যীশু শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য?
আপনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যিশুকে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। আপনি অনেক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তার ব্যাখ্যা কয়েকটা কারণে গ্রহণযোগ্য নয়: (১) তার ব্যাখ্যা গস্পেল অফ মথি ১৫/২৪ এর সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। মথি ১৫/২৪ এ বলা হয়েছে,”I am not sent but unto the lost sheep of the house of Israel.” অর্থাৎ ইসরায়েল কুলের হারানো ভেড়া ছাড়া আর কারো কাছে আমি প্রেরিত হইনি (মথি ১৫/২৪)। এই ভার্সের কারণে আপনার ব্যাখ্যা গ্রহনযোগ্য নয়। যদি এই ভার্স না থাকতো তাহলে আপনার ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হত। এই ভার্সের কারণে আপনার ব্যাখ্যা সমন্বয় সাধন না করে সাংঘর্ষিক হয়েছে। এই ভার্স স্পষ্টভভাবে প্রমাণ করছে যে, যিশু শুধুমাত্র ইসরাইলিদের জন্য এসেছিলেন।
এই প্রবন্ধ ও ভিডিও দেখলে এই ভুল বুঝাবুঝি স্পষ্ট হয়ে যাবে।
(২) যিশু প্রেরিতদেরকে বলেন,”কেননা আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, ইসরায়েলের সকল নগরে তোমাদের কার্য শেষ হইবেনা, যে পর্যন্ত মনুষ্যপুত্র না আইসেন (মথি ১০:২৩)। এই ভার্স থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, ইসরাইলিদদের মধ্যে প্রচার কার্য শেষ হবার আগেই কিয়ামত হবে এবং যিশুর পুনরাগমন হবে। কাজেই ইসরাইলিগণ ছাড়া অন্যান্য জাতিকে দাওয়াত দেওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠেনা। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, যিশু শুধুমাত্র বনী ইসরাইলিদের জন্য এসেছিলেন।
এখানে (মথি ১০ অধ্যায়ে) নির্দির্ষ্ট একটি সময়ের জন্য তিনি তার সাহাবিদের পাঠালেন ইসরাইলের মধ্যে, এবং মার্ক ৬:৩০ ও লূক ৯:২০ আয়াত থেকে আমরা জানি যে এই নির্দিষ্ট মিশন শেষ করে তারা কিছুদিন পরে ফিরে আসলেন। হ্যাঁ, সেই সময়ে তাদের প্রচার কাজ ইসরাইলদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল – সেই সময়ে। কিন্তু ঈসা মসীহের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পরে তার শেষ হুকুম ছিল তার অনুসারীরা যেন তারা গিয়ে ‘সমস্ত জাতির লোকদের’ ঈসার উম্মত করে (মথি ২৮:১৯-২০, প্রেরিত ১:৮)। আরও অনেক স্পষ্ট আয়াত আছে যে ঈসার নাজাত ও বাণী সমস্ত মানুষের জন্য।
(৩) যিশু খ্রিস্টের স্বর্গারোহনের অনেক পরে অইসরাইলি মানুষদের এক জামাতে যিশুর প্রধান খলিফা পিতর বলেন,
“আপনারা তো জানেন যে, একজন ইহুদির পক্ষে একজন অইহুদির সাথে মেলামিশা করা বা তাহার সাথে দেখা করা আমাদের শরীয়াতের বিরুদ্ধে। কিন্তু ঈশ্বর আমাকে দেখাইয়া দিয়াছেন, কাহাকেও নাপাক বা অপবিত্র বলা আমার উচিত নয়।…” (প্রেরিত ১০:২৮)
বাইবেলের এই ভার্স থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, যিশুর শিষ্যগণ নিজেদেরকে ইহুদী শরীয়াতের অনুসারী বলেই বিশ্বাস করতেন এবং অইহুদিদের দাওয়াত দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের সাথে মেলামেশা ও কথাবার্তাকেও শরীয়াত বিরোধী বলে বিশ্বাস করতেন। এছাড়া পিতর আরো বললেন যে, ঈশ্বর তাকে বুঝিয়েছেন যে, কাউক অপবিত্র মনে করতে হয়না, ঈশ্বর তাকে অন্যদের কাছে গমণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন- এমন কথা তিনি বলেননি। কাজেই সকল জাতির কাছে যাওয়া নির্দেশটি জাল।
এই ধরণের যুক্তিতে যুক্তিতর্ক করা সম্ভব না। আলোচ্য বিষয় হচ্ছে যে “ইঞ্জিল অনুযায়ী ঈসা মসীহ্ কি শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য?” এই যুক্তিতর্কে যদি কেউ বলে যে “যে ২-৩টি আয়াত আমাকে সমর্থন করে সেগুলো সঠিক, এবং এর বিপক্ষে যতগুলো আছে সেগুলো সবই জাল” এমন যুক্তির সঙ্গে তর্ক করা যায়? চিন্তা করুন – যদি কোরআন শরিফে অমুক প্রসঙ্গে আলোচনা হচ্ছে যে কোরআন সেটার পক্ষে না বিপক্ষে; তখন এক পক্ষ বলে যে “এই ২-৩টি আয়াত আমার পক্ষে, বাকি যেগুলো বিপক্ষে সেগুলো জাল।” সেই যুক্তি কি কোনো যুক্তি হল? না। যুক্তিতর্কের ক্ষেত্রে পুরো যেসব আয়াত আপাত দৃষ্টিতে আমার বিপক্ষে যায়, সেগুলোর যুক্তি সঙ্গত ব্যাখ্যা দিতে হবে যে সেগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা কী কী। সেটা এখানে দেওয়া হচ্ছে না, তিনি শুধু ভিত্তিহীন দাবি করছে “অমুক নির্দেশটি জাল”। ঈসা মসীহের শেষ হুকু্মের সঙ্গে প্রেরিত ১০ অধ্যায়ের কোনো অমিল নেই। পিতর এবং অন্যান্য সাহাবি জানতেন যে ঈসা মসীহের নাজাতের ব্যবস্থা সকল মানুষের জন্য। সেটা এখানে স্পষ্টই প্রকাশ পেয়েছে:
তখন পিতর পাক-রূহে পূর্ণ হয়ে তাঁদের বললেন… “নাজাত আর কারও কাছে পাওয়া যায় না, কারণ সারা দুনিয়াতে আর এমন কেউ নেই যার নামে আমরা নাজাত পেতে পারি।” (প্রেরিত ৪:৮,১২)
এর থেকে স্পষ্ট কথা কি হতে পারে? “সারা দুনিয়ায় আর কারও না নাম নাই”। ঈসা মসীহের শেষ হুকুম এবং তিন বছরের শিক্ষা থেকে পিতরের ধারণা এসেছে। কিন্তু তখনও হযরত পিতরের একটি ভুল ধারণা রয়ে গেল যে, ঈসা মসীহের নাজাত পাওয়ার জন্য অন্যান্য জাতিদের আগে ইহুদি হতে হবে – অর্থাৎ তাদেরকে খৎনা নিয়ে মূসার সম্পূর্ণ শরিয়ত পালন করতে হবে, এবং এর পরে ঈসা মসীহকে অনুসরণ করে তারা ঈসার মাধ্যমে নাজাত পাবে। প্রেরিত ১০ অধ্যায়ে পিতর বুঝতে পেরেছে যে আগে অ-ইহুদিদের ইহুদি হতে হয় না, তারা সরাসরি ঈসা মসীহকে গ্রহণ করতে পারবে। সেটাই ছিল মূল ‘নতুন’ জিনিস এখানে। কিছুদিন আগে তো অ-ইহুদি সামারীয় জাতির কাছে ঈসায়ীগণ প্রচার করেছে এবং তারা যে গ্রহণ করেছে সেটার সাক্ষি ছিল পিতর ও ইউহোন্না (প্রেরিত ৮:১৭)।
(৪) মার্ক ১৬:১৫-১৬ ভার্সে বলা হয়েছে, সমস্ত জাতির মধ্যে সুসমাচার প্রচার করতে। উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে: Manuscripts omitting Mark 16:9–20 The last twelve verses, 16:9–20, are not present in two 4th-century manuscripts: এসব থেকে আমরা বুঝতে পারছি যে, সমস্ত জাতির মধ্যে ধর্ম প্রচারের নির্দেশটি পরবর্তী কালের সংযোজন। তাই সমগ্র জাতির মধ্যে ধর্ম প্রচারের দাবি মিথ্যা।
সমস্ত জাতির কাছে প্রচারের প্রমাণ হিসেবে কেউ তো মার্ক ১৬:১৫-১৬ ব্যবহার করছে না। কোরআনেরও ভিন্নপাঠ আছে, কিন্তু সেটা অন্য একটি আলোচনা। মথি ২৮১৯-২০, লূক ২৪:৪৬-৪৮ ও প্রেরিত ১:৮ আয়াতে যেখানে ঈসার শেষ হুকুম আছে এর পাণ্ডুলিপিতে কোনো দ্বিমত বা ভিন্নপাঠ নেই; সকল পাণ্ডুলিপিতে ঈসার শেষ হুকুম আছে। এগুলো ছাড়া ঈসা মসীহের ও ইঞ্জিলের অন্যান্য স্পষ্ট কথা নিয়ে ভিন্নপাঠ নেই:
“আমিই দুনিয়ার নূর।” (ইউহোন্না ৮:১২)
“আমিই পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না।” (ইউহোন্না ১৪:৬)
“মানুষ যেন জীবন পায় সেইজন্য আমি আমার এই শরীর দেব।” (ইউহোন্না ৬:৫১)
(৫) সাধু পল মাসীহের নতুন নিয়ম সম্পর্কে লিখেছেন,”প্রভু কহেন, এমন সময় আসিতেছে, যখন আমি ইসরায়েল কুলের সহিত এবং যিহুদা কুলের সহিত এক নতুন নিয়ম সম্পন্ন করিব…(ইব্রীয় ৮:৮)। এতে প্রমাণ হয় যে, সাধু পলও জানতেন যে, নতুন নিয়ম বা ইঞ্জিল শরীফ শুধুমাত্র ইসরাইল বংশ এবং ইহুদিদের জন্য।
ভালো প্রসঙ্গ তুলেছেন, ইয়ারমিয়া ও হেজকিল নবীদের “নতুন ব্যবস্থার” ভবিষ্যদ্বানী। আরেকটি ভবিষদ্বানী শুনবেন? সেই নতুন “রক্তের ব্যবস্থা” সম্বন্ধে জাকারিয়া নবী ভবিষ্যদ্বানী করেছেন:
“হে সিয়োন-কন্যা, খুব আনন্দ কর। হে জেরুজালেম, তুমি জয়ধ্বনি কর। দেখ, তোমার বাদশাহ্ তোমার কাছে আসছেন; তিনি ন্যায়বান ও তাঁর কাছে উদ্ধার আছে; তিনি নম্র, তিনি গাধার উপরে, গাধীর বাচ্চার উপরে চড়ে আসছেন। …
তিনি জাতিদের কাছে শান্তি ঘোষণা করবেন। তাঁর শাসন সাগর থেকে সাগর পর্যন্ত, ফোরাত নদী থেকে দুনিয়ার শেষ সীমা পর্যন্ত চলবে।
11 হে জেরুজালেম, তোমার জন্য আমার ব্যবস্থা স্থাপনের রক্তের দরুন আমি তোমার বন্দীদের সেই পানিশূন্য গর্ত থেকে মুক্ত করে দেব।” (জাকারিয়া ৯:৯-১১)
এখানে বলা হচ্ছে যে সেই নতুন ব্যবস্থার মসীহর শান্তি “জাতিদের কাছে” প্রচার করা হবে এবং তাঁর শাসন “দুনিয়ার শেষ সীমা পর্যন্ত চলবে”। অর্থাৎ ঈসা মসীহের বাণী যে শুধুমাত্র ইহুদিদের জন্য নয় সেটা আগের কিতাবের ভবিষ্যদ্বানীতেও লেখা আছে।
(৬) সাধু পল শিষ্য হওয়ার কয়েক বছর পর যিশু খ্রিস্টের শিষ্যদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাদের বিষয়ে তিনি লিখেছেন,
“তাহারা দেখিলেন ইহুদিদের নিকট সুখবর প্রচার করিবার ভার যেমন পিতরের উপর দেওয়া হইয়াছিল, তেমনি অইহুদিদের নিকট সুখবর প্রচার করিবার ভার ঈশ্বর আমার উপর দিয়াছেন”(গালাতীয় ২:৭)
এই ভার্স থেকে এটা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, যিশু খ্রিস্ট পিতর সহ তাঁর ১১ শিষ্যকে ইহুদি ছাড়া আর কারো কাছে ধর্ম প্রচারের নির্দেশ দেননি। সাধু পলই সর্বপ্রথম দাবী করেন যে, তাকে অইহুদিদের মধ্যে ধর্ম প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাঠক চিন্তা করেন, যিশুর প্রধান ১২ জন শিষ্য কখনোই দাবি করেনি যে, তাদেরকে অইহুদিদের মধ্যে ধর্ম প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অথচ সাধু পলকে এই দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে– এই কথাটা কি গ্রহনযোগ্য?
এখানে দাবি করা হচ্ছে যে ঈসা মসীহের ১১ শিষ্যদের মধ্যে কেউই অ-ইহুদিদের মধ্যে প্রচার করা সমর্থন করতেন না, সেটা ছিল শুধুমাত্র হযরত পৌলের সংযোজন। কিন্তু সেটা মানতে পারি না, কারণ অনেক স্পষ্ট আয়াত স্পষ্ট দেখায় যে ১১ শিষ্যও অ-ইহুদিদের কাছে প্রচার করতেন। উপরে সমালোচক কর্ণীলিয়ের ঘটনা উল্লেখ করেছেন, প্রেরিত ১০ অধ্যায়ের। সেই ঘটনা দিয়ে পাক-রুহ স্পষ্টই প্রকাশ করেছেন যে অ-ইহুদিদের কাছে সরাসরি প্রচার করা উচিত এবং ঈসা মসীহকে গ্রহণ করতে হলে আগে ইহুদি হতে হয় না। সেই ঘটনার মূল নায়ক কি “বিভ্রান্ত” সাধু পৌল? না – সেটা হয়েছে হযরত পিতরের মাধ্যমে! সমালোচক উপরে যে উদ্ধৃতি দিয়েছে (গালাতীয় ২:৭) সেটা নিয়ে কিছু উত্তর দিই। ১১ জন শিষ্যদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো ব্যক্তিগতভাবে ইহুদিদের মধ্যে বেশি প্রচার করেছেন, কিন্তু উপরোক্ত আয়াতের ঠিক পরে যে আয়াতগুলো আছে সেখানে প্রকাশ পায় যে হযরত পৌলের প্রচার পদ্ধতি মূল ১১ জন সাহাবীরা সমর্থন করেছেন:
“সেই গণ্যমান্য লোকেরা, অর্থাৎ ইয়াকুব, পিতর ও ইউহোন্না এই সব দেখে বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমি আল্লাহ্র কাছ থেকে বিশেষ রহমত পেয়েছি। তাঁদের ও আমাদের মধ্যে যে যোগাযোগ-সম্বন্ধ আছে তা দেখাবার জন্য তাঁরা আমার ও বার্নাবাসের সংগে ডান হাত মিলালেন। তাঁরা রাজী হলেন যে, আমরা অ-ইহুদীদের কাছে যাব এবং তাঁরা নিজেরা ইহুদীদের কাছে যাবেন।(গালাতীয় ২:৯)
নিচে মূল ১১ জন শিষ্যদের কথায় আমি দেখাচ্ছি যে তারা সকলেই অ-ইহুদিদের কাছে প্রচার করার পক্ষে ছিল।
[সাহাবি মথি]:“সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য দেবার জন্য বেহেশতী রাজ্যের সুসংবাদ সারা দুনিয়াতে তবলিগ করা হবে এবং তার পরেই শেষ সময় উপস্থিত হবে।”(মথি ২৪:১৪)
[সাহাবি পিতর]:“অ-ইহুদীরাও যে আল্লাহ্র কালামের উপর ঈমান এনেছে সেই কথা সাহাবীরা এবং সমস্ত এহুদিয়ার ঈমানদার ভাইয়েরা শুনলেন। এইজন্য পিতর যখন জেরুজালেমে আসলেন তখন সেই ঈমানদারদের মধ্যে যারা খৎনা করানো ছিল তারা তাঁকে দোষ দিয়ে বলল, “আপনি খৎনা-না-করানো লোকদের ঘরে গিয়ে তাদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করেছেন।” তখন পিতর প্রথম থেকে শুরু করে যা যা ঘটেছিল তা এক এক করে বুঝিয়ে বললেন”(প্রেরিত ১১:১-৩)
[সাহাবি পিতর]:”তখন পিতর পাক-রূহে পূর্ণ হয়ে তাঁদের বললেন… “নাজাত আর কারও কাছে পাওয়া যায় না, কারণ সারা দুনিয়াতে আর এমন কেউ নেই যার নামে আমরা নাজাত পেতে পারি।” (প্রেরিত ৪:৮,১২)
[সাহাবি ইউহোন্নার কিতাব থেকে]:“ঈসা আবার লোকদের বললেন, “আমিই দুনিয়ার নূর।”(ইউহোন্না ৮:১২)
[সাহাবি ইউহোন্নার কিতাব থেকে]:“ঈসা থোমাকে বললেন, “আমিই পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না।”(ইউহোন্না ১৪:৬)
[সাহাবি মথি]:“সমস্ত জাতির কাছে সাক্ষ্য দেবার জন্য বেহেশতী রাজ্যের সুসংবাদ সারা দুনিয়াতে তবলিগ করা হবে এবং তার পরেই শেষ সময় উপস্থিত হবে।”(মথি ২৪:১৪)
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সাধু পল ঈশ্বরের গৌরবার্থে মিথ্যা বলার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এভাবে–“কিন্তু আমার মিথ্যায় যদি ঈশ্বরের সত্য তাঁর গৌরবার্থে উপচে পড়ে, তবে আমিও বা এখন গুনাহগার বলে আর বিচারের সম্মুখীন হচ্ছি কেন? (রোমীয় ৩/৭)। এছাড়া সাধু পল দাবি করেছেন ঈশ্বরের মধ্যেও মূর্খতা বা অজ্ঞতা থাকতে পারে।
পৌল নয়, এই সমালোচক জেনে শুনে মিথ্যা ব্যবহার করতে লজ্জিত না। উনি পুরো আয়াত না দিয়ে এই আয়াতের শুরু ও শেষ অংশ ঢেকে রেখেছে যেন পাঠকের ভুলব্যাখ্যা হয়। এখানে পুরো অনুচ্ছেদ দিচ্ছি:
“কিন্তু আমাদের অন্যায় কাজ থেকে আরও ষ্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আল্লাহ্ সব সময় ন্যায় কাজ করেন। তাহলে আমরা কি বলব যে, তিনি যখন আমাদের শাস্তি দেন তখন অন্যায় করেন? অবশ্য কথাটা আমি মানুষ হিসাবে বলছি, আসলে তিনি কখনও অন্যায় করেন না। (৬) আল্লাহ্ যদি অন্যায় করেন তবে তিনি কেমন করে মানুষের বিচার করবেন? (৭) কেউ হয়তো বলবে, “আমার মিথ্যা কথা বলবার দরুন আরও ভালভাবে প্রকাশ পায় যে, আল্লাহ্ সত্যবাদী। এতে যখন আল্লাহ্ গৌরব লাভ করেন তখন গুনাহ্ গার বলে আমাকে দোষী করা হয় কেন?” (৮) খুব ভাল, তাহলে কি আমরা এই কথাই বলব, “চল, আমরা খারাপ কাজ করতে থাকি যাতে সেই খারাপীর মধ্য দিয়ে ভাল আসতে পারে”? কোন কোন লোক আমাদের নিন্দা করে বলে যে, আমরা এই রকম কথাই বলে থাকি। তাদের পাওনা শাস্তি তারা পাবে।”(রোমীয় ৩:৫-৮)
রোমীয় চিঠির এই তৃতীয় অধ্যায়ে হযরত পৌল প্রমাণ করছে যে সকল মানুষ পাপী, এবং পাপের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র বিচার ন্যায্য। এখানে (৫-৮ আয়াতে) তিনি বিভিন্ন ভুল যুক্তি খণ্ডন করছে। যেমন, “আমরা যদি পাপ করি এর তুলনায় আল্লাহর পবিত্রতা বেশি প্রকাশ পাবে” – এই যুক্তি যে কত খারাপ ও ভুল সেটা তিনি এখানে দেখাছে। যারা বলে “আমার মিথ্যা বলার মাধ্যমে আল্লাহ্র সততা প্রকাশ পায়” (৬ আয়াত) “তাদের পাওনা শাস্তি তারা পাবে” (৮ আয়াত)। অর্থাৎ এখানে হযরত পৌল মিথ্যা বলার বিরুদ্ধে প্রচার করছে, কিন্তু সমালোচক ৭ আয়াতের প্রথম শব্দগুলো বাদ দিয়ে (“কেউ হয়তো বলবে…”) উলটো ধারণা দিচ্ছে।
সাধু পল করিন্থিয়দের প্রতি প্রেরিত তার প্রথম পত্রের প্রথম অধ্যায়ের ২৫ আয়াতে বলেছেন,
“কেননা ঈশ্বরের যে মূর্খতা তাহা মনুষ্যদের অপেক্ষা অধিক জ্ঞান যুক্ত এবং ঈশ্বরের যে দুর্বলতা তাহা মনুষ্যদের অপেক্ষা অধিক সবল।” (১ করিন্থিয় ১:২৫)
এখানে দুইটি বিষয় লক্ষণীয়:
- (১) সাধু পল নিজের মিথ্যার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন
- (২) সাধু পল দাবি করেছেন ঈশ্বরের মধ্যে মূর্খতা থাকতে পারে বা আছে।
এরকম উল্টোপাল্টা কথা যে ব্যক্তি বলে তার কথা কি যিশু খ্রিস্টের স্পষ্ট স্বাক্ষের বিপরীতে গ্রহনযোগ্য? যিশু খ্রিস্ট তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন– ইসরায়েল কুলের হারানো ভেড়া ছাড়া আর কারো কাছে আমি প্রেরিত হইনি (মথি ১৫:২৪)। সুতরাং যিশু খ্রিস্টের এই স্পষ্ট স্বাক্ষের বিপরীতে পলের কথা গ্রহণযোগ্য নয়।
১ করিন্থীয় ১ অধ্যায়ে “আল্লাহ্র মূর্খতা” সম্বন্ধে অভিযোগের উত্তর আগে দিয়েছি। সেটা নিচে আবার পেস্ট করছি:
সমালোচক লিখেছেন:
খ্রিস্টানদের ঈশ্বর মূর্খ – সাধু পল এমন কথাই বললেন।
ঈশ্বরের মধ্যে আবার মূর্খতা থাকতে পারে? ব্যাপারটা কি অবাস্তব নয়? ত্রিত্ববাদী খ্রিস্টানদের সাধুপুরুষ পল আমাদের বলছেন যে, ঈশ্বরের মধ্যে মূর্খতা থাকতে পারে বা আছে? সাধু পল করিন্থিয়দের প্রতি প্রেরিত তার প্রথম পত্রের প্রথম অধ্যায়ের ২৫ আয়াতে বলেছেন,“কেননা ঈশ্বরের যে মূর্খতা তাহা মনুষ্যদের অপেক্ষা অধিক জ্ঞান যুক্ত এবং ঈশ্বরের যে দুর্বলতা তাহা মনুষ্যদের অপেক্ষা অধিক সবল।” (১ করিন্থীয় ১:২৫)
লক্ষ করুন, এখানে ঈশ্বরের মূর্খতার কথা বলা হচ্ছে। ঈশ্বরের মধ্যে যদি মূর্খতা নাই ই থাকবে তাহলে সাধু পল কেন ঈশ্বরের মূর্খতার প্রসংগ আনলেন? তারমানে এটা স্পষ্ট যে, সাধু পলের মতে ঈশ্বরের মধ্যে মূর্খতা আছে। তাহলে আমরা বলতে পারি খ্রিস্টানদের ঈশ্বর হচ্ছে মূর্খ ঈশ্বর। অবশ্য ঈশ্বরকে মূর্খ বানানোর জন্য সাধু পলই দায়ী।
অবশ্যই ঈশ্বরের মধ্যে বিন্দুমাত্র মূর্খতা নেই। সমালোচক এই আয়াতের আগে-পরের অংশ না পড়ার জন্যই এই ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। তখনকার কিছু অবিশ্বাসী লোক ঈসার ক্রুশীয় আত্ম-কুরবানির মধ্য দিয়ে নাজাতের সুসংবাদকে “মূর্খতা” হিসেবে অগ্রাহ্য করেছে তাই হযরত পৌল বলছে যে আল্লাহর সেই “মূর্খতা” (অর্থাৎ সমালোচকেরা যেটা মূর্খতা বলে) সেটা তাদের জ্ঞান থেকে অনেক বেশি জ্ঞানী। হয়তো এখন সমালোচক অভিযোগ করবেন যে সেই ক্ষেত্রে তিনি কেন “মূর্খতা” শব্দ উদ্ধৃতি-চিহ্নের মধ্যে দেন নি? কিন্তু ২০০০ বছর আগেকার লেখার নিয়মে উদ্ধৃতির চিহ্ন বলে কিছু ছিল না – আগে-পরের লেখা থেকে সেটা বোঝা যেত। এবং এই ক্ষেত্রে আগের আয়াত থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারি যে এই “মূর্খতা” হচ্ছে সমালোচকদের যেটা মূর্খতা বলে, তার বেশি কিছু না। ২৫ আয়াতের আগে লেখা আছে:
“কিন্তু জ্ঞানী লোক কোথায়? আলেমই বা কোথায়? আর যার তর্ক করবার ক্ষমতা আছে এই যুগের সেই রকম লোকই বা কোথায়? এই দুনিয়ার জ্ঞান যে কেবল মূর্খতা তা কি আল্লাহ্ দেখান নি? আল্লাহ্ তাঁর নিজের জ্ঞানে স্থির করেছেন বলেই দুনিয়া তার নিজের জ্ঞান দিয়ে আল্লাহ্কে জানতে পারে নি। এইজন্য সুসংবাদের মূর্খতা দিয়ে ঈমানদারদের নাজাত করা আল্লাহ্ ভাল মনে করলেন। ইহুদীরা চিহ্ন হিসাবে অলৌকিক কাজ দেখতে চায়, গ্রীকেরা জ্ঞানের তালাশ করে, কিন্তু আমরা ক্রুশের উপরে হত্যা করা মসীহের কথা তবলিগ করি। সেই কথা ইহুদীদের কাছে একটা বাধা আর অ-ইহুদীদের কাছে মূর্খতা, কিন্তু ইহুদী হোক আর গ্রীকই হোক, আল্লাহ্ যাদের ডেকেছেন তাদের কাছে সেই মসীহ্ই আল্লাহ্র শক্তি আর আল্লাহ্র জ্ঞান।” (১ করিন্থীয় ১:১৮,১৯)
যারা নিজেদের জ্ঞান ও ধার্মিকতা নিয়ে অহংকারী, যারা চিন্তা করে যে তাদের ধার্মিকতা ফলেই তারা বেহেশতগামী, তাদের কাছে রহমতের প্রয়োজন মূর্খতা, কিন্তু সেটা আল্লাহ চান “যেন তাঁর সামনে কোন মানুষ গর্ব করতে না পারে” (২৯ আয়াত)।
কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:
Leave a Reply