“খ্রীষ্টধর্মের বিশেষজ্ঞরা বলেন যে বাইবেল অনির্ভরযোগ্য”
“খ্রীষ্টধর্মের বিশেষজ্ঞরা বলেন যে বাইবেল অনির্ভরযোগ্য”
ইঞ্জিল এবং তওরাত শরীফের নির্ভরযোগ্যতা আক্রমন করার জন্য কিছু মুসলমান সমালোচক প্রায়ই ইউরোপীয় ‘খ্রীষ্টধর্মের’ অধ্যাপকদের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেন। পশ্চিমাতে কিছু কিছু বাইবেল বিষয়ক অধ্যাপক আছে যারা হয়ত নিজেকে খ্রীষ্টান বলে কিন্তু তাদের আসল দৃষ্টিভঙ্গি আস্তিক না বরং নাস্তিক এবং বস্তুবাদী। অর্থাৎ এদের মূল বিশ্বাস হল যে বিশ্বে অলৌকিক বলে কিছু নাই, সম্ভবও না। এই মূল বিশ্বাসের জন্য কিতাবে যত অলৌকিক ঘটনা বা ভবিষ্যদ্বানী থাকুক না কেন, সেগুলো তাদের দৃষ্টিতে অসম্ভব এবং সেহেতু মিথ্যা। এদের একজন শীর্ষ নেতা স্বাধীনভাবে তার পূর্বধারণা স্ব্বীকার করেছে:
মৃত্যু থেকে জীবিত হওয়ার উঠার এমন ঐতিহাসিক ঘটনা পুরোপুরি অবিশ্বাস্য।১
প্রতিটি প্রকৃত মুসলমান এবং ঈসায়ী এই পূর্বধারণা গ্রহণ করতে পারে না, কারণ আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি যে আল্লাহ্ মৃত্যু থেকে মানুষকে পুনরুত্থিত করেছেন এবং কুমারী মায়ের গর্ভে অলৌকিক ভাবে সন্তান দিয়েছেন (দেখুন সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৪৫-৫০)। তবে এদের এই অনমনীয় মৌলিক যুক্তির ভিত্তিতে এরা বাইবেলের লেখার তারিখ এবং সততা অস্বীকার করেন। তবুও ইদানিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই Higher Criticism দলের যুক্তিগুলোর জনপ্রিয়তা অনেক কমে গেছে (এই বিষয়ে আরও পড়ুন পৃষ্ঠা 64)।
তাই জাকির নায়েক এবং আহমেদ দীদাতের কাছে এমন আধ্যাত্মিকতাবাদ-বিরোধীদের উদ্ধৃতি ব্যবহার করা অসৎ, কারণ কোরআনের ক্ষেত্রে এদের এই একই কঠিন যুক্তি প্রয়োগ করলে কোরআনের সততাও নির্মূল করা হবে। জাকির নায়েকের মত সমালোচকেরা সহজেই বাইবেলের ক্ষেত্রে Higher Criticism দলের সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করে, কিন্তু Higher Criticism পদ্ধতি যারা কোরআনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে (যেমন Arthur Jeffrey, Gerd Puin, and Patricia Crone, এবং Christoph Luxenberg), তাদের কথা ওরা শুনতে পারে না। Higher Criticism পদ্ধতি শুরু হয়েছে জার্মানিতে, এবং জার্মানিতে প্রথম ইসলামিক স্টাডিজ অধ্যাপক হয়েছে মুহাম্মদ কালিশ (Muhammad Kalisch), একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান যিনি ১৫ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করে সারা জীবন কোরআন এবং ফিকহ্ গবেষণা করেছেন। কিছু দিন আগে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুযায়ী সম্ভবত মুহাম্মদ নামে আসলে কোন ব্যক্তিই ছিল না। অন্যান্য হাইয়ার ক্রিটিসিজম অধ্যাপকগণ, যেমন Karl-Heinz Ohlig বলেছিলেন যে কোরআন সম্ভবত আগেকার খ্রীষ্টধর্মের লেখা থেকে বিবর্তন হয়ে এসেছে। টরন্টো স্টার দৈনিকে লেখা আছে—
কিন্তু তিনি [মুহাম্মদ কালিশ] সাধারণ ধর্মান্তরিতদের থেকে একটু ব্যতিক্রমিক, কারণ তিনি প্রশ্ন করতে বন্ধ করেন নি। “ধর্ম যুক্তির বিপরীত হতে পারে না” তিনি বলেন. “আমার যৌক্তিকতা বিরোধী এমন বিশ্বাস বা ধর্মতত্ত্ব আমি কখনও গ্রহণ করতে পারতাম না।”
কালিশ বলেছিলেন যে ২০০১ সালে তিনি বুঝতে পারলেন যে ইহুদী-খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থের উপর যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, এমন পদ্ধতি যদি মুসলমান ঐতিহাসিক দাবিগুলোর উপর প্রয়োগ হয় তাহলে একই ধরণের সমস্যা সরাসরি দেখা দেয়। তিনি দেখলেন যে মজবুত প্রমাণ খুঁজতে গেলে সাধারণ ধর্মবিশ্বাসগুলো তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে পরে। তিনি উপলব্ধি করলেন যে ইহুদী ও খ্রীষ্টধর্মে যত অবাস্তব কাহিনী আছে, ইসলামেও তেমন পরিমাণের অবাস্তব কাহিনী আছে। তাই তিনি ইসলাম নতুনভাবে চিন্তা করতে লাগলেন।
যখন তাকে জিজ্ঞাস করা হল যে তার এই তদন্তের ফলাফলগুলো মানুষদের ঈমান নষ্ট করবে, তিনি বলেন, “একটি আক্ষরিক ঈমান অবশ্যই ধ্বংস হবে, যৌক্তিকতার অভাবে অনির্ভরযোগ্য একটি ঈমান। কিন্তু আমি যে আল্লাহে বিশ্বাস করি, তিনি আক্ষরিক ব্যাখ্যাকারীদের আল্লাহ্ নয়, তিনি সেই পরম আল্লাহ্। আল্লাহ্ তো বই লেখেন না। যতগুলো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আছে প্রত্যেকই মানুষদের অভিজ্ঞতা এবং কল্পনার তৈরি। সেগুলো উপকারী হতে পারে, কিন্তু আজকালের জন্য সেগুলো ব্যাখ্যা করা দরকার।”
যেসব অ-মুসলিম অধ্যাপক কালিশের মতবাদের সঙ্গে একমত কিন্তু মুসলমানদের প্রতি “সম্মান” দেখানোর জন্য নীরব থাকে, কালিশ বলেন যে এরা আসলে মনে করেন যে মুসলমানেরা বাস্তবতা গ্রহণ করতে পারে না।
তিনি বলেন, “সেটা প্রকৃত ‘সম্মান’ নয়—সেটা মুসলমানদের ছোট শিশুর মত শ্রেণীতে নামাচ্ছে, যারা নিজের জন্য চিন্তা করতে বা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, এবং স্যান্নটা ক্লজ্ বা ইস্টার বানি সম্বন্ধে তাদের কল্পনাগুলো আমরা ধ্বংস করতে চাই না।”
অসম নীতি ব্যবহার করা চলবে না—কিতাবুল মোকাদ্দস নিয়ে এদের অবিশ্বাসযোগ্য মন্তব্য ব্যবহার করলে, তাহলে কোরআন নিয়েও তাদের অবিশ্বাসযোগ্য মন্তব্য গ্রহণ করতে হবে। Higher Criticism পদ্ধতি হয় উভয় গ্রন্থের উপর ব্যবহার করতে হবে, না হয় কোন্টার উপর নয়।
কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:
Leave a Reply