জাগো খ্রীষ্টান জাগো-১১
মথি বলেন (১:১৭) এভাবে ইব্রাহিম থেকে দাউদ পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ; দাউদ থেকে ব্যাবিলনে বন্দী করে নিয়ে যাবার সময় পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ; ব্যাবিলনে বন্দী হবার পর থেকে মসীহ পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ।
এখানে দুটি সুনিশ্চিত ও প্রমাণিত অসত্য তথ্য বিদ্যমান:
প্রথমত, এখানে বলা হলো: যীশুর বংশতালিকা তিন অংশে বিভক্ত, প্রত্যেক অংশে ১৪ পুরুষ, তাহলে মোট ৪২ পুরুষ। এ কথাটি সুস্পষ্ট ভুল। মথির ১:১-১৭-র বংশ তালিকায় যীশু থেকে আবরাহাম পর্যন্ত ৪২ পুরুষ নয়, বরং ৪১ পুরুষের উল্লেখ রয়েছে। যে কোনো পাঠক গণনা করলেই তা জানতে পারবেন।
বংশতালিকায় কোথাও ৪২ পুরুষ বলা হয়নি – যা বলা হয়েছে সেটা সত্য:
“এইভাবে ইব্রাহিম থেকে দাউদ পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ…”( ১. ইব্রাহিমের, ২. ইসহাক, ৩. ইয়াকুব, ৪. এহুদা, ৫. পেরস, ৬. হিষ্রোণ, ৭. রাম, ৮. অমমীনাদব, ৯. নহশোন, ১০. সল্মোন, ১১. বোয়স, ১২. ওবেদ, ১৩. ইয়াসি, ১৪. দাউদ)
“…দাউদ থেকে ব্যাবিলনে বন্দী করে নিয়ে যাবার সময় পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ…” (১. দাউদ, ২. সোলায়মান, ৩. রহবিয়াম, ৪. অবিয়, ৫. আসা, ৬. যিহোশাফট, ৭. যোরাম, ৮. ঊষিয়, ৯. যোথম, ১০. আহস, ১১. হিস্কিয়, ১২. মানশা, ১৩. আমোন, ১৪. যোশিয়)
“…ব্যাবিলনে বন্দী হবার পর থেকে মসীহ পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ।” (১. যিকনিয়, ২. শল্টিয়েল, ৩. সরুব্বাবিল, ৪. অবীহূদ, ৫. ইলীয়াকীম, ৬. আসোর, ৭. সাদোক, ৮. আখীম, ৯. ইলীহূদ, ১০. ইলিয়াসর, ১১. মত্তন, ১২. ইয়াকুব, ১৩. ইউসুফ, ১৪. ঈসা)
এই তিনটি বাক্য সত্য, এবং সমা
লোচকের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
দ্বিতীয়ত, মথির বক্তব্য: “দাউদ থেকে ব্যাবিলনে বন্দী করে নিয়ে যাবার সময় পর্যন্ত চৌদ্দ পুরুষ”- মারাত্মক ভুল। ১ বংশাবলির ১ম অধ্যায় থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, এ পর্যায়ে ১৮ পুরুষ ছিল, ১৪ পুরুষ নয়।
সমালোচকের ভুল অনুমান হল যে প্রতিটি জাতির ও কালের বংশতালিকার নিয়ম একই। প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের বংশতালিকা রাখার নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনে বংশ বাদ দেওয়া যায়। যেমন ইব্রাহিম এহুদার দাদা হলেও লেখা যেত “ইব্রাহিমের ছেলে এহুদা” বা “এহুদার পিতা ইব্রাহিম”। যারা মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত তারা সবাই এটা জানে, এবং বাইবেলে এটার অনেক উদাহরণ দেখা যায়। মথি মাত্র ১৪টি পুরুষ উল্লেখ করতে চাচ্ছিলেন, এবং সেটা তখনকার বংশতালিকা লেখার নিয়ম অনুযায়ী ঠিক ছিল।
আরো লক্ষণীয় যে, বংশাবলি ও মথি- বাইবেলের দু স্থানেই স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী ব্যক্তি পরবর্তী ব্যক্তির জনক। মথি তালিকার বিভিন্ন স্থান থেকে চার পুরুষ ফেলে দেওয়া সত্ত্বেও লিখেছেন যে, পূর্ববতী ব্যক্তি পরের ব্যক্তির সরাসরি জনক।
এটা তো তখনকার মধ্যপ্রাচ্যের বংশতালিকা লেখার নয়মই ছিল। পাঠক সবাই বুঝতে পারত যে কিছু বংশ বাদ দেওয়া হয়। এখনও কিছু সংস্কৃতিতে এমন বংশতালিকার নিয়ম আছে।
তিনি এতেও ক্ষান্ত হন নি। উপরন্তু এদের মাঝে যে আর কেউ ছিল না নিশ্চিত করতে এ পর্যায়ে সর্বমোট ১৪ পুরুষ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন।
মথি চাইলে আরও পুরুষ লিখতে পারত, কিন্তু তিনি শুধু চৌদ্দ লিখতে চাচ্ছিলেন কারণ বংশতালিকায় চৌদ্দ দিয়ে লেখা হত।
এজন্য প্রসিদ্ধ ব্রিটিশ কার্ডিনাল জন হেনরী নিউম্যান (১৮০১-১৮৯০) আফসোস করে বলেন, “খৃস্টধর্মে একথা বিশ্বাস করা জরুরী যে, তিনে এক হয় বা তিন ও এক একই সংখ্যা। কিন্তু এখন একথাও বিশ্বাস করা জরুরী হয়ে গেল যে, ১৪ এবং ১৮ একই সংখ্যা; কারণ পবিত্র গ্রন্থে কোনো ভুল থাকার সম্ভাবনা নেই!” আমরা তার সাথে সুর মিলিয়ে বলতে পারি, ৪১ ও ৪২ একই সংখ্যা!
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
এখানে যোগফলে কোনো ভুল নাই বরং সমালোচকের মনোযোগ দিয়ে পড়ার অভাব। বংশতালিকায় ৪২ যোগফলের কথা কোথাও লেখা নেই, বরং যে তিনটি বাক্য লেখা হয়েছে তিনটাই ঠিক, যেমন উপরে দেখালাম।
যাগো খ্রীষ্টান জাগো-11)
ভুলটি কার? যীশুর? পবিত্র আত্মার?“তিনি (যীশু) তাহাদিগকে (ইহূদী ফরীশীগণকে) কহিলেন, দায়ূদ ও তাঁহার সঙ্গীরা খাদ্যের অভাবে ক্ষুধিত হইলে তিনি যাহা করিয়াছিলেন, তাহা কি তোমরা কখনো পাঠ কর নাই? তিনি ত অবিয়াথর মহাযাজকের সময়ে ঈশ্বরের গৃহে প্রবেশ করিয়া, যে দর্শন-রুটী যাজকবর্গ ব্যতিরেকে আর কাহারও ভোজন করা বিধেয় নয়, তাহাই ভোজন করিয়াছিলেন, এবং সঙ্গিগণকেও দিয়াছিলেন।”(মার্ক ২:২৫-২৬)
১ শমূয়েল ২১ ও ২২ অধ্যায় থেকে প্রমাণিত যে, এ কথাটি ভুল। কারণ ‘দর্শন-রুটী’ ভোজন করার সময় দায়ূদ ‘একা’ ছিলেন, তাঁর সাথে অন্য কেউ ছিল না। কাজেই ‘ও তাঁহার সঙ্গীরা’ এবং ‘সঙ্গিগণকেও দিয়াছিলেন’ দুটি কথাই ভুল।
এখানে কোনো অমিল নেই। ১ শামুয়েলের ২১ অধ্যায় অনুযায়ী, এবাদতখানায় ইমামদের কাছে রুটি চাওয়ার সময়ে হযরত
দাউদ একা ছিল, কিন্তু ইমামের সঙ্গে দাউদের আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে সেই রুটি তার সঙ্গীদের জন্য ছিল:
“ইমাম জবাবে দাউদকে বললেন, “আমার কাছে কোন সাধারণ রুটি নেই, তবে পবিত্র-রুটি আছে। যদি আপনার লোকেরা কোন স্ত্রীলোকের কাছে না গিয়ে থাকে তবে তা খেতে পারবে।” দাউদ বললেন, “আমাদের নিয়ম মত আমরা সত্যিই কোন স্ত্রীলোকের কাছে যাই নি। … কাজেই ইমাম দাউদকে সেই পবিত্র-রুটি দিলেন…” (১ শামুয়েল ২১:৪-৬)
হযরত ঈসার কথা এটার সঙ্গে হুবহু মিলে যায় – দাউদ একা এবাদতখানায় প্রবেশ করে রুটি নিলেন এবং বাইরে গিয়ে তার সঙ্গীদের মধ্যে সেটা ভাগ করলেন।
এছাড়া এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট মহাযাজকের নাম ছিল ‘অহীমেলক’। ‘অবিয়াথর’ এ সময়ে যাজক ছিলেন না। অর্থাৎ যীশু অথবা পবিত্র আত্মা কিতাবুল মোকাদ্দস জানতেন না!
এখানেও কোনো অমিল নেই। ১ শামুয়েলে কোথাও লেখা হয়নি যে অহীমেলক যাজকদের মধ্যে ‘মহাযাজক’ বা ‘মহা-ইমাম’ ছিল, তাকে শুধু বলা হয় ‘ইমাম’। এবং ১ শামুয়েল ২২:১৭-২০ থেকে আমরা জানতে পাই যে সেই এবাদতখানার ইমামদের মধ্যে অবিয়াথরও একজন ছিল, যার কথা ঈসা বলেছে, কারণ তিনি বেশি পরিচিত।
অনুগ্রহ করে সময় পেলে সমাধান দেবেনঃ
(ক) আপনি যদি ১ শামুয়েল ১৭ অধ্যায় থেকে ২২ অধ্যায় পর্যন্ত পড়েন তাহলে বিষয়টি ক্লিয়ার হবে ৷(খ) শৌল রাজার পক্ষ হয়ে দাউদ পলেষ্টীয় সব থেকে শক্তিশালী সৈন্য গলিয়াৎ কে হত্যা করে ( ১ শামূয়েল ১৭/৪০-৫১) এতে শৌল অনেক খুখি হয় এবং তাকে সেনা প্রধান বানিয়ে দেন এবং এক পর্যায়ে শৌলের কন্যাকে বিবাহ করেন ৷ এই দিকে দাউদ যত যুদ্ধে যায় প্রতিটা যুদ্ধেই ঈস্রায়লীয়দের নাম কে উজ্জল করে বিজয়ী ফিরে আসে
অন্য দিকে দাউদের সু-নাম চার দিক ছড়িয়ে পরলো এমন কি তার নামে মেয়েরা গান বানিয়ে ফেল্লো
“১শামূয়েল ১৮/৭ করল| 7 স্ত্রীলোকরা গাইল,“শৌল বধিলেন শত্রু হাজারে হাজারে,আর দায়ুদ বধিলেন অযুতে অযুতে|”
এতে শৌল ভয় পেয়গেলো যে ভবিষৎতে না আমাকেই হত্যা করে দেয় ৷ তাই দাউদ কে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করতে লাগলো ৷ এমন কি কয়েক বার চেষ্টা করে ব্যর্থ হোন (১ শামূয়েল ১৮:১১)
আর শৌল পুত্র যোনাথন দাউদের সাথে ভালো বন্ধুত্ব থাকায় তিনি তাকে পালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন ৷ শ্লোকটি নিম্ন রুপ,,,
১শামূয়েল ২০41 বালকটি চলে গেলে দায়ুদ পাহাড়ের ওপাশে লুকোনো জায়গা থেকে বেরিয়ে এলো| যোনাথনের কাছে এসে দায়ুদ মাটিতে মাথা নোয়ালেন| এরকম তিনবার তিনি মাথা নোয়ালেন| তারপর দুজন দুজনকে চুম্বন করল| দুজনেই খুব কান্নাকাটি করল| তবে দায়ুদই কাঁদলেন বেশী|42 যোনাথন দায়ুদকে বলল, “যাও শান্তিতে যাও| প্রভুর নাম নিয়ে আমরা বন্ধু হয়েছিলাম| বলেছিলাম, তিনিই হবেন আমাদের দুজন ও পরবর্তী উত্তরপুরুষদের মধ্যে বন্ধুদের চিরকালের সাক্ষী|”১শামূয়েল ২১1 দায়ুদ চলে গেলেন| যোনাথন শহরে ফিরে এলো| দায়ুদ নোব শহরে যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে
✔✔ এখানে লক্ষ করুন (ক) দাউদ কিন্তু জানের ভয়ে পালিয়ে এলেন একা একা ৷
(২) তার ভিতর চরম আতংক বিরাজ কর ছিল৷ কারণ বাদশা তাকে মারার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তাই তার সাথে অবশ্যই কোন লোক নেই ৷
?? কোথাও বলা হয়নি তো যে তার সঙ্গে অন্য কেউ ছিল না। এমন বিপদের সময়ে পালিয়ে গেলে কিছু বিশ্বস্ত বন্ধু সঙ্গে থাকলে সুবিধা হয়। আপনি নিজের চিন্তা এখানে ঢুকাচ্ছেন যেখানে “একা” কোথাও লেখা নেই। আবার তিনি হয়তো প্রথমে একা পালিয়ে যাওয়ার পরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার বন্ধুরা তার সঙ্গে যোগ করলেন।
২. এর পর লক্ষ করুন ৷
১শামুয়েল ২১/১-৫1 দায়ুদ চলে গেলেন| যোনাথন শহরে ফিরে এলো| দায়ুদ নোব শহরে যাজক অহীমেলকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন|অহীমেলক দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে বেরিয়ে এলেন| তিনি তো ভয়ে কাঁপছিলেন| তিনি দায়ুদকে জিজ্ঞেস করলেন, “কি ব্যাপার, তুমি একা কেন? তোমার সঙ্গে কাউকে দেখছি না কেন?”2 দায়ুদ বললেন, “রাজা আমাকে একটি বিশেষ আদেশ দিয়েছেন| তিনি আমাকে বলেছেন, ‘এই আসার উদ্দেশ্য নিয়ে তুমি কাউকে কিছু জানাবে না| আমি তোমাকে কি বলছি কেউ যেন জানতে না পারে|’ আমার লোকদের বলছি কোথায় ওরা আমার সঙ্গে দেখা করবে| 3 এখন বলো, তোমার সঙ্গে কি খাবার আছে? তোমার কাছে থাকলে পাঁচটি গোটা রুটি আমাকে দাও, না হলে অন্য কিছু খেতে দাও|”4 যাজক বললেন, “আমার কাছে তো সাধারণ কোন রুটি নেই, কিন্তু পবিত্র রুটি আছে| তোমার লোকরা তা খেতে পারে, অবশ্য যদি কোন নারীর সঙ্গে তাদের যৌন সম্পর্ক না থেকে থাকে|”5 দায়ুদ যাজককে বললেন, “না, এরকম কোন ব্যাপার নেই| যুদ্ধে যাবার সময় এবং সাধারণ কাজের সময়ও তারা তাদের দেহগুলিকে শুদ্ধ রাখে| তাছাড়া এখন আমরা একটি বিশেষ কাজে এসেছি, সুতরাং অশুদ্ধ থাকার প্রশ্নই ওঠে না|”
বিশ্লেষণঃ (ক) দাউদ মিথ্যা কথা বলছে যে, রাজা শৌল তাকে একটা বিশেষ কাজে পাঠিয়ে রাজা কি তাকে বিশেষ কাজে পাঠিয়েছে? নাকি সে মিথ্যা বলেছে??
হ্যাঁ, এখানে দাউদ জীবন বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলতে হয়েছে যে বাদশাহ শৌল তাকে পাঠিয়েছে। কোরআন-হাদিস অনুযায়ীও নবীরা কিছু ক্ষেত্রে মিথ্যা বলেছে (যেমন ইব্রাহিম তিনবার মিথ্যা বলেছে এই হাদিস অনুযায়ী), যদিও আমরা জানি মিথ্যা বলা সম্পূর্ণ ভুল। এক দিকে অহীমেলককে রক্ষা করার জন্যই দাউদ মিথ্যা বলেছে, কারণ তাতে পরে শৌলের কাছে জবাব দিতে গিয়ে অহীমেলক পরিষ্কার বিবেকে বলতে পারবে যে “আমি জানতাম না যে দাউদ পালিয়ে যাচ্ছিল”। কিন্তু আমরা পরে দেখি ২২:২২ আয়াতে যে তার ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দাউদ অনুতপ্ত ও দুঃখিত ছিল।
এই ব্যাপারে কিতাবের তফসির একমত – একটি তফসিরের উদাহরণ দিই:
Ellicott’s Commentary for English Readers
I have appointed my servants.—This portion of his words to Ahimelech was, no doubt, strictly true. It is unlikely that one in the high position of David at the court of Saul, possessing, too, such powers over men’s hearts, would be allowed to go even into exile without any friends or attendants. Those alluded to here probably joined him soon after his parting with Jonathan.
(খ) আমরা উপরে দেখলাম দাউদ একা পালিয়ে এসেছে৷ (১ শামুয়েল ২০/৪১-৪২)তাহলে তার সাথে সংগি সাথি আসলো কোথা থেকে? তার মানে এখানেও দাউদ মিথ্যা কথা বলেছে কারণ তখন তার আর সেনা প্রধানের দায়িত্ব ছিলনা বরং জান বাঁচাতে এসেছে ৷
না – দাউদের সঙ্গে যে তার কিছু সঙ্গী ছিল না, তার কোনো উল্লেখ নেই, বরং বিপরীত ইঙ্গিত আছে ২১:২ আয়াতে। আমি ২০ ও ২১ অধ্যায়ে কোথাও পায়নি যে দাউদ ‘একা’ পালিয়ে এসেছে। দাউদ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শৌলের বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহ করতে চান নি, এইজন্য তিনি চুপে চুপে চলে গেলেন শুধু জীবন বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের কয়েকজন তের পেয়েছে তখন থেকে তার সঙ্গে চলত। সেটা ২০ অধ্যায়ের ২ আয়াত থেকে বোঝা যায়, এবং ২২ অধ্যায়ের শুরুতে আমরা দেখি যে দাউদের দলের সংখ্যা বেড়ে গেল।
তাহলে আমরা উপরের আলোচনা থেকে বুঝলাম দাউদের সাথে অন্য কোন সাথি ছিলনা৷
আসলে এতক্ষণ আলোচনার শেষে ব্যাপার তার ঠিক বিপরীত দাঁড়িয়ে গেল – “একা” কোথাও বলা হয়নি বরং ২০:২ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে দাউদের সঙ্গে কিছু লোক ছিলই।
তাহলে প্রমাণ হল একই সাথে পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়ম বিক্রিত😂
তাহলে সেই একই প্রশ্ন দাড়ালো (মার্কের ২/২৫,২৬) শ্লোক দুটি কার ভুল যীশুর? না পবিত্র আত্নার???!!!!!!!!
আমার সত্যি আশ্চর্য লাগছে যে এতো লম্বা এবং দুর্বল একটি যুক্তি দিয়েছেন এতো হাল্কা একটি পয়েন্ট প্রমাণ করার জন্য। এবং শেষ পর্যন্ত সেটা প্রমাণ করা গেল না।
(৩নং) যীশু দাউদ কে দিয়ে তুলনা করলেন কেন? কারণ (ক)বাইবেল অনুযায়ী দাউদ মিথ্যাবাদী যা আমরা উপরে প্রমাণ করেছি ৷ (খ) দাউদ ব্যাভিচারী-ধর্ষক ২শামুয়েল (১১/১-২৭) হত্যাকারী ছিলেন ৷ (২ শামূয়েল ৫/১৩)
যীশু এমন এক জন ব্যক্তির বক্তব্য দিয়ে প্রমাণ পেশ করলেন কি ভাবে?!!!
একজন নবী যত ভালো আদর্শ হয় না কেন, ঈসা মসীহকে ছাড়া কেউ নিষ্পাপ নয়। দাউদের পাপ ছিল অবশ্যই, কিন্তু তার প্রশংসনীয় বিষয় ছিল যে তিনি আন্তরিকভাবে অনুতাপ করতে জানতেন (যেমন জবুর ৫১ অধ্যায়), এবং সেই অনুতাপ আমাদের জন্য একটি আদর্শ।
যীশুর পিতামাতা তাঁকে নিয়ে মিসর থেকে ফিলিস্তিনে ফিরে নাসরৎ নামক শহরে বসবাস করতে থাকেন। এ বিষয়ে মথি বলেন:
“এবং নাসরৎ নামক নগরে গিয়া বসতি করিলেন; যেন ভাববদিগণের দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয় যে, তিনি নসরতীয় বলিয়া আখ্যাত হইবেন।” (মথি ২:২৩)
ইঞ্জিলের এ কথাটি অসত্য; কোনো ভাববাদীর কোনো পুস্তকেই এ কথা নেই। কিন্তু পবিত্র আত্মা তা জানতেন না!
শুরুতে বলা দরকার যে মথি সাধারণত কোনো উদ্ধৃতি দিলে তিনি নবীর নাম উল্লেখ করতেন, যেমন মথি ১:২২, মথি ২:১৫, মথি ২:১৭। তাই সেখানে একটি ইঙ্গিত আছে যে মথি কোনো বিশেষ ‘উদ্ধৃতি’ এখানে দিতে চাচ্ছেন না।
প্রাচীনকালে কিছু শহর বা এলাকা বিশেষ ধারণা বুঝানোর জন্য ব্যবহার হতো। যেমন সমকামীদের “সাদুমীয়” বলা হয় (১ করিন্থীয়, ১ তিমথীয় ১:১০), এবং করিন্থ শহরবাসীদের মধ্যে এতো যৌন অনৈতিকতা ছিল যে যারা যৌন অনৈতিকতা করত তাদের ‘করিন্থীয়’ বলা হতো, অথবা বলা হত যে অমুক ব্যক্তি ‘করিন্থীয় করছে’, অর্থাৎ জেনা করছে। ঈসা মসীহের যুগে ইহুদিদের মতে নাসরত এলাকা ‘নগণ্য’ বা ‘অসম্মানিত’ হিসেবে কথিত ছিল। যেমন ইউহোন্না ১:৪৫-৪৬-এ নথনেল যখন শুনলেন যে ঈসা নাসরত থেকে তিনি বললেন ‘নাসরত থেকে কি ভালো কোন কিছু আসতে পারে?’। নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীতে বিভিন্ন জায়গায় বলা হত যে মসীহ অসম্মানিত হবে এবং তুচ্ছ করা হবে:
“তিনি তাঁর সামনে নরম চারার মত,
শুকনা মাটিতে লাগানো গাছের মত বড় হলেন।
তাঁর এমন সৌন্দর্য বা জাঁকজমক নেই যে,
তাঁর দিকে আমরা ফিরে তাকাই;
তাঁর চেহারাও এমন নয় যে,
আমাদের আকর্ষণ করতে পারে।
লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে ও অগ্রাহ্য করেছে;
তিনি যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং রোগের সংগে তাঁর পরিচয় ছিল। (ইশাইয়া ৫৩:২,৩)“কিন্তু আমি তো কেবল একটা পোকা, মানুষ নই;
লোকে আমাকে টিট্কারি দেয়
আর মানুষ আমাকে তুচ্ছ করে।” (জবুর শরিফ ২২:৬)
এইজন্য মথি বলেছে যে তাকে ‘নসরতীয়’ (নগণ্য) বলে ডাকা হবে।
ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা ৩০ রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে যীশুকে ইহূদীদের কাছে ধরিয়ে দেন। এ প্রসঙ্গে মথি বলেন ২৭:৯: “তখন যিরমিয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হইল, ‘আর তাহারা সেই ত্রিশ রৌপ্যমুদ্রা লইল” কথাটি অসত্য। এ বাক্যটি বা এ অর্থে কোনো বাক্য যিরমিয় ভাববাদীর পুস্তকের কোথাও নেই।
ইহুদি নিয়ম অনুযায়ী ইঞ্জিলের আগেকার কিতাব (‘তানাক’) মধ্যে তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল:
- ১. তৌরাত, (‘তা’),
- ২. নাবীয়ীম (‘না’) অর্থাৎ নবীদের কিতাবসমূহ,
- ৩. কেতুবিম বা জবুর (‘ক’) অর্থাৎ জ্ঞানের কিতাব, যেমন জবুর, মেসাল, ইত্যাদি।
এগুলোর ক্ষেত্রে পুরো ভাগ প্রথম খণ্ডের নাম বা প্রথম খণ্ডের লেখকের নামে দিয়ে ডাকা যেত। যেমন দাউদ যেহেতু জবুরের বেশির ভাগ কাওয়ালির ও প্রথম কাওয়ালির লেখক, এইজন্য জবুর শরিফের যেকোনো কাওয়ালির ক্ষেত্রে বলা যেত যে “দাউদ লিখেছে…”। একই ভাবে নবীদের কিতাবের ক্ষেত্রে ইয়ারমিয়া খণ্ড পুরো নবীদের কিতাবের প্রথম খণ্ড, তাই তাদের ভাষা ব্যবহারের প্রথা অনুযায়ী পুরো নবীদের কিতাব ‘ইয়ারমিয়ার’ কথা বলা যেত, এবং সবাই বুঝতে পারত যে তার মানে এই না যে ইয়ারমিয়া নিজেই লিখেছে বরং ‘ইয়ারমিয়ার’ বলতে ‘নবীদের কিতাব’ বোঝানো হচ্ছে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল যে মথি এখানে ৩টি অনুচ্ছেদের পূর্বলক্ষণের ইঙ্গিত দেখছে – ইয়ারমিয়া ৩২:৭ (‘জমি কেনা’) জাকারিয়া ১১:১৩ (“ত্রিশটা রূপার টুকরা নিয়ে মাবুদের ঘরে কুমারের কাছে ফেলে দিলাম”), ইয়ারমিয়া ১৮:২-৬ (কুমারের মতো করে আল্লাহ্ এহুদাকে শাস্তি দিতে পারে)। এই তিনটি অনুচ্ছেদ মিলিয়ে মথি পূর্বলক্ষণের ইঙ্গিত দেখছে, এবং তিনটির মধ্যে দুটি ইয়ারমিয়া কিতাব থেকে।
কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন: