিনি আল্লাহ্র কাছে একটি কালাম সমর্থন করবেন; মরিয়ম-তনয় ঈসা যিনি আল্লাহ্র কালাম হবেন, বিনা পিতায় সৃষ্ট…
এবং বিখ্যাত তাফসীরে জালালাইন শরীফে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—
…“আল্লাহ্ তোমাকে ইহাহ্ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্র বাণীর সমর্থক”—অর্থাৎ ঈসা; তিনি রূহুল্লাহ, তাকে ‘কালাম’ও বলা হয়…”
প্রসিদ্ধ মুফাস্সির শায়েখ তাবারসি এবং আল্লামা জামাখশারি এর সঙ্গে একমত, এবং অবশ্য ইঞ্জিল শরীফে হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর বিস্তারিত বর্ণনা থেকে দেখা যায় তার প্রধান কাজ ছিল হযরত ঈসার পথ প্রস্তুত করা—
তিনি (ইয়াহিয়া) নূরের বিষয়ে সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন যেন সকলে তাঁর সাক্ষ্য শুনে ঈমান আনতে পারে। তিনি নিজে সেই নূর ছিলেন না কিন্তু সেই নূরের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। (ইউহোন্না ১:৭, এবং দেখুন ইউহোন্না ১:১৪)
ইঞ্জিলে বলা হয় যে হযরত ঈসা মসীহ্র আত্মীয় হযরত ইয়াহিয়া ঈসার পথ প্রস্তুত করলেন এবং লোকদের তাকে অনুসরণ করতে বলেছেন।
…
বাইবেল কি শুধু অধিকাংশই ঠিক আছে?
বাইবেলের অধিকাংশই ঠিক আছে, শুধু দু’একটি আয়াত পরিবর্তন করা হয়েছে যার ফলে পুরো বাণী বিকৃত হয়ে গেল”
যেহেতু কিতাবুল মোকাদ্দসের নির্ভরযোগ্যতার জন্য এত বেশী শক্ত প্রমাণ রয়েছে, কিছু কিছু সমালোচক বলেন যে বাইবেলের অধিকাংশই নির্ভরযোগ্য, কিন্তু দু’একটি আয়াত যোগ করা বা বাদ দেওয়াতে এর বাণী পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গেল। যেমন, তারা স্বীকার করেন যে হযরত ঈসার মৃত্যু ও পুনরুত্থান এবং শুধু ঈমানের মাধ্যমে নাজাত পাওয়ার শিক্ষাগুলো অনেক পরে ইঞ্জিলে যোগ করা হয়েছে। তাদের কাছে যে আপত্তিকর “যোগ করানো” শিক্ষা (যার আরেক নাম ‘সুখবর’ অর্থাৎ ‘ইঞ্জিল’) এইভাবে সংক্ষিপ্ত করা যায়—
শুধু শরিয়ত পালন করার মাধ্যমে মানুষ নাজাত অর্জন করতে পারে না, কারণ তারা শরিয়ত পুঙ্খানপুঙ্খভাবে পালন করতে পারে না, কিন্তু আল্লাহ্ তার রহমতের মাধ্যমে তিনি একটি নাজাত, কাফফারা এবং পুনর্মিলনের ব্যবস্থা করলেন হযরত ঈসা মসীহ্র মাধ্যমে, যিনি একমাত্র নিষ্পাপ ব্যক্তি, “মনোনীত নাজাতদাতা”। তিনি ক্রুশে আমাদের পাপের শাস্তি বহন করলেন এবং পুনরুত্থিত হলেন। এই নাজাতের দান কোন সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায় না বরং তওবা করে ঈসা মসীহ্র উম্মত হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়।
এই সমালোচকদের কথা অনুযায়ী, উপরোক্ত শিক্ষা পরে যোগ করা হল কারণ এদের পূর্ববিশ্বাসের সঙ্গে সেটা মেলে না। এই সংশয়ীরা একথাও বলেছেন যে, ইঞ্জিলে যেখানেই ঈসাকে ‘প্রভু’ বা ‘ইবনুল্লাহ্’ বলা হয় সেটাও মূল ইঞ্জিলে ছিল না।
ইঞ্জিল শরীফ যারা পড়েছেন তাদের কাছে এই দাবী শুধু হাস্যকর, কারণ উপরোক্ত ‘সুসংবাদ’ শিক্ষাটি ইঞ্জিল শরীফের প্রত্যেকটি ২৭ খণ্ডে বার বার পাওয়া যায়। পুরো ইঞ্জিল শরীফের শিক্ষার কমপক্ষে ৫০% এর মধ্যে এই ‘সুখবর’ শিক্ষার স্বাদ পাওয়া যায়। এই শিক্ষা ছাড়া ইঞ্জিল শরীফ অর্থহীন হত।
এই একই সুসংবাদের বাণী হযরত ঈসা মসীহ্ নিজেই বার বার বলেছেন— মথি ২৬:২৮; ইউহোন্না ৩:১৫, মথি ২০:২৮; মার্ক ১০:৪৫; ইউহোন্না ১০:৯; ইউহোন্না ১৪:৬; ইউহোন্না ৬:৪৪,৪৭,৪৮,৫১; ইউহোন্না ১০:১১; ইউহোন্না ১০:২৮; ইউহোন্না ১১:২৫; ইউহোন্না ১৭:১-২; ইউহোন্না ১৭:৩; লূক ২৪:২৬-২৭; লূক ৪:৪৩; ইউহোন্না ৬:২৯; ইউহোন্না ৬:৩৩,৩৫; ইউহোন্না ৪:১৪; ইউহোন্না ৫:২১; মথি ১৮:২১-৩৫। এই একই সুসংবাদ প্রচার করেছেন হযরত ঈসার উম্মত পিতর (প্রেরিত ২:৩৮; প্রেরিত ৪:১২; ১ পিতর ১:১৮-১৯; ২ পিতর ১:১৬), উম্মত ইয়াকুব (ইয়াকুব ২:১০), এবং উম্মত ইউহোন্না (১ ইউহোন্না ২:১,২)। তা ছাড়াও, ইঞ্জিল শরীফের প্রত্যেকটি খণ্ডে ঈসা মসীহ্র সেই ‘আপত্তিকর’ উপাধি “প্রভু” এবং “ইবনুল্লাহ্” বার বার ব্যবহার হয়।
অর্থাৎ, ইঞ্জিল শরীফ থেকে এই সুসংবাদ শিক্ষাটি বাদ দেওয়া সম্ভব নয়, সেটা হচ্ছে ইঞ্জিল শরীফের মর্ম।
অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:
…