পিতার জন্য পুত্র দোষী?
হিজরত ২০:৫-৬—“পিতার গুনাহের জন্য সন্তানকে দায়ী করা অন্যায়”
শুরুতেই বলতে হয় যে তওরাতের শরিয়তের স্পষ্ট শিক্ষা হল যে রাষ্ট্রীয় আইনের ক্ষেত্রে এবং কেয়ামতের বিচারের ক্ষেত্রে কোন মানুষ তার পিতার গুনাহের জন্য দোষী করা হবে না:শ
রাস্ট্রীয় আইন:
“ছেলেমেয়েদের গুনাহের জন্য বাবাকে কিংবা বাবার গুনাহের জন্য ছেলেমেয়েদের হত্যা করা চলবে না। প্রত্যেককেই তার নিজের গুনাহের জন্য মরতে হবে।” (দ্বিতীয়বিবরণ ২৪:১৬)
কেয়ামতের বিচার: “যে গুনাহ্ করবে সে-ই মরবে। ছেলে বাবার দোষের জন্য শাস্তি পাবে না আর বাবাও ছেলের দোষের জন্য শাস্তি পাবে না। সৎ লোক তার সততার ফল পাবে এবং দুষ্ট লোক তার দুষ্টতার ফল পাবে।” (ইহিষ্কেল ১৮:২০)
প্রাচীন চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ম অনুযায়ী, একজন পিতার পাপের জন্য পুত্রকে শাস্তি দেওয়া যেত, তাই সেই সময়ের জন্য এটি খুব অগ্রগামী নিয়ম ছিল।
তাহলে হিজরত ২০:৫-৬ আয়াত কীভাবে আমরা ব্যাখ্যা করব? এই আয়াতে বলা হয়েছে:
“…যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের গুনাহের শাস্তি আমি তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত দিয়ে থাকি। কিন্তু যারা আমাকে মহব্বত করে এবং আমার সব হুকুম পালন করে, হাজার হাজার পুরুষ পর্যন্ত তাদের প্রতি আমার বুক ভরা দয়া থাকবে।” (হিজরত ২০:৫-৬)
দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা আছে:
১. এখানে আল্লাহ্ আইনগত শাস্তির কথা বলেন নি বরং দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়ম যে একটি প্রজন্মের পাপের ফলাফল দ্বিতীয় প্রজন্ম একরকম ‘শাস্তি’ হিসেবে ভোগ করে। আমরা জানি যে একজনের পাপ তার ছেলেমেয়েদের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে। একজন বাবার যদি নেশা বা রাগের মত খারাপ অভ্যাস থাকে, তাহলে এই ধরণের খারাপ অভ্যাসের প্রতি তার ছেলেমেয়েদের অনেক বেশী প্রবণতা থাকে। আল্লাহ্ বলেছিলেন যে পাপের ফলাফল (শাস্তি) দুনিয়াতে এই রকম হয়। যেমন বনি-ইসরাইলদের ইতিহাসে, ইমান আলীর একটি পাপ ছিল যে তিনি তার ছেলেদের ঠিকমত শাসন করেননি, এবং তার পোষ্যপুত্র নবী শামুয়েল একই খারাপ অভ্যাস তার কাছে শিখেছে, এবং শামুয়েলের পর হযরত দাউদ এবং তার ছেলে সোলায়মানও। ইমাম আলীর এই দুর্বলতা জন্য তার তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রজন্মের কষ্ট এবং দুঃখ হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্ বলেছেন যে সেটা শুধু ‘তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত’ হবে, অর্থাৎ একজনের জীবনকালেই।
২. এই দুনিয়াতে আল্লাহ্ প্রায়ই দলগতভাবে মানুষকে দায়ী রাখেন, শুধু কিতাবুল মোকাদ্দসে নয় বরং কোরআন শরীফ এবং ইসলামী ইতিহাসে এর অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় যখন ক’য়েকজনের সদস্যের খারাপ ব্যবহারের জন্য পুরো ঘোষ্ঠী বা জাতির উপর আল্লাহ্ শাস্তি প্রদান করেছেন। কিন্তু এই ‘দলগত দায়িত্ব’ শুধু দুনিয়ার জন্য আল্লাহ্ জারি করেছেন, অবশ্য আল্লাহ্ জারি করেছেন যে মানুষদের মধ্যে (দ্বিঃবিঃ ২৪:১৬) ) এবং কেয়ামতের বিচারে (হিজকিল ১৮:২০) ব্যক্তিগতভাবে হিসাব করা হবে।
‘অন্যের ভার কেউ বহন করতে পারে?’ এই সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে এক্সক্সক্স পৃষ্ঠায় দেখুন।
কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:
Leave a Reply