ইহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়—“একটি অপূর্ণ ভবিষ্যদ্বানী?”
ইহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়—“এখানে ভবিষদ্বানী করা হয়েছে যে বখতে-নাসার টায়ার ধ্বংস করবেন, কিন্তু শুধুমাত্র মহামতি আলেকজান্ডার টায়ার শহর ধ্বংস করেছেন।”
এই ভবিষ্যদ্বানীতে কোথাও বলা হয়নি যে শুধুমাত্র বখতে-নাসার টায়ারের ধ্বংস করবে, কিন্তু ঠিক তার বিপরীত কথা বলা হয়েছে। এই ভবিষ্যদ্বানীর শুরুতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্ টায়ার শহর ধ্বংস করবে “অনেক জাতি” দিয়ে (২৬:৩)। এটা থেকে বোঝা যায় যে পরবর্তী ভবিষ্যদ্বানী বিভিন্ন জাতির মাধ্যমে হবে। আসলে যদি বখতে-নাসার একাই টায়ারের শহরের ধ্বংস করতেন, তাহলে ভবিষ্যদ্বানী ভুল হত।
প্রাচীন টায়ার শহরের আসলে দু’টি অংশ ছিল— একটি মূল ভূখণ্ডে ছিল, একটি এই মাইল দূরে অবস্থিত দ্বীপের উপরে। বাদশাহ্ বখতে-নাসার টায়ারকে আক্রমন করলেন, এবং মূল ভূখণ্ডের শহরটা ধ্বংস করলেন, কিন্তু তিনি দ্বীপের অংশটা ধ্বংস করতে পারেননি। এইভাবে ৭-১১ আয়াত পূর্ণ হয়েছে। ইহিষ্কেল তো জানতেন যে বখতে-নাসার টায়ারকে পুরপুরিভাবে ধ্বংস করেননি, কারণ ২৯:১৮ আয়াতে তিনি তাই লিখেছিলেন। ইহিষ্কেল বিশ্বাস করতেন যে বাকী ভবিষ্যদ্বানী অন্য এক জাতির দ্বারা একদিন পূর্ণ হবে।
টায়ারের বিরুদ্ধে মহামতি আলেকজান্ডারের যুদ্ধের ইতিহাস পড়লে দেখা যায় হেজকিলের ভবিষ্যদানী সুন্দর ভাবে পূর্ণ হয়েছে। জাতিরা মনে করত যে টায়ার ধ্বংস করা সম্ভব না। ইহিষ্কেল একটি অস্বাভাবিক কথা ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে টায়ার ধ্বংস করার পর সেখানে ভাংগা পাথরও থাকবে না, এবং ধুলা-ময়লা চেঁছে ফেলে হবে (২৬:৪)। মহামতি আলেকজান্ডার টায়ারকে পরাজিত করলেন দ্বীপ ও ডাঙার মধ্যে একটি উঁচু রাস্তা বানানোর মধ্য দিয়ে। এই বাঁধ তৈরি করার জন্য তিনি ভবিষ্যদ্বানীর কথামত টায়ার শহরের সমস্ত ভাংগা পাথর সেখানে সরিয়ে ফেললেন। কত আশ্চর্য একটি ভবিষ্যদ্বানী! তারপর আলেকজান্ডার সেই টায়ার দ্বীপ পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করলেন, এবং “সমুদ্রের রাণী” হিসেবে শহরের গৌরব হারিয়ে গেল। বিখ্যাত টায়ার শহর কখনও আগের মত বিশ্বের সামুদ্রিক রাজধানী হতে পারে নি এবং এখন সেটা অখ্যাত একটি শহর।
কোরআন শরীফের মধ্যে সেরকম জটিল একটি ভবিষ্যদ্বানী রয়েছে:
“রোমকগণ পরাজিত হইয়াছে—নিকটবর্তী অঞ্চলে; কিন্তু উহারা উহাদের এই পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হইবে” (সূরা রূম ৩০:২,৩)
প্রসিদ্ধ কোরআন অনুবাদক ইউসুফ আলীর কথা অনুযায়ী, আরবী শব্দ “শীঘ্রই” (بِضع বিধু’উন) এর অর্থ ৩ থেকে ৯ বছর; অথবা ইসলামি ফাউন্ডেশন কোরআনের টিকা #১৩৩০ অনুযায়ী ৩-১০ বছর। হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজেই বলেছিলেন যে “শীঘ্রই” বোঝাচ্ছে ৩ থেকে ৯ বছর (আল-বাইজাওয়ী)। পারস্য রাজ্য রোমীয়দের পরাজিত করে জেরুজালেম দখল করেছেন ৬১৪ অথবা ৬১৫ সালে। কিন্তু বিখ্যাত ইসলামি ঐতিহাসিক আত-তাবারী এবং আল-বাইজাওয়ী অনুযায়ী পারস্যদের পরাজয় হল ১৩-১৪ বছর পরে (৬২৮ সালে)। মনে হচ্ছে হেজকিলের উপরোক্ত জটিলতা থেকে এই জটিলতা কম না।
কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:
Leave a Reply