বাইবেল মতে যীশুর চরিত্র
বাইবেল মতে যীশুর চরিত্র
বাইবেল যীশু সম্পর্কে এমন আগজী কথা বলে? সেটা আসমানী গ্রন্থ হয় কি ভাবে?
১/ যীশুর অহেতুক নিরহ গাছকে অভিশাপ দিয়ে মেরে ফেলা (মথি ২১:১৮-২১)
মথি ২১:১৮-২১:
পরদিন সকালে শহরে ফিরে আসবার সময় ঈসার খিদে পেল। পথের পাশে একটা ডুমুর গাছ দেখে তিনি গাছটার কাছে গেলেন, কিন্তু তাতে পাতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না। তখন তিনি গাছটাকে বললেন, “আর কখনও তোমার মধ্যে ফল না ধরুক।” আর তখনই ডুমুর গাছটা শুকিয়ে গেল। সাহাবীরা তা দেখে আশ্চর্য হয়ে বললেন, “ডুমুর গাছটা এত তাড়াতাড়ি কেমন করে শুকিয়ে গেল?” জবাবে ঈসা তাঁদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, তোমরা সন্দেহ না করে যদি বিশ্বাস কর তবে ডুমুর গাছের উপরে আমি যা করেছি তোমরাও তা করতে পারবে। কেবল তা নয়, কিন্তু যদি এই পাহাড়কে বল, ‘উঠে সাগরে গিয়ে পড়,’ তবে তাও হবে। তোমরা যদি বিশ্বাস করে মুনাজাত কর তবে তোমরা যা চাইবে তা-ই পাবে।”(মথি ২১:১৮-২১)
সত্যি কি এটা ঈসার চারিত্রিক দোষ হিসেবে ধরা হচ্ছে? গাছের কি অনুভূতি ও আবেগ আছে? ঈসা মসীহের শিক্ষার মধ্যে তিনি প্রায়ই গাছের উদাহরণ দিতেন ও “মাঠের ফুলগুলোর কথা ভেবে” দেখতে বললেন (মথি ৬:২৮), তাই গাছের প্রতি তার কোনো খারাপ চিন্তা নেই। কিন্তু এখানে তিনি সাহাবীদেরকে ঈমান সম্বন্ধে একটি শিক্ষা দিতে চাচ্ছিলেন।
অন্যান্য ধর্মীয় নেতাদের উপর মিথ্যা, খুন, জেনা, ডাকাতি এমন অভিযোগ তোলা যায়, কিন্তু একটি গাছ শুকানো কি সত্যিই একটি দোষ ধরা যায়?
মার্ক (১১:১৩-১৪)- অহেতুক গাছকে অভিশাপ দিয়ে মেরে ফেলা কি পাপ নয়?
পাপ?? তিনি কি সত্যিই বলতে চাচ্ছেন যে গাছকে মেরে ফেলা পাপ? আসমানি কিতাবে গাছ-হত্যাকে নিষেধ করা হয় কোথায়? তাহলে কি শাক-সবজি কেটে খাওয়াও পাপ হয়?
২/ “যীশু মানুষদেরকে গালিগালাজ করতেন” মথি (১৬:২৩) – মানুষকে গালি দেয়া কি পাপ নয়?
পুরো অনুচ্ছেদ এমন:
সেই সময় থেকে ঈসা তাঁর সাহাবীদের জানাতে লাগলেন যে, তাঁকে জেরুজালেমে যেতে হবে এবং বৃদ্ধ নেতাদের, প্রধান ইমামদের ও আলেমদের হাতে অনেক দুঃখভোগ করতে হবে। পরে তাঁকে হত্যা করা হবে এবং তৃতীয় দিনে মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠতে হবে। (২২) তখন পিতর তাঁকে একপাশে নিয়ে গিয়ে অনুযোগ করে বললেন, “হুজুর, এ দূর হোক। আপনার উপর কখনও এমন হবে না।” (২৩) ঈসা ফিরে পিতরকে বললেন, “আমার কাছ থেকে দূর হও, শয়তান। তুমি আমার পথের বাধা। যা আল্লাহর তা তুমি ভাবছ না কিন্তু যা মানুষের তা-ই ভাবছ।” (মথি ১৬:২১-২৩)
এটা কোনো গালিগালাজ না, তিনি তার প্রিয় সাহাবীকে ধমক দিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ আগে তিনি পিতরকে বলেছিলেন “আমি তোমাকে বলছি, তুমি পিতর, আর এই পাথরের [পিতরের] উপরেই আমি আমার জামাত গড়ে তুলব” (১৮ আয়াত)। গ্রিক ও হিব্রু ভাষায় ‘শয়তান’ এর অর্থ “প্রতিপক্ষ’ অর্থাৎ ভালোর প্রতিপক্ষ। এখানে গালি দেওয়া হচ্ছে না, ঈসা তার প্রিয় সাহাবীকে ধমক দিচ্ছিলেন।
৩/যীশু অহেতুক কিছু অবুঝ প্রাণীকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারেন। মার্ক (৫:১০-১৩)- অবুঝ প্রাণীকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারা কি পাপ নয়?
এই ঘটনার সময় ঈসা একজন অত্যাচারিত ব্যক্তিকে সুস্থ করেছে যাকে অনেক বছর ধরে মন্দ-আত্মা নির্যাতন করছিল:
ঈসা তাকে [মন্দ-আত্মাকে] জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার নাম কি?”
সে বলল, “আমার নাম বাহিনী, কারণ আমরা অনেকে আছি।” সে ঈসাকে বারবার কাকুতি-মিনতি করে বলল যেন তিনি সেই এলাকা থেকে তাদের বের করে না দেন। সেই সময় সেই জায়গার কাছে পাহাড়ের গায়ে খুব বড় এক পাল শূকর চরছিল। ভূতেরা ঈসাকে মিনতি করে বলল, “ঐ শূকরের পালের মধ্যে আমাদের পাঠিয়ে দিন; ওদের মধ্যে আমাদের ঢুকতে দিন।” ঈসা অনুমতি দিলে পর সেই ভূতেরা বের হয়ে শূকরগুলোর মধ্যে গেল। তাতে সমস্ত শূকর ঢালু পার দিয়ে জোরে দৌড়ে গেল এবং সাগরের মধ্যে পড়ে ডুবে মরল। সেই পালের মধ্যে প্রায় দু’হাজার শূকর ছিল। (মার্ক ৫:৯-১৩)
হাদিস অনুযায়ী ঈসা মসীহ পৃথিবীতে আবার ফিরে এসে শূকরকে হত্যা করবে – সেটাও কি পাপ হবে? শূকরের প্রতি হঠাৎ এতো মায়া-মমতা কিসের? আবার এখানে ঈসা সেই শূকরদের মেরে ফেলে নি বরং মন্দ-আত্মাকে তাদের কাছে যেতে অনুমতি দিলেন, তাই সে নিজে কোনো প্রাণীকে মেরে ফেললেন না।
৪/ পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের চোর-ডাকাত বলতেন ৷ (যোহন ১০:৭-৮)
“আমার আগে যারা এসেছিল তারা সবাই চোর আর ডাকাত, কিন্তু মেষগুলো তাদের কথা শোনে নি।” (ইউহোন্না ১০:৮)
এখানে “নবী” বা “রাসূল” কথার উল্লেখ আছে? এই আয়াতের কন্টেক্সট থেকে আমরা বুঝতে পারি যে “আমার আগে যারা এসেছিল” বলতে ভণ্ড নবী ও স্বার্থপর নেতাদের বোঝায়। নবী হেজকিলও তাদের কথা বলতেন (হেজকিল ৩৪:২৩)। হেজকিলের পরে যে ৬০০ বছর পার হয়ে গেল সেই সময় বেশ কয়েকজন ভণ্ড ‘মসীহ’ ও নেতা এসেছে যারা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু শুধু যুদ্ধ ও কষ্ট শুরু করেছে।
৫/ নিকপরাধ মানুষকে অভিশাপ দিতেন ৷ (মথি ২৩:৩৫-৩৬)
পুরো অনুচ্ছেদ এমন:
ভণ্ড আলেম ও ফরীশীরা, ঘৃ্যে আপনারা! আপনারা নবীদের কবর নতুন করে গাঁথেন এবং আল্লাহ্ভক্ত লোকদের কবর সাজান। আপনারা বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় বেঁচে থাকতাম তবে নবীদের খুন করবার জন্য তাঁদের সংগে যোগ দিতাম না।’ এতে আপনারা নিজেদের বিরুদ্ধে এই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নবীদের যারা খুন করেছে আপনারা তাদেরই বংশধর। তাহলে আপনাদের পূর্বপুরুষেরা যা শুরু করে গেছেন তার বাকী অংশ আপনারা শেষ করুন। “সাপের দল আর সাপের বংশধরেরা! কেমন করে আপনারা জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা পাবেন? এইজন্যই আমি আপনাদের কাছে নবী, জ্ঞানী লোক এবং আলেমদের পাঠাচ্ছি। আপনারা তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে খুন করবেন ও কয়েকজনকে ক্রুশের উপরে হত্যা করবেন। কয়েকজনকে আপনাদের মজলিস-খানায় চাবুক মারবেন এবং এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে তাড়া করে বেড়াবেন। এইজন্য নির্দোষ হাবিলের খুন থেকে শুরু করে আপনারা যে বরখিয়ের ছেলে জাকারিয়াকে পবিত্র স্থান আর কোরবানগাহের মাঝখানে খুন করেছিলেন, সেই জাকারিয়ার খুন পর্যন্ত দুনিয়াতে যত নির্দোষ লোক খুন হয়েছে আপনারা সেই সমস্ত রক্তের দায়ী হবেন। 36 আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, এই কালের লোকেরাই সেই সমস্ত রক্তের দায়ী হবে।
জেরুজালেমের জন্য দুঃখ প্রকাশ “জেরুজালেম! হায় জেরুজালেম! তুমি নবীদের খুন করে থাক এবং তোমার কাছে যাদের পাঠানো হয় তাদের পাথর মেরে থাক। মুরগী যেমন বাচ্চাদের তার ডানার নীচে জড়ো করে তেমনি আমি তোমার লোকদের কতবার আমার কাছে জড়ো করতে চেয়েছি, কিন্তু তারা রাজী হয় নি। হে জেরুজালেমের লোকেরা, তোমাদের বাড়ী তোমাদের সামনে খালি হয়ে পড়ে থাকবে।” (মথি ২৩:২৯-৩৮)
অভিযোগ হল যে ঈসা ‘নিরপরাধ মানুষকে অভিশাপ দিতেন’। নিরপরাধ? আল্লাহর পাঠানো নবীদের হত্যা করা কি অপরাধ হয় না? কোরআন বা হাদিসে আছে যে “যে একজনকে খুন করে সে যেন সমস্ত মানুষদের খুন করে”। এখানে একই রকম ব্যাপার – যে একজন নবীকে খুন করে সে যেন সকল নবীদের খুন করেছে।
৬/ মিথ্যা ওয়াদা ও মিথ্যা ভবিষৎবাণী করতেন৷ (মথি ১৬:২৭-২৮, মথি ১৯:২৮),
আয়াতটি এই রকম:
“আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এখানে এমন কয়েকজন আছে যাদের কাছে ইব্নে-আদম বাদশাহ্ হিসাবে দেখা না দেওয়া পর্যন্ত তারা কোনমতেই মারা যাবে না।” (মথি ১৬:২৮)
‘ইব্নে-আদমকে বাদশাহ্ হিসাবে দেখা দেওয়া’ মানে ঈসার দ্বিতীয় আগমন নয় বরং তার পুনরুত্থান, যখন তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে বাদশাহ হিসেবে প্রমানিত হলেন। অবশ্যই দ্বিতীয় আগমনে তার বাদশাহী বা রাজত্ব আরও পরিস্কার ভাবে প্রকাশিত হবে (যেমন মথি ১৯:২৮)।
(মার্ক ২:২৫-২৬,১১:২৩,১৬:১৭-১৮)
এটা অন্য জায়গায় উত্তর দিয়েছিলাম…
লূক (১৮:২৯-৩০)
এই আয়াত এখানে দিচ্ছি:
ঈসা তাঁর সাহাবীদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যারা আল্লাহর রাজ্যের জন্য বাড়ী-ঘর, স্ত্রী, ভাই-বোন, মা-বাবা বা ছেলেমেয়ে ছেড়ে এসেছে, তারা প্রত্যেকে এই যুগেই অনেক বেশী পাবে এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন লাভ করবে।” (লূক ১৮:২৯-৩০)
এখানে কোনো মিথ্যা দেখছি না।
(যোহন ৩:১৩)
এই আয়াত এখানে দিচ্ছি:
“যিনি বেহেশতে থাকেন এবং বেহেশত থেকে নেমে এসেছেন সেই ইব্নে-আদম ছাড়া আর কেউ বেহেশতে ওঠে নি।” (ইউহোন্না ৩:১৩)
এটা অন্য জায়গায় উত্তর দিয়েছিলাম…
৭/ মদ পান করে মাতাল হতেন – (লূক ৭:৩৪-৩৫)
অনুচ্ছেদ এমন:
“তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া এসে রুটি বা আংগুর-রস খেলেন না বলে আপনারা বলছেন, ‘তাকে ভূতে পেয়েছে।’ আর ইব্নে-আদম এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন বলে আপনারা বলছেন, ‘দেখ, এই লোকটা পেটুক ও মদখোর, খাজনা-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের বন্ধু।’ কিন্তু জ্ঞানের অধীনে যারা চলে তাদের জীবনই প্রমাণ করে যে, জ্ঞান খাঁটি। (লূক ৭:৩৩-৩৫)
ঈসার শত্রুরা তরিকাবন্দীতাদা ইয়াহিয়াকে যেমন মিথ্যা নিন্দা করতেন, তেমনও ঈসা মসীহকেও মিথ্যা নিন্দা করছিলেন, সেটা এখান থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়। এবং আমরা যোগ করতে পারি — যেমন করে এই লেখকও ঈসাকে মিথ্যা নিন্দা করছে। হ্যাঁ, ঈসা তখনকার সংস্কৃতি অনুযায়ী খাবারের সঙ্গে আঙ্গুর রস খেতেন, যার মধ্যে অল্প অ্যালকহল থাকত। কিন্তু মূসার শরিয়তে মদ খাওয়া নিষেধ নয় বরং মাতাল হওয়া নিষেধ, এবং যারা মাতাল হতে চায় তারা সেই ধরণের আঙ্গুর-রস খেতেন না বরং মদ খেতেন। ইঞ্জিলে কোথাও বলা হয়নি যে ঈসা মাতাল হয়েছে।
বেশ্যা মেয়েদের তাঁকে স্পর্শ করতে এবং চুম্বন করতে দিতেন৷ (লূক ৭:৩৪-৫০) (যোহন ১০:৭-৮)
শুধু এটুকু বললে উদ্দেশ্যমূলক ভুল উপস্থাপনা করা হবে। পুরো অনুচ্ছে দিচ্ছি এখানে:
একজন ফরীশী ঈসাকে তাঁর সংগে খাবার দাওয়াত করলেন। তখন ঈসা তাঁর বাড়ীতে গিয়ে ভোজে যোগ দিলেন। সেই গ্রামে একজন খারাপ স্ত্রীলোক ছিল। সেই ফরীশীর ঘরে ঈসা ভোজে যোগ দিয়েছেন জানতে পেরে সে একটা সাদা পাথরের পাত্রে করে আতর নিয়ে আসল। পরে সে ঈসার পিছনে তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াল এবং কেঁদে কেঁদে চোখের পানিতে তাঁর পা ভিজাতে লাগল। তারপর সে তার মাথার চুল দিয়ে তাঁর পা মুছিয়ে দিল এবং তাঁর পায়ের উপর চুমু দিয়ে সেই আতর ঢেলে দিল। যে ফরীশী ঈসাকে দাওয়াত করেছিলেন তিনি এ দেখে মনে মনে বলতে লাগলেন, “যদি এই লোকটা নবী হত তবে জানতে পারত, কে এবং কি রকম স্ত্রীলোক তার পা ছুঁচ্ছে; স্ত্রীলোকটা তো খারাপ।” ঈসা সেই ফরীশীকে বললেন, “শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলবার আছে।”
শিমোন বললেন, “হুজুর, বলুন।” ঈসা বললেন, “কোন এক মহাজনের কাছে দু’জন লোক টাকা ধারত। একজন ধারত পাঁচশো দীনার আর অন্যজন পঞ্চাশ দীনার। তাদের কারও ঋণ শোধ দেবার ক্ষমতা ছিল না বলে তিনি দয়া করে দু’জনকেই মাফ করলেন। তা হলে বল দেখি, তাদের দু’জনের মধ্যে কে সেই মহাজনকে বেশী ভালবাসবে?” শিমোন বললেন, “আমার মনে হয়, যার বেশী ঋণ মাফ করা হল সে-ই।”
ঈসা তাঁকে বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।” তারপর ঈসা সেই স্ত্রীলোকটির দিকে মুখ ফিরিয়ে শিমোনকে বললেন, “তুমি এই স্ত্রীলোকটিকে তো দেখছ। আমি তোমার ঘরে আসলে পর তুমি আমার পা ধোবার পানি দাও নি, কিন্তু সে চোখের পানিতে আমার পা ভিজিয়ে তার চুল দিয়ে মুছিয়ে দিয়েছে। তুমি আমাকে চুমু দাও নি, কিন্তু আমি ঘরে আসবার পর থেকেই সে আমার পায়ে চুমু দিচ্ছে। তুমি আমার মাথায় তেল দাও নি, কিন্তু সে আমার পায়ের উপর আতর ঢেলে দিয়েছে। তাই আমি তোমাকে বলছি, সে বেশী ভালবাসা দেখিয়েছে বলে বুঝা যাচ্ছে যে, তার গুনাহ্ অনেক হলেও তা মাফ করা হয়েছে। যার অল্প মাফ করা হয় সে অল্পই ভালবাসা দেখায়।” পরে ঈসা সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তোমার গুনাহ্ মাফ করা হয়েছে।” যারা ঈসার সংগে খেতে বসেছিল তারা মনে মনে বলতে লাগল, “এ কে, যে গুনাহ্ ও মাফ করে?” ঈসা তখন সেই স্ত্রীলোকটিকে বললেন, “তুমি ঈমান এনেছ বলে নাজাত পেয়েছ। শান্তিতে চলে যাও।” (লূক ৭:৩৬-৫০)
এটা পড়ার পরে কারও মধ্যে বিন্দুমাত্র দয়া থাকলে সে কি ঈসার ব্যবহারের মধ্যে কোনো দোষ ধরতে পারে? গোপনে প্রেমের চুম্বন ও সত্যিকারের অনুতাপের পা-চুম্বন তো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
যীশু ছিলেন পৃথিবীর অশান্তি (মথি ১০:৩৪-৩৫)
এখানে ঈসা ঈমানদারদের অত্যাচারের কথা বলছে, যে কেউ তার পথে গেলে তার আত্মীয়-স্বজন তাকে ভুল বুঝে কষ্ট দিবে ও বিরোধিতা করবে। এটা কি খারাপ কিছু? হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর সাহাবীদের আত্মীয়স্বজন ও সমাজ কি খুশিতে এই নতুন শিক্ষা গ্রহন করেছিল? না, অনেকেই বিরোধিতা করল। তাই ঈসা পৃথিবীতে এই অর্থে ‘অশান্তি’ নিয়ে আসলেন যে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিরোধিতা আসবে। অন্য অনেক আয়াতে তার শান্তি সম্বন্ধে বলা হয়েছে:
ঈসা বললেন, “আমি তোমাদের জন্য শান্তি রেখে যাচ্ছি, আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি; দুনিয়া যেভাবে দেয় আমি সেইভাবে দিই না। তোমাদের মন যেন অস্থির না হয় এবং মনে ভয়ও না থাকে।” (ইউহোন্না ১৪:২৭)
“আমি তোমাদের এই সব বললাম যেন তোমরা আমার সংগে যুক্ত আছ বলে মনে শান্তি পাও। এই দুনিয়াতে তোমরা কষ্ট ও চাপের মুখে আছ, কিন্তু সাহস হারায়ো না; আমিই দুনিয়াকে জয় করেছি।” (ইউহোন্না ১৬:৩৩)
” ধন্য তারা, যারা লোকদের জীবনে শান্তি আনবার জন্য পরিশ্রম করে,
কারণ আল্লাহ্ তাদের নিজের সন্তান বলে ডাকবেন” (মথি ৫:৯)“…তিনি জাতিদের কাছে শান্তি ঘোষণা করবেন।” (জাকারিয়া ৯:১০)
“তোমরা যারা দূরে ছিলে এবং তারা যারা কাছে ছিল, সকলের কাছেই তিনি এসে শান্তির সুসংবাদ তবলিগ করেছিলেন।” (ইফিষীয় ২:১৭)
তাই অনেক দিক দিয়ে ঈসা শান্তি নিয়ে এসেছে, কিন্তু তবুও “এই দুনিয়াতে তোমরা কষ্ট ও চাপের মুখে আছ”।
১০/ যীশু তার মাকে সাক্ষাৎ কালে অস্বীকার করতেন ৷ (মথি ১২:৪৪-৫০), (মার্ক ৩:৩১-৩৫)
ঠিকানা ভুল হয়েছে, মথি ১২:৪৬-৫০:
“ঈসা যখন লোকদের সংগে কথা বলছিলেন তখন তাঁর মা ও ভাইয়েরা তাঁর সংগে কথা বলবার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কোন একজন লোক তাঁকে বলল, “দেখুন, আপনার মা ও ভাইয়েরা আপনার সংগে কথা বলবার জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।” তখন ঈসা তাকে বললেন, “কে আমার মা, আর আমার ভাইয়েরাই বা কারা?” পরে তিনি তাঁর সাহাবীদের দেখিয়ে বললেন, “এই দেখ, আমার মা ও আমার ভাইয়েরা; কারণ যারা আমার বেহেশতী পিতার ইচ্ছা পালন করে তারা-ই আমার ভাই, বোন আর মা।” (মথি ১২:৪৬-৫০)
এখানে বলা হয়নি যে ঈসা পরে তার মা ও ভাইদের কাছে যান নি, বরং তিনি সরাসরি যান নি। তিনি তাদের তুচ্ছ করলেন না বরং তার শ্রোতাদের কাছে একটি শিক্ষা দিচ্ছিলেন যে আল্লাহর বাধ্য থাকা সবচেয়ে বড় বিষয়। ঈসা তার বাবা-মায়ের
“বাধ্য হয়ে রইলেন” (লূক ২:৫১); তিনি পিতা-মাতাকে সম্মান করার বিষয়ে শিক্ষা দিতেন (মথি ১৫:১-৬) এবং মৃত্যুর সময়ে তার মায়ের দেখাশোনার ভার তার প্রিয় সাহাবীকে দিলেন (ইউহোন্না ১৯:২৬-২৭)।
মসীখের চতিত্রকে সমালোচনা করার এতো প্রচেষ্টার পরে কিছুই দাঁড়িয়ে গেল না, কারণ কোরআন ও ইঞ্জিলে একমাত্র ঈসাকে নিষ্পাপ বলা হয়।
কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন: